Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ব্যাঙ্কে টাকা না পাওয়ায় হতাশা গড়াল বিক্ষোভে

শুক্রবার পর্যন্তও যে ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের ধৈর্য দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল, তারাই শনিবার গ্রাহকদের বচসা, হাতাহাতি, অবরোধ, হুমকিতে জড়িয়ে পড়তে দেখল।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বিক্ষোভ। শনিবার, বিরাটিতে। — সুদীপ ঘোষ

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বিক্ষোভ। শনিবার, বিরাটিতে। — সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

স্ট্র্যান্ড রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে সকালবেলা টাকার গাড়ি আসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের সামনেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সকলে। কিন্তু দুপুরেই ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, টাকা শেষ। তখনও লাইনে অগুনতি মানুষ। বহুক্ষণ দাঁড়িয়েও টাকা বদলাতে না-পেরে সকলেই ক্ষুব্ধ। ব্যাঙ্ক-কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় গ্রাহকদের।

ডানকুনির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক পুণ্য অধিকারীর অভিযোগ, চারটে বাজতেই বিনা নোটিসে ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে ব্যাঙ্কটি। তখনও দেড়শো লোক লাইনে। সবাই মারমুখী হয়ে ওঠেন। অভিযোগ, পুলিশি নিরাপত্তায় ভিতরে ঢুকে যান ম্যানেজার।

বিকেল চারটে বাজতেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঝাঁপ পড়ে যায় লিলুয়াতেও। জিটি রোডের ধার ঘেঁষে তখনও লম্বা লাইন। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রাহকেরা। এর পরেই বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ লিলুয়ায় জিটি রোড অবরোধ করেন তাঁরা। প্রায় ৪৫ মিনিটের অবরোধে জিটি রোডে যানজট তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে গ্রাহকদের সঙ্গে বচসা বাধে। কয়েক জনকে ধরপাকড় করলে অন্য বিক্ষোভকারীরা চম্পট দেন। বরাহনগরের টবিন রোডের বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের অভিযোগ, লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে অনেকে জানতেই পারেননি, চারটেয় ব্যাঙ্ক বন্ধ করার নোটিস পড়েছে।

গ্রাহকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন চিনার পার্কের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। পথ অবরোধও হয় লিলুয়া, শিয়ালদহ, ট্যাংরায়।

লেক মার্কেটের ব্রতীশ চক্রবর্তী শুক্রবার পর্যন্তও বলেছিলেন, ‘‘দেশের কথা চিন্তা করে দু’দিনের অসুবিধাকে হাসি মুখে মেনে নেওয়া যায়।’’ তিনি বললেন, ‘‘আরও প্রস্তুতি নিয়ে নোট বাতিলের ঘোষণা করা উচিত ছিল।’’

এ দিন সকাল পর্যন্তও হাওড়ার ব্যাঙ্কগুলির সামনে শৃঙ্খলা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই গোলমাল শুরু হয় দিকে দিকে।

মধ্য হাওড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় লাইন দিয়েছিলেন শ’তিনেক গ্রাহক। অভিযোগ ওঠে, ব্যাঙ্ক-কতৃর্পক্ষ নিজেদের লোককে আগে থেকে স্লিপ দিয়ে দেওয়ায় বাইরের লোক ব্যাঙ্কে ঢুকে যাচ্ছেন। লাইন এগোচ্ছে না। এ নিয়ে রক্ষীদের সঙ্গে গ্রাহকদের হাতাহাতি বাধে। অনেকে পড়ে যান। যানজট হয়। এই সুযোগে কিছু গ্রাহক ব্যাঙ্কে ঢুকে ব্যাঙ্ক কর্মীদের আক্রমণ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি ব্যাঙ্ক কতৃর্পক্ষকে অতিরিক্ত দু’ঘণ্টা ব্যাঙ্ক খুলে রাখার অনুরোধ করেন।

হাওড়ার কালীবাবুর বাজার শাখায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অভিযোগ, ঘন ঘন স্যাটেলাইট লিঙ্ক চলে যাওয়ায় নাজেহাল হন তাঁরা। এর মধ্যেই বিকেল চারটেয় হঠাৎ বন্ধ করার নোটিস দেন কর্তৃপক্ষ। ক্ষোভে ফেটে প়ড়েন সকলে। বিক্ষোভ হয় বিরাটি, জগদীশপুর, বালি, বেলুড়ের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনেও।

দমদমের ব্যাঙ্কের সামনেও লাইনে দাঁড়ানো মানুষের অভিযোগ, পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। বিবাদী বাগ চত্বরের বেশ কিছু ব্যাঙ্কে আবার ২০০০ টাকার নোট পেয়ে বেশ বিরক্ত সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এত বড় নোট তাঁরা ভাঙাবেন কোথায়। ব্যাঙ্ক বলছে, ১০০ টাকার যত নোট এসেছিল, তা নিমেষে শেষ!

বস্তুত শুক্রবার ব্যাঙ্ক খুললেও অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন শনি-রবি ছুটির জন্য। এই ছুটির প্রথম দিনই ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে উপচে পড়া ভিড়ের মুখে প্রকট হল প্রস্তুতির ফাঁকগুলি। আজ, রবিবার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।

গ্রাহকদের এই বিক্ষোভের মুখে সব চেয়ে বেশি অসহায় ব্যাঙ্ককর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, সামনে পেয়ে যত রাগ তাঁদের উপরেই দেখাচ্ছেন গ্রাহকেরা। অথচ, টাকা না-এলে তো তাঁদের হাত-পা বাঁধা! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর কথায়, ‘‘এই দু’দিনে যত গালাগালি খেলাম, সারা জীবনেও খাইনি।’’ এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘একসঙ্গে এত অসহায় মানুষ আগে দেখিনি। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমিও বাজার করতে পারছি না। অথচ বাকিদের মতো কাজ ছেড়ে ব্যাঙ্কে লাইন দিতেও পারছি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Disappointment protest Banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE