প্রতীকী ছবি।
করোনায় আক্রান্ত, এক ক্যানসার রোগীকে লজের ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল তাঁর বাবা ও এক আত্মীয়ের সঙ্গে। অভিযোগ, ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স মেলে প্রায় ২০ ঘণ্টা পরে। তত ক্ষণ কার্যত অভুক্ত তিন জনকে খাবার দেওয়ার কথা ভাবেননি কেউ-ই! বৃহস্পতিবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ঠাকুরপুকুর। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইতস্তত করে এ শহর, একাধিকবার এই অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের আবহে কিছু ঘটনা সেই অভিযোগকেই জোরদার করছে। চিকিৎসক-নার্সদের হেনস্থা বা করোনা আক্রান্ত সন্দেহে একঘরে করার তালিকায় এ বার জুড়ে গেল ঠাকুরপুকুরের ঘটনাও। প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকাও।
শুক্রবার ওই লজে গেলে কেয়ারটেকার মহিলা দাবি করেন, তিনি বৃহস্পতিবার সকালে কিছু ক্ষণের জন্য তালা খুলে দিয়েছিলেন। তখনই আক্রান্ত যুবকের সঙ্গে থাকা এক আত্মীয় পাশের দোকান থেকে কিছু খাবার কিনে আনেন। তার আগে লজের মালিকের নির্দেশেই তালা দেওয়া হয়েছিল। মালিক সৌমেন্দ্রনাথ মজুমদার ফোনে বলেন, “বুধবার রাতে হাসপাতাল এবং হরিদেবপুর থানা থেকে পরপর ফোন করে বলা হয়, করোনা রোগীকে যেন কোনও ভাবেই বেরোতে না দিই। অ্যাম্বুল্যান্স এসে নিয়ে যাবে।” সৌমেন্দ্রনাথবাবুর আরও যুক্তি, রোগীর পরিবার পালিয়ে যেতে পারে, এই ভেবেই তালা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু, এক বারও কি তাঁর মনে হয়নি যে তিন জনের এক জন ক্যানসার ও করোনায় আক্রান্ত, সঙ্গী দু’জন বয়স্ক? তাঁদের জন্য কি খাবারের ব্যবস্থা করা যেত না? মালিকের উত্তর, “মাথায় আসেনি!”
খাবার না-মেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে থানার দায়িত্ব প্রসঙ্গেও। ওই তিন জন যাতে বেরোতে না-পারেন, লজের মালিককে সেই নির্দেশ দিলেও খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেনি কেন থানা? শুক্রবার হরিদেবপুর থানার এক আধিকারিক পরে কথা বলা হবে জানিয়ে ফোন কেটে দেন। কিন্তু পরে আর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
আরও পড়ুন- যাত্রী পরিষেবায় সোমবার থেকে রাস্তায় আরও ৪০০ এসি, নন-এসি বাস
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হেনস্থা আর অসহযোগিতার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা মনে করে এখনও আতঙ্কিত পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বাসিন্দা ওই যুবকের পরিবার। শুক্রবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফোনে যুবকের বাবা জানালেন, ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন তাঁরা। বুধবার রাত ১১টা নাগাদ স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফোনে জানানো হয়, ছেলের করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ এসেছে। তাঁদের লজেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। যুবকের বাবার অভিযোগ, হরিদেবপুর থানা থেকে এর পরে দফায় দফায় ফোন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে, কখন অ্যাম্বুল্যান্স আসবে, জানানো হয়নি। লজের মালিকও তাঁদের ঘর থেকে বেরোতে বারণ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরেও ব্যবস্থা না-হওয়ায় রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় যুবকের গ্রামের বাড়ি থেকে। যুবকের পরিবারের দাবি, মন্ত্রীর নির্দেশ মেলার পরেই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স আসে।
ওই লজের আশপাশের লোকজন বিষয়টি জানতেন না বলেই জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, রোগীরা সমস্যায় পড়লে এই ছোট লজগুলির মালিকেরা নিজেদের বাঁচিয়েই চলতে চান। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি বিজ্ঞাপনে করোনা রোগী ও তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর, বিভেদমূলক আচরণ না-করার যে আবেদন বার বার করা হচ্ছে, তাতে কি আদৌ লাভ হচ্ছে? কারণ পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সচেতনতায় খামতি রয়ে গিয়েছে, তা দেখিয়ে দিয়েছে ঠাকুরপুকুরের এই ঘটনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy