Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

চোর সন্দেহে গণপিটুনি, মৃত্যু যুবকের

মৃত ওই তরুণের নাম শুভম কর ওরফে বাপন। মৃত্যুর কথা জানাজানি হতেই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা।

মৃত তরুণ শুভম কর

মৃত তরুণ শুভম কর

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

একটি বাতিস্তম্ভের সঙ্গে তার দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল বছর আঠেরোর ছেলেটিকে। তার পরে শুরু হয় শাবল, পেরেক লাগানো বাটাম দিয়ে মারধর। সঙ্গে চড়-কিল-লাথি-ঘুষি তো ছিলই অনবরত। বারবার চিত্কার করে তিনি বলছিলেন, তিনি চুরি করেননি। ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। তবু চোর অপবাদে বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর রাতে টানা চার ঘণ্টা এ ভাবেই চলে গণপিটুনি। এর জেরে নেতিয়ে পড়লে বৃষ্টির মধ্যেই ফেলে রাখা হল তাঁকে। ঘটনাস্থল দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগর। পরে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করে দমদম থানার পুলিশ। শুক্রবার সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

পুলিশ জানায়, মৃত ওই তরুণের নাম শুভম কর ওরফে বাপন। মৃত্যুর কথা জানাজানি হতেই উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। রবীন্দ্রনগরে যাঁর বাড়ির সামনে যুবককে ধরা হয়েছিল, সেই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটক করা হয়েছে তিন যুবককে। বাপনের পরিবার এবং যাঁর বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে, উভয়ের পরিবারের তরফেই দমদম থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। নৃশংস এই ঘটনায় যেমন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই পুলিশের তরফে পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মনোভাব নিয়ে।

শনিবারও এলাকায় গিয়ে দেখা যায় গোটা অঞ্চল ছিল থমথমে। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠে আসছে নানা অভিযোগ। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে পরপর চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে ওই এলাকায়। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। সেই কারণেই বাসিন্দারা এমনটা ঘটিয়েছেন বলে তাঁদের দাবি।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে? শুভমের মামা তিন নম্বর ওয়ার্ডের প্রমোদনগরের বাসিন্দা রতন বিশ্বাস জানান, ওই তরুণের মা মারা গিয়েছেন কিছু দিন আগে। তাঁর কাছেই থাকতেন বাপন। পিভিসি দরজা লাগানোর কাজ করতেন তিনি। কালীপুজোর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে পাশের পাড়া রবীন্দ্রনগরের একটি গলি ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁর ভাগ্নে। ওই গলিতেই কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তাই অচেনা যুবককে দেখে চোর সন্দেহ হয় এলাকার কয়েক জনের। বাকিরা পালালেও ধরা পড়েন বাপন। অভিযোগ, এর পরেই গলায় তার দিয়ে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে দেওয়া হয় ওই তরুণকে। সারা গায়ে পেরেক লাগানো বাটাম, শাবল দিয়ে মারধর করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের ছেলে যদি অপরাধ করেও থাকতেন, তার জন্য পুলিশ ছিল। এ ভাবে মারধর কেন করা হল তাঁকে।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের (ডিসি ২) ধ্রুবজ্যোতি দে জানান, ওই যুবকের বাড়ির তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সেখানে স্পষ্ট নয় কে বা কারা মেরেছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে যে নিষ্ঠুরতায় ওই তরুণকে মারা হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন পুলিশকর্তারা। সাধারণ মানুষই যদি এত নিষ্ঠুর ভাবে মারধর করেন, তা হলে দাগী দুষ্কৃতীরা কী করবে? প্রশ্ন তুলছেন পুলিশকর্তারা।

ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাচ্ছে। যদি ওই তরুণ অপরাধ করেও থাকেন, তার বিচারের জন্য পুলিশ রয়েছে। আইন হাতে তোলার অধিকার কে দিয়েছে? দ্রুত দোষীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করছি পুলিশ প্রশাসনের কাছে।’’

(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময় মৃত তরুণ শুভম কর বলে যাঁর ছবি দেওয়া হয়েছিল তা ভুল। এই গুরুতর ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumdum Lynching দমদম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy