Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kidney Diseases

বৃদ্ধি পাচ্ছে কিডনির রোগী, রাজ্যে নেফ্রোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক দশ জন! খামতি পরিকাঠামোতেও

রোগীর সংখ্যার অনুপাতে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ। ডায়ালিসিসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে শহরের ক্ষেত্রে সাত-দশ দিন। জেলা হলে ১০ থেকে ১২ দিন। 

Kidney patient

প্রতিনিয়তই বাড়ছে বৃক্কের ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৮
Share: Save:

রাজ্যের আটটি মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগ মিলিয়ে সপ্তাহে নতুন রোগী আসেন দুই থেকে আড়াই হাজার। কারণ, প্রতিনিয়তই বাড়ছে বৃক্কের (কিডনি) ক্রনিক অসুখে (সিকেডি) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অথচ, সেই চাপ সামাল দিতে গোটা রাজ্যে নেফ্রোলজির শিক্ষক-চিকিৎসক আছেন দশ জন!

আবার রোগীর সংখ্যার অনুপাতে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ। ডায়ালিসিসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে শহরের ক্ষেত্রে সাত-দশ দিন। জেলা হলে ১০ থেকে ১২ দিন। রাজ্যে একের পর এক মেডিক্যাল কলেজ ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠছে। অথচ, চিকিৎসা পরিকাঠামোর এমন হাল কেন? বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব বৃক্ক দিবস’-এ যখন অসুখ থেকে বাঁচতে সচেতনতার কথা বলা হল, তখন স্বাভাবিক ভাবেই বেহাল পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন উঠে আসছে। খোদ সরকারি স্তরে বৃক্কের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এমন ‘ক্রনিক’ সমস্যার সমাধানের জন্য কি আদৌ কোনও চিন্তাভাবনা করছে স্বাস্থ্য দফতর?

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর দাবি, ‘‘চিকিৎসকেরাও ধীরে ধীরে আসছেন।’’ যদিও এসএসকেএম (তিন জন) ছাড়া রাজ্যের বাকি পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজে এক বা দুইয়ের বেশি শিক্ষক-চিকিৎসকই নেই। আর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিক্যালে এক জনও শিক্ষক-চিকিৎসক নেই। অগত্যা সিনিয়র রেসিডেন্ট-ই (এসআর) ভরসা। অপ্রতুল পরিকাঠামো নিয়েই এসএসকেএম (৩০ জন) এবং এনআরএসে (৯ জন পড়ুয়া) নেফ্রোলজির ডিএম কোর্স এবং‌ বৃক্ক প্রতিস্থাপন চলছে। এক অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এক শ্রেণির চিকিৎসক শিক্ষাদান করেন, অন্য শ্রেণি চিকিৎসার দিকে জোর দেন। রাজ্যে সরকারি স্তরে দুইয়েরই বড় অভাব। ফলে আগামী দিনে কী হবে, বলা মুশকিল।’’ চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, সরকারি স্তরে বেতন-বৈষম্য ও বদলির নিয়মের গেরোয় চিকিৎসক মিলছে না। অন্তত ৪০ বছর বয়সে পৌঁছে ডিএম পাশ করে কাজে যোগ দিয়ে এক জন এসআর বেতন পান ৮০ হাজার টাকা। সেখানে বেসরকারিতে তাঁর বেতন হতে পারত কয়েক লক্ষ টাকা।

চিকিৎসকের মতোই অপ্রতুল ডায়ালিসিস ব্যবস্থাও। বাস্তব চিত্র বলছে, ডায়ালিসিসের জন্য বহু সময়েই অপেক্ষার ফাঁসে আটকে ভোগান্তি হয় রোগীদের। প্রয়োজন থাকলেও তারিখ পেতে গিয়েই কালঘাম ছুটে যায়। যদিও স্বাস্থ্য-অধিকর্তার দাবি, ‘‘রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ এবং জেলা স্তরের হাসপাতালে ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। অনেক জায়গাতেই সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা করে পরিষেবা মিলছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমেও এখন বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস মিলছে।’’

স্বাস্থ্যকর্তাদের আরও দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডায়ালিসিস প্রোগ্রাম’-এ সমস্ত জেলাতেই ওই পরিষেবা চালুর কথা বলা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই ৭৫ শতাংশ করেছে রাজ্য। পিপিপি মডেলে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিট হয়েছে। যেখানে শেষ ছ’মাসে সাত হাজার রোগী পরিষেবা পেয়েছেন। ডায়ালিসিস হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার রোগীর।

তবে, ডায়ালিসিসের স্তরে পৌঁছনোর আগেই বৃক্কের অসুখ প্রতিরোধের কথা এ দিন উঠে আসে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে। ‘সিকেডি’ রুখতে সমাজের প্রান্তিক স্তর থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজি’র প্রাক্তন সভাপতি, চিকিৎসক বিবেকানন্দ ঝা। ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে বৃক্কের অসুখকে গোড়াতেই প্রতিরোধ করতে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে বলেন নেফ্রোলজিস্ট অরূপরতন দত্ত এবং অর্পিতা রায়চৌধুরী।

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বৃক্কের ক্রনিক অসুখে ভুগছেন। দীর্ঘ দিন বৃক্কের অসুখে ভুগছেন, দেশে এমন রোগীর সংখ্যা ১০ লক্ষে ৮০০ জন। যেখানে বৃক্কের অসুখের শেষ পর্যায় বা ‘এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজ়িজ়’ (ইএসআরডি)-এর ঘটনা দেখা যায় প্রতি ১০ লক্ষের মধ্যে ১৫০ থেকে ২০০ জনের।

এনআরএসের নেফ্রোলজির প্রধান চিকিৎসক পিনাকী মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, নন কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের (এনসিডি) ৪৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ক্যানসার, কার্ডিয়োভাস্কুলার, ডায়াবিটিস, শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ। তাই, ওই সমস্ত রোগের শুরুতেই চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুদান মেলে। কিন্তু বৃক্কের অসুখ ‘এনসিডি’র আওতায় না থাকায় সেই সুযোগ আপাতত নেই।

পিনাকী বললেন, ‘‘নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজনের মধ্যে দেখা গিয়েছে, ‘সিকেডি’র হার খুব বেশি। মৃত্যুর হারও বেশি। এই অসুখ ‘এনসিডি’র আওতায় চলে এলে বৃক্কের রোগের প্রতিরোধে অনেক কাজ করা সম্ভব হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kidney Diseases Government hospitals Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy