প্রতীকী ছবি।
এক ঝলকে দেখলে মনে হবে, বিদেশ থেকে কোনও বহুজাতিক সংস্থার বরাত দেওয়া পোশাক, খেলনা বা প্রসাধনী এসেছে। ধরার উপায় নেই, কারণ সেগুলির বরাত দেওয়া হয়েছে নামী-দামি কোনও সংস্থার নাম করে। কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় সেই সব বরাতের বাক্স খুলতেই তাজ্জব তদন্তকারীরা! তাঁরা দেখেন, খেলনা থেকে প্রসাধনী— বিভিন্ন রকম বাক্সের ভিতর থেকে বেরোচ্ছে মাদক। প্রসাধনীর বাক্সে আবার গায়ে মাখার পাউডার ফেলে দিয়ে তাতে সেই রঙেরই মাদক ভরা হয়েছে! তদন্তকারীরা আরও অবাক এই দেখে যে, মাদকের এমন কাণ্ডকারখানা চালাতে সরাসরি ফোনের অপারেটিং সিস্টেমই বদলে ফেলা হয়েছে।
দিনকয়েক আগে মাদকের এমন কারবারের হদিস পাওয়ার পর থেকেই ‘ডার্ক ওয়েব’ বা কুরিয়র সার্ভিসের পাশাপাশি বহুজাতিক সংস্থার ‘কনসাইনমেন্ট’-এর উপরেও নজর রাখতে শুরু করেছেন এ শহরের মাদক-বিরোধী শাখার তদন্তকারীরা। তাঁদের দাবি, কুরিয়র সংস্থাগুলির উপরে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো বা কলকাতা পুলিশের মাদক-দমন শাখার নজরদারি যত বেড়েছে, ততই নতুন নতুন পথে এ শহরে মাদক আনার চেষ্টাও বেড়েছে। যার নবতম সংযোজন বহুজাতিক সংস্থার নাম করে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে বিদেশে মাদকের বরাত দেওয়া। বড় নাম দেখে ওই সমস্ত কনসাইনমেন্টের দিকে সে ভাবে নজরই দেওয়া হত না। তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে সেই সুযোগেই ঢুকত মাদক।
নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরোর এক তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই তাঁরা রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় এমন একটি মাদক-চক্রের হদিস পেয়েছেন। শ্রদ্ধা সুরানা নামে বছর পঁচিশের এক তরুণী ওই চক্রটি চালাচ্ছিলেন। এর জন্য তিনি সিমরন সিংহ নামে একটি ভুয়ো আধার কার্ডও বানিয়েছিলেন। এক বহুজাতিক সংস্থার নাম করে ডার্ক ওয়েবে দেওয়া একটি বরাতের সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা তাঁর কাছে পৌঁছন। দেখা যায়, শ্রদ্ধা একটি ‘গুগল পিক্সেল’ মোবাইল ফোন কিনে সেটির অপারেটিং সিস্টেমই বদলে ফেলেছেন। সাধারণত, গুগলের ফোন নিজস্ব অপারেটিং সফটওয়্যারে চলে। কিন্তু ওই ফোনে শ্রদ্ধা ‘গ্রাফিন অপারেটিং সফটওয়্যার’ ব্যবহার করছিলেন। তদন্তকারী থেকে সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এই ‘গ্রাফিন সফটওয়্যার’কে এই মুহূর্তে বিশ্বের সব থেকে গোপন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বলে ধরা হয়। গুগলের ফোনে এটি সব থেকে ভাল কাজ করে। প্রতি মুহূর্তে এই সফটওয়্যারের ‘ম্যাক অ্যাড্রেস’ বদল হতে থাকায় ইন্টারনেট ব্যবহারের কোনও ‘হিস্ট্রি’ থাকে না সংশ্লিষ্ট ফোনটির। এমনিতে যে কোনও অপারেটিং সফটওয়্যারকে যে কোনও বহুজাতিক সংস্থা ট্র্যাক করে সংশ্লিষ্ট ফোনে প্রমোশনাল ভিডিয়ো বা লিঙ্ক পাঠাতে পারে। কিন্তু এই অপারেটিং সিস্টেমে তা করা যায় না। এমনকি, এই ফোনের পিন বা প্যাটার্ন দেখে রেখে ব্যবহারকারীর অজান্তে খোলার চেষ্টা করেও সুবিধা করা যায় না। কারণ, এই অপারেটিং সিস্টেমে ফোনের নম্বর প্যাডে থাকা নম্বরের অবস্থান প্রতি মুহূর্তে বদল হতে থাকে। অর্থাৎ, দূর থেকে দেখে কোন সংখ্যার পরে কোন সংখ্যা বসানো হয়েছে, তা নকল করার চেষ্টা করে সুবিধা হয় না।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এমন ফোন নিয়েই এর পরে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ মাদকের বরাত দিয়েছিলেন ওই তরুণী। করণকুমার গুপ্ত নামে এক যুবক শ্রদ্ধার অধীনে কাজ করতেন ‘ডেলিভারি বয়’ হিসেবে। অনলাইনে টাকা লেনদেন করা যায়, এমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তা বিটকয়েনে বদলে ফেলতেন শ্রদ্ধা। সেই টাকাই লাগানো হত মাদক বরাত দেওয়ার কাজে। বহুজাতিক সংস্থাগুলি জানতই না যে, তাদের নামে একাধিক কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে শহরে ঢুকছে মাদক! এমনই এক বহুজাতিক পোশাক বিপণি সংস্থার কলকাতা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা জানানোর পরেই আমরা এ বিষয়ে সতর্ক হয়েছি। নিজস্ব পরিকাঠামোয় কিছু বদল এনেছি। এর পরে এমন কাজ করা সহজ হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy