—প্রতীকী চিত্র।
শুধু একটি রোগের মোকাবিলায় এ পর্যন্ত পাঁচশো কোটি টাকা খরচ করেছে স্বাস্থ্য দফতর! তবু বছরের শুরু থেকে যা বলা হয়, বছর শেষেও তারই পুনরাবৃত্তি করতে হয়! ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন এই আক্ষেপই শোনা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশের গলায়।
ডেঙ্গিতে পরপর মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ‘আক্রান্ত’ পুরসভাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। সেই সমস্ত বৈঠকে আলোচনার যা নির্যাস, তা শোনার পরেই আক্ষেপ না করে থাকতে পারছেন না স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ।
সম্প্রতি জেলাশাসকের উপস্থিতিতে দক্ষিণ দমদম এবং বিধাননগরের পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সল্টলেকে এমনই একটি বৈঠক হয়। সেখানে লেক টাউন, বাগুইআটির জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া এবং সল্টলেকের এক ও তিন নম্বর সেক্টরের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, লেক টাউনে কী করতে হবে, তা শুনে বল স্থানীয় বিধায়কের কোর্টে ঠেলে দেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক চেয়ারম্যান পারিষদ। আবার লার্ভা নিধনে সল্টলেকে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের বাড়িতে ঢুকতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিধাননগরের এক পুর প্রতিনিধি।
স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘লেক টাউনে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাড়ি বাড়ি ঢুকে লার্ভা মারতে হবে। ফাঁকা, পরিত্যক্ত বাড়িতে লার্ভা জমে রয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। এটা তো আজ বলা হচ্ছে, এমনটা নয়। এতগুলো মৃত্যুর পরেও বছর শেষে এ কথা কেন শুনতে হবে?’’ স্বাস্থ্য ভবনের আর এক আধিকারিক জানান, গত ৯ নভেম্বর নবান্নে ডেঙ্গি সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছিল। হুগলির রিষড়া পুরসভায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়ছে, তা ওই বৈঠকে জানানো হয়েছিল। এর পরেও শ্রীরামপুরে পরপর দু’জনের মৃত্যু ঠেকানো গেল না! এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের হাসপাতালে গড়ে ৩০-৩৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু আক্রান্তের যে রিপোর্ট প্রশাসনিক স্তরে পাঠানো হচ্ছে, তাতে তার কোনও প্রতিফলন নেই!’’
সচেতনতায় ঘাটতির এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আলিপুরের আইএএস আবাসনে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা পাওয়ার ঘটনা। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ওই আবাসনে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর পেয়ে পুরসভার দল পরিদর্শনে গিয়েছিল। সেই সময়েই কোয়ার্টার্সের পিছনে মাটির পাত্রের জমা জলে এডিসের লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। মাটির পাত্রে পাখিদের জন্য ওই জল রাখা ছিল।
স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের খরচ এখন পাঁচশো কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা দেখছি, তাতে কে সচেতন, আর কে নন, তাই তো গুলিয়ে যাচ্ছে!’’ কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার অনেক হয়েছে। এ বার সকলের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হওয়ার সময় এসেছে।’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট, প্লেটলেটের ব্যবহারে যেটুকু খামতি রয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। শেষ পর্যায়ে একটিও যাতে মৃত্যু না হয়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy