সোমবার থেকে ধর্মীয় স্থান খোলার অনুমতি থাকলেও ভক্তদের জন্য বন্ধই ছিল ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন বলবৎ ছিল শহরে। পয়লা জুন, সোমবার থেকে শহরের বেশ কিছু পরিষেবা, অফিস, দোকানপাট ‘আনলক’ বা খুলে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে খানিকটা পুরনো চেহারায় ফিরেছে শহর।
শহর ঘুরে এ দিন দেখা গেল, অধিকাংশ দোকানপাট ও অফিস খুলে যাওয়ায় রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় বেড়েছে। আর ভিড়ের ঠেলায় উধাও সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলার প্রবণতা। বেশির ভাগ দোকানের সামনেই দূরত্ব রেখে সুশৃঙ্খল অপেক্ষার বদলে ঠেলাঠেলি আর জটলা। গাড়ি ধরতেও দেখা গেল হুড়োহুড়ি। অনেকের মুখে আবার মাস্কেরও বালাই নেই।
বাস কিন্তু হাতে গোনা। তাই প্রধান ভরসা অটো বা শাটল ট্যাক্সি। শাটল গাড়ি আবার ভাড়া হেঁকেছে যখন যেমন খুশি। কুঁদঘাটের সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের অফিস ধর্মতলায়। তিনি জানালেন, বাস না-পেয়ে বেশ কয়েক বার অটো বদলে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। দু’জন যাত্রী নিয়ে চলা অটোয় ভাড়া এখন আগের দ্বিগুণ। কম যাত্রী তোলায় পর্যাপ্ত অটোরও অভাব। ফলে শোভাবাজার-উল্টোডাঙা রুটে মস্ত লাইন। বাগুইআটির অটোর রুটেও লাইন।
গঙ্গা পারাপারের ফেরিগুলিও ১০০ জনের বদলে ৪০ জন করে যাত্রী তুলেছে। যেখানে ২৫০ জন যাত্রী নেওয়ার কথা, সেখানে ঠাঁই পেয়েছেন ১০০ জন।
আরও পড়ুন: মাঝেরহাট সেতুর মূল অংশের কাজ শুরু আজ থেকে
শহরের কয়েকটি কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘুরে দেখা গেল, ওই সব এলাকায় যে সমস্ত বাড়ি বা আবাসনে কারও করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছে, সেখানে ঢোকা-বেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বস্তি এলাকাগুলি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। আবার কিছু এলাকায় আগের মতোই রাস্তা গার্ডরেলে ঘেরা। পুলিশকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, শহরের বেশ কয়েকটি বস্তিতে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেখানে নজরদারি চালিয়েও বাসিন্দাদের বাইরে বেরোনো ঠেকানো যাচ্ছে না।
তালতলার ডক্টর্স লেনে গিয়ে দেখা গেল, ভরদুপুরে গার্ডরেলের পাশ দিয়েই অবাধে যাতায়াত চলছে। লি রোডের একটি আবাসন করোনার জন্য ‘সিল’ করা হলেও এলাকার বাকি অংশের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। দোকানপাটও খোলা। খিদিরপুরে বেশ কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও মার্কেট কমপ্লেক্স বন্ধ। তবে রাস্তাঘাটে জটলা চলছেই। অনেকের মুখে মাস্কও নেই।
এ দিন শহরের রাস্তায় দেখা গিয়েছে মিছিলও। জিমন্যাসিয়াম খোলার দাবিতে বাঘা যতীন থেকে যাদবপুর পর্যন্ত আসা ওই মিছিলে যোগ দেন ২০-২৫ জন প্রশিক্ষক। ধর্মীয় স্থান খোলা হলে ১০ জন করে ঢোকার সরকারি অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশ বড় উপাসনাস্থলই এ দিন বন্ধ ছিল। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সুদৃশ্য সৌধের সামনে গুটিকয়েক আগন্তুকের তাপমাত্রা জরিপ করার পরে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয় হাতে। তার পরে তাঁদের ঢোকানোর সময়ে তদারকি করতে দেখা যায় বিশপ পরিতোষ ক্যানিংকে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢুকে কিছু ক্ষণ প্রার্থনার ছাড়পত্র মিলেছিল। আবার শ্যামপুকুরে দশহারা গঙ্গাপুজোর ব্রতে মাস্কধারিণীদের জটলা। লম্বা হাতলের সাহায্যে দূর থেকে সবার কাছে হোমানলের উষ্ণতা পৌঁছে দিলেন পুরোহিত। শ্যামবাজার ও বাগবাজারের ওষুধের দোকানে ছিল ভিড়। অনেকেরই মাস্কের বালাই নেই।
শহরের বড় রাস্তাগুলিতে না-হলেও ভিতরের কিছু রাস্তার পাশে এখনও পড়ে আছে কাটা গাছের ডাল। ফলে ওই সব তল্লাটে যানবাহন চলছে ধীরে। বেলগাছিয়া সেতুর ভার-বহন ক্ষমতা যাচাইয়ের কাজ চলায় তা এখন আংশিক বন্ধ। ফলে সেখানে রীতিমতো যানজট। উত্তরের মানিকতলা, বাগমারি, দক্ষিণের সাদার্ন অ্যাভিনিউ, হাজরা, এক্সাইড মোড়ের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি দেখে অনেকের মনে হয়েছে, তা হলে কি আবার শহরে ফিরে এল সেই চেনা-পরিচিত যানজটের ছবি?
কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা অমিত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে মানিকতলা, বাগমারি এলাকার ফাঁকা রাস্তায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আবার ভিড় শুরু হয়েছে। তা হলে কি ফিরে আসছে আমাদের পুরনো কলকাতা?’’
আরও পড়ুন: ভেঙেছে বসতি, ঝড়ে ঘরহারা বহু পাখি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy