Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

হাসপাতালে নোটিস, সুর বদল আন্দোলনে

শনিবার দিনভর শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গিয়েছিল, কর্মীরা জানিয়েছিলেন, আউটডোর বন্ধ। যেমন, এক মহিলা মুকুন্দপুরের একটি হাসপাতালের আউটডোরে স্ত্রীরোগ বিভাগে পৌঁছলে কর্মীরা জানান, ‘‘ধর্মঘট চলছে।’’

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

কোথাও ঘোষিত, কোথাও ছিল নিঃশব্দ-সমর্থন। কর্মসূচিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছিলেন দিনভর। কিন্তু সন্ধ্যার একটি ই-মেলে বদলে গেল ছবিটা। অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, ‘আন্দোলন’ ছিল শুধুই চিকিৎসকদের। আজ, সোমবার থেকে সব পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই আচরণে নতুন সমস্যা হবে কি না, সেই আশঙ্কাও থাকছে।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি ও চিকিৎসকদের হেনস্থার প্রতিবাদে শনিবার ৫০টি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আউটডোর বন্ধ রাখেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের কর্মসূচি সমর্থন করেছিলেন।

এর জেরে অসংখ্য রোগীর দুর্ভোগ হয়। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ভবন থেকে নোটিস পাঠানো হয় হাসপাতালগুলিতে। স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আউটডোর বন্ধ রাখার কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁদের লাইসেন্স বাতিল হবে না?

এর উত্তর কী দেবেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? রবিবার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেননি। কিন্তু বহু রোগী পরিষেবা না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। কেন? তাঁদের যুক্তি, কোনও চিকিৎসক ছুটি নিতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু করার নেই।

শনিবার দিনভর শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গিয়েছিল, কর্মীরা জানিয়েছিলেন, আউটডোর বন্ধ। যেমন, এক মহিলা মুকুন্দপুরের একটি হাসপাতালের আউটডোরে স্ত্রীরোগ বিভাগে পৌঁছলে কর্মীরা জানান, ‘‘ধর্মঘট চলছে।’’ তবে সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ভবনের নোটিস প্রসঙ্গে সেই হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘চিঠির ব্যাপারে এখনও কিছু জানি না। সোমবার সব সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু হাসপাতাল কেন ধর্মঘট করতে যাবে! ও সব চিকিৎসকদের ব্যাপার।’’

শনিবার রাতে বাইপাসের আর একটি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তা সরাসরি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন। যদিও সে দিন সকাল থেকে আউটডোর বন্ধ থাকার জেরে বহু রোগী ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু ওই কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের আউটডোর খোলা ছিল। হয়তো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না, তাই কিছু বিভাগে কাজ হয়নি। সেটা চিকিৎসকদের ব্যাপার।’’

শনিবার বেসরকারি হাসপাতাল নিঃশব্দে এই কর্মসূচিতে চিকিৎসকদের পাশে থাকলেও, সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ সমর্থন করেন প্রকাশ্যেই। স্বাস্থ্য দফতরের নোটিস যাওয়ার পরে তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র তরফে এম পি মেটা বলেন, ‘‘হাসপাতাল ওপিডি খোলা রেখেছিল। কর্মসূচি ছিল ডাক্তারদের। তবে স্বাস্থ্য দফতরের নোটিসের জবাব কী হবে, তা নিয়ে কিছু বলব না।’’

চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ডক্টর ফর পেশেন্ট’-এর তরফে শারদ্বত মুখোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠালে জবাব দেওয়া হবে।’’ চিকিৎসকদের একটি সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর তরফে চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আউটডোর খোলা থাকলেও কেন চিকিৎসক নেই, সেটা ভাবা জরুরি। তা ছাড়া চিকিৎসকেরা ধর্মঘট করেননি। তাঁরা আউটডোর বয়কট করেছিলেন। এখনও চিকিৎসকেরা মানুষের পাশে আছেন। কিন্তু প্রয়োজন হলে নিরাপত্তার দাবিতে ফের প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হবে।’’ ওই সংগঠনের আর এক সদস্য চিকিৎসক বিনায়ক চন্দ বলেন, ‘‘নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকেরা এই কর্মসূচি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আমাদের প্রতি সহানুভূতি ছিল।’’

অন্য দিকে, সিএমআরআই-এর কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শনিবার রাতে ন’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বিল না মিটিয়ে রোগীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল রাকেশ সিংহ ও তার দলের বিরুদ্ধে। যদিও মূল অভিযুক্ত রাকেশ এখনও ফেরার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy