—প্রতীকী ছবি
রাজ্যবাসীর চোখের চিকিৎসায় ‘চোখের আলো’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রত্যেকের চোখের সুস্থতা। তবে, দৃষ্টিহীনদের চোখে আলো ফেরানোর ক্ষেত্রে পরিকাঠামো তৈরিতে অবশ্য উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন।
তাঁদের আক্ষেপ, বিভিন্ন সময়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে মরণোত্তর চোখ সংগ্রহের কাজ কার্যত বন্ধ। নানা শর্তসাপেক্ষে সরকারি হাসপাতালে মৃতের চোখ তোলার ছাড়পত্র মিললেও বাস্তবে সেই কাজ হচ্ছে না। অথচ, বেসরকারি হাসপাতাল সহজেই এই কাজ করছে। বাড়িতে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও কোভিড সুরক্ষা-বিধি মেনে চোখ তোলা যাবে বলে গত ২৮ ডিসেম্বর নির্দেশিকায় জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে সম্প্রতি চক্ষুদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ‘কর্নিয়া ডে কমিটি’র তরফে রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে (অপথ্যালমোলজি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতিতে বাস্তব নানা সমস্যায় মরণোত্তর চোখ সংগ্রহ করা
যাচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য, চোখ সংগ্রহের জন্য মৃতের কোভিড পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট থাকতে হবে অথবা এই মর্মে ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসককে লিখে দিতে হবে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, বাস্তবে বিষয়টি এতটা সহজ নয়। তাঁদের দাবি, চিকিৎসক যাতে পর্যবেক্ষণ করে ডেথ সার্টিফিকেটে ‘নন-কোভিড’ বলে লিখে দেন, সে ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা জরুরি।
কর্নিয়াজনিত কারণে অন্ধত্ব দূরীকরণের কাজে গতি আনতে এই সব প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, করোনা মোকাবিলার জন্য অন্য অনেক কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। ওই সব দাবি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে, আরও কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (অপথ্যালমোলজি) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি সদর্থক বিবেচনার মধ্যে আছে।’’
কলকাতায় নীলরতন সরকার এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এ রাজ্যে চালু পদ্ধতিতে মৃতের শরীর থেকে চোখ তোলার পরে যত দ্রুত সম্ভব ওই দুই হাসপাতালে পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকেরা। কিন্তু যাতায়াতে নানা সমস্যা হয়। দূরের জেলার স্বেচ্ছাসেবকেরা সমস্যায় পড়েন বেশি। তাঁদের দাবি, ‘এমকে মিডিয়াম’ নামে একটি ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। ওই ওষুধ দিলে সংগৃহীত কর্নিয়া ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ভাল থাকে। ফলে, কর্নিয়া তোলার পরে পড়িমড়ি কলকাতায় ছুটতে হবে না। তা ছাড়া, এ ক্ষেত্রে মৃতের শরীর থেকে পুরো চোখ না তুলে শুধুমাত্র কর্নিয়া সংগ্রহ করা যাবে। ব্যয়সাপেক্ষ এই ওষুধ হায়দরাবাদ থেকে আনাতে হয়।
সংগঠনের সহ-সম্পাদক কামাক্ষ্যা মজুমদার বলেন, ‘‘শুনেছি, বর্ধমান মেডিক্যালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো প্রায় তৈরি। সেটি চালু হলে বর্ধমান বা আশপাশের জেলা তো বটেই, উত্তরবঙ্গের একাংশ থেকেও সহজে কর্নিয়া পৌঁছে দিতে পারবে চক্ষু ব্যাঙ্কগুলি। ওই সব এলাকার দৃষ্টিহীন মানুষেরও সুবিধা হবে।’’
প্রতিটি জেলা হাসপাতাল, নিদেনপক্ষে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন কেন্দ্র গড়ার দাবিও রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে যাঁরা মৃতের শরীর থেকে চোখ সংগ্রহ করেন, তাঁদের স্বাস্থ্যকর্মীর মর্যাদা দেওয়ার দাবিও স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে তাঁরা করোনার টিকা পাবেন। নির্ভয়ে দ্রুত কর্নিয়া সংগ্রহের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy