Advertisement
E-Paper

অস্ত্রের আস্ফালন কলকাতাতেও, মানুষ ঘরবন্দিই

সকাল থেকে কলকাতার পথঘাট কার্যত জনশূন্য ছিল। সাধারণ রবিবারে যে গাড়ির সংখ্যা দেখা যায় পথে, তা চোখে পড়েনি কোথাওই।

রামনবমীতে বাইক মিছিল। রবিবার, দমদম রোডে।

রামনবমীতে বাইক মিছিল। রবিবার, দমদম রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৪
Share
Save

কোথাও পর পর ট্যাবলো সাজিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোল, কোথাও লাঠি হাতে চলল মিছিল। কেউ পুজো সারলেন মন্দিরে, কেউ আবার মণ্ডপে ২১টি শিশুকে পুজো
করলেন মাতৃরূপে! সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে উত্তর কলকাতায় আবার চেষ্টা হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার। রামনবমী উদ্‌যাপন ঘিরে রবিবার কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে দিনভর এ ভাবেই চলল একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু এর মধ্যেও অস্ত্র হাতে আস্ফালন বন্ধ হল না কলকাতার রাজপথে। দেখা গেল দেদার ডিজে বক্সের তাণ্ডবও। কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মার কড়া নির্দেশ কার্যত উড়িয়েই একাধিক মিছিলে দেখা গেল অস্ত্রের উপস্থিতি। কিছু জায়গায় পুলিশ ধরপাকড় চালানোর দাবি করলেও সাধারণ মানুষ মোটের উপরে এ দিন রাস্তায় বেরোনো এড়িয়েই গেলেন। যা প্রশ্ন তুলে দিল, উৎসব উদ্‌যাপনের নামে রেষারেষিই কি আদতে ঘরে আটকে রাখল সাধারণ মানুষকে?

এ দিন সকাল থেকে কলকাতার পথঘাট কার্যত জনশূন্য ছিল। সাধারণ রবিবারে যে গাড়ির সংখ্যা দেখা যায় পথে, তা চোখে পড়েনি কোথাওই। বেলা ১১টা থেকে আরও ফাঁকা হয়ে যায় পথঘাট। তার মধ্যেই প্রথম মিছিল বেরোয় মধ্য কলকাতার শিয়ালদহ চত্বর থেকে। সেখানে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ মানুষের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার করা হবে এবং মানুষ প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে বলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। এর পরে দুপুরের দিকে বড়বাজারের রাজাকাটরা থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোয়। তাতে কেউ সেজেছিলেন হনুমান, কেউ রামচন্দ্র। ওই শোভাযাত্রায় হাঁটতে দেখা যায় জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাম ভক্ত। ভক্ত হিসাবেই এসেছি।’’ এমনই আর একটি বড় শোভাযাত্রা বেরোয় হেস্টিংস চত্বর থেকে। সেটি যায় খিদিরপুর হনুমান মন্দির পর্যন্ত। পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় সব মিলিয়ে অন্তত ৬০টি ছোট-বড় মিছিল বেরিয়েছে এ দিন।

সন্ধ্যার দিকে বড় মিছিল বেরোয় মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে। সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই দেখা যায়, হকি স্টিক থেকে তরোয়াল, গদা থেকে ত্রিশূল— সমস্ত ধরনেরই অস্ত্রের উপস্থিতি রয়েছে। পুলিশকে এই মিছিলে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরং মিছিল সিআইটি রোড ধরে যত এগিয়েছে, ততই ফুটে উঠেছে সম্প্রীতির দৃশ্য। দেখা গিয়েছে, সংখ্যালঘু লোকজন রাস্তার দু’ধারে মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে। মিছিলে আগতদের তাঁরাই আবার জল দিচ্ছেন, শরবত খাওয়াচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গেই অস্ত্র হাতে আলিঙ্গন সারলেন কেউ কেউ। শুভেন্দু সেই মিছিল থেকে বন্দর এলাকায় মিছিল সেরে ভবানীপুরে একটি মন্দির উদ্বোধনে যান। তাঁর আগে তিনি বলেন, ‘‘উৎসবের মধ্যে আদতে মানুষ অধিকার বুঝে নিতে পথে নেমেছেন। অস্ত্র হাতে মিছিল আদতে অধিকার বুঝে নেওয়ার মনের জোর দেয়।’’

এর পাল্টা উত্তর কলকাতায় সর্বধর্ম সমন্বয় মিছিলে হেঁটে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই মিছিলে কোনও রাজনীতি নেই। এখানে ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার।’’ একই ভাবে বাগবাজারে মন্দিরে পুজো সেরে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘পুজো করা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেটাকে দেখানোর কী আছে। যাঁরা পুজো করে দেখান, তাঁরা রাজনীতির জন্যই সমস্তটা করেন। সে রাম পুজোই হোক আর হনুমান পুজো!’’

দিনের শেষে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবেই সমস্ত মিছিল শেষ হয়েছে। যে যে জায়গায় অপ্রীতিকর কিছু হয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

এ দিকে দমদম থেকে নিউ ব্যারাকপুর, বিধাননগর থেকে নিউ টাউন— মোটের উপর নির্বিঘ্নেই চলেছে রামনবমীর উদ্‌যাপন। শনিবার বিকেল থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউ ব্যারাকপুর, নিমতা, দমদম এবং নাগেরবাজার থানা এলাকায় একাধিক শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। রাজ্যের একাধিক জায়গার মতো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হলেও এখানকার শোভাযাত্রাগুলিতে তেমন ভাবে অস্ত্র দেখা যায়নি, ডিজে বক্সও ব্যবহার করা হয়নি। আয়োজকদের একাংশ জানান, অসংখ্য মানুষ এই সব শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। নিয়ম মেনেই মিছিল হয়েছে। তবে কেষ্টপুরের কাছে ভিআইপি রোডে মিছিল করতে গিয়ে এ দিন বাধা পায় বিজেপি। নিউ টাউন রামমন্দির থেকে ওই মিছিল শুরু করেছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ, শমীক ভট্টাচার্যেরা। ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। ওই মিছিল কেষ্টপুর দিয়ে লেক টাউনে যাওয়া কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ ভিআইপি রোডের আগে কেষ্টপুরের প্রফুল্লকাননে মিছিল আটকে দেয়। তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান লকেট। যা দেখে এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, ‘‘এ কোনও পুজো পালন নয়, এটা রাজনীতির উৎসব চলছে। ভুগছে সেই সাধারণ মানুষ।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ram Navami

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}