তখনও জ্বলছে ট্যাঙ্কারটি। —ফাইল চিত্র।
ট্যাঙ্কার উল্টে যাচ্ছে বুঝে নিজের দিকের দরজা খুলে ফেলেছিলেন খালাসি। যদি ঝাঁপ দিয়ে নেমে যাওয়া যায়! কিন্তু সেই দরজাই কাল হয়েছিল খালাসি অভয় তিওয়ারির। উল্টে যাওয়া ট্যাঙ্কারের দরজায় পা আটকে থাকার কারণেই আর বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় তাঁর। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্যাঙ্কারের চালক নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে বুধবার ফোনে কথা বলার সময়ে এমনটাই দাবি করেন তিনি। যদিও ওই চালক বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের খাতায় ফেরার।
বুধবার ভোর পাঁচটা নাগাদ ধর্মতলার দিক থেকে গিরিশ পার্কের দিকে আসার পথে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে মহম্মদ আলি পার্কের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় ট্যাঙ্কারটি। হঠাৎ এলাকা কাঁপানো বিস্ফোরণের পরে ট্যাঙ্কারটিতে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন এর পরে ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি পুরনো বাড়িতে। ট্যাঙ্কার এবং বাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির কিছুটা অংশ এবং পুরনো বাড়ির নীচে থাকা কয়েকটি দোকানের কিছু অংশও পুড়ে যায়। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ গিয়ে একটি দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ পরে জানায়, ট্যাঙ্কারের চালক পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। ট্যাঙ্কারটিতে কী ছিল এবং কী থেকে এমন বিস্ফোরণ, তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট করা হয়নি পুলিশের তরফে।
বৃহস্পতিবার ট্যাঙ্কারটির নম্বর ধরে খোঁজ করে জানা গেল, ২০১৬ সালের জুন মাসের ২২ তারিখ গাড়িটি নথিভুক্ত করা হয়েছিল। নথিভুক্তির কাগজে শিলিগুড়ির সেবক রোডের ঠিকানা রয়েছে। গাড়ির মালিক হিসাবে যাঁর নাম দেওয়া, তাঁর আরও একটি ঠিকানা রয়েছে বজবজের নেতাজি সুভাষ রোডে। তারও উল্লেখ রয়েছে নথিভুক্তির কাগজে। আট বছরের পুরনো গাড়িটির একটি পুলিশ মামলা ঝুলছে। তবে শেষ কবে গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেট করানো হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য মেলেনি। গাড়িটি যাঁর নামে নথিভুক্ত করা, সেই কৌশিক কাজলীকে ফোন করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘গাড়িতে কিছু ছোটখাটো কাজ ছিল। তবে তার জন্য এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে ভাবা যায় না। অভয় মারা গিয়েছে। নরেন্দ্রনাথ কোনও মতে বেঁচে গিয়েছে।’’ তবে গাড়ির নথিভুক্তির কাগজে দেখা গেল কৌশিক নয়, নরেন্দ্রনাথেরই ফোন নম্বর দেওয়া। সেই নম্বরে ফোন করলে নরেন্দ্রনাথের স্ত্রী ফোন ধরেন। ‘স্বামী কোথায় জানা নেই’ বলে প্রথমে এড়িয়ে যেতে চান তিনি। পরে নরেন্দ্রনাথ ফোনে জানান, ট্যাঙ্কারটিতে ন্যাপথলিন তৈরির উপকরণ যাচ্ছিল মধ্যমগ্রামের দিকে। পথে ঘটে এই দুর্ঘটনা। কৌশিক মালিক হলেও তিনিই সমস্ত ভাড়া ধরতেন এবং গাড়িটির দেখাশোনা করতেন বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘ফিটনেস সার্টিফিকেট করার কথা ছিল। কৌশিকবাবুকে জানিয়েওছিলাম। তিনি দেখে নেবেন বলেছিলেন। কিন্তু কাজ করানো আর হয়নি। তবে আমি বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছি। যে ভাবে আগুন ছড়িয়ে গিয়েছিল, তাতে ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছি।’’ কিন্তু তিনি কোথায়? পুলিশ তো তাঁকে খুঁজছে! এই সব প্রশ্নের আর উত্তর মেলেনি। দ্রুত ফোন রেখে দেন তিনি।
কী করে এমন ভয়াবহ আগুন লাগল, তার উত্তর স্পষ্ট ভাবে মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে। ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে এ ব্যাপারে কিছুই বলা সম্ভব নয় বলে লালবাজার জানিয়েছে। কলকাতা পুলিশের সঙ্গে অতীতে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বললেন, ‘‘বয়েলিং লিকুইড এক্সপ্যান্ডিং ভেপার এক্সপ্লোশন হয়েছে এ ক্ষেত্রে। যে কোনও তরল জ্বালানি আদতে নির্দিষ্ট চাপে রাখা বাষ্প। তরল নিয়ে যাওয়ার সময়ে যে কোনও ট্যাঙ্কারে চাপ বজায় রাখার জন্য ভাল্ভ দেওয়া থাকে। নয়তো তরল আবার বাষ্পে পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ায় সেই আঘাতে ওই বাষ্প অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বেরোনোর চেষ্টা করেছে। একাধিক ফায়ার বল তৈরি হয়েছে। যা এই মাপের বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। আরও বড় বিস্ফোরণ হলেও বলার কিছু ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy