Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kolkata Municipal Election

Kolkata Municipal Election 2021: ইতিহাসের অলিন্দে শুধুই ভাঙন আর ভাঙন, নজর কোথায়

অভিযোগ, এলাকার সার্বিক উন্নতিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব প্রকট। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, ইট-কাঠ পাথরের জঙ্গলে ঝুলে গোটা এলাকার ভবিষ্যৎ।

ঘিঞ্জি: বিবেকানন্দ উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকা।

ঘিঞ্জি: বিবেকানন্দ উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকা। নিজস্ব চিত্র।

কাজল গুপ্ত ও মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৪৮
Share: Save:

শহরের হৃৎপিণ্ডের একটি অলিন্দ বলা যায় একে। বার্ধক্য এর প্রতিটি ভাঁজে। অবহেলা নয়, বরং সম্ভ্রম প্রাপ্য ছিল কলকাতার এই সাবেক, ঐতিহাসিক, বাণিজ্যিক এবং বসতি অঞ্চলের। বড়বাজার, পোস্তা, রবীন্দ্র সেতু থেকে নিমতলা ঘাট, জোড়াবাগান, জোড়াসাঁকো, রাজাবাজার, গিরিশ পার্ক, এম জি রোড, কলাবাগান, কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন মার্কাস স্কোয়ার— এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল তা থেকে বঞ্চিত বলেই অভিযোগ বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীদের। স্থানের নামেই চেনা হয়ে যায় মাহাত্ম্য। অথচ অভিযোগ, এলাকার সার্বিক উন্নতিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব প্রকট। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, ইট-কাঠ পাথরের জঙ্গলে ঝুলে গোটা এলাকার ভবিষ্যৎ।

যেমন ভাবে পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থেকেছে এক ভাঙা উড়ালপুল। চলতি বছরে সেই উড়ালপুলের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। ভাঙা শুরু হয়েছে বাকি অংশ। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। অভিশপ্ত দুপুরে ওই বরো এলাকার পোস্তায় নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুলের একটি অংশ ভেঙে প্রাণ হারান ২৮ জন। দগদগে স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গণেশ টকিজ়ের বাসিন্দা বিকাশ মালিকে। মৃত ২৮ জনের এক জন, বিকাশের বাবা গোলাপ মালি (৬৫)। মাকে নিয়ে চিলতে ঘরে থাকেন ছেলে। ভোট প্রসঙ্গ উঠতেই বিকাশ বললেন, ‘‘গণেশ টকিজ় মোড়ে ওই উড়ালপুলের নীচের ফুটপাতে বাবা ধূপকাঠি বিক্রি করছিলেন। উড়ালপুলে চাপা পড়েন বাবা। কার গাফিলতিতে এমনটা, সে হিসাব কষে কী লাভ? শুধু আশা রাখি, সরকারি কাজে এক দিন স্বচ্ছতা আর গতি আসবে।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পর থেকেই তীব্র হয়েছে যান-যন্ত্রণা। উড়ালপুল পুরো ভাঙার দাবি তুলেছিল বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত ‘উড়ালপুল হটাও সমিতি’। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাপি দাসের দাবি, ‘‘প্রশাসনের কাছে আর্জি, দ্রুত বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভাঙার কাজ শেষ হোক। এখানে কোনও উড়ালপুল আর চাই না।’’

ওই উড়ালপুল ভাঙার পরেই তৎকালীন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা চার নম্বর বরোর বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর স্মিতা বক্সীর পরিবারকে ঘিরে বিতর্ক উঠেছিল। গত বিধানসভা ভোটে স্মিতাকে বিধায়ক পদের টিকিট দেয়নি দল। চলতি পুর নির্বাচনেও টিকিট পাননি। যা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন, তবে কি পাঁচ বারের কাউন্সিলর ও দু’বারের বরো চেয়ারম্যান স্মিতাকে পোস্তা-কাণ্ডের জন্যই ‘সরতে’ হল? তৃণমূলের অন্য অংশের ব্যাখ্যা, সাংগঠনিক কাজে স্মিতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই এই সিদ্ধান্ত। স্মিতার বক্তব্য, ‘‘পোস্তা উড়ালপুল নিয়ে ওঠা অভিযোগের কোনও প্রমাণ নেই। দল চাইলে সংগঠনের কাজে মন দেব।’’

এই বরোর আরও এক যন্ত্রণা পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়ি। ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এমন বাড়ির সংখ্যা অনেক। পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর বিজয় ওঝার অভিযোগ, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা নিয়ে পুরসভার সুনির্দিষ্ট নীতি নেই। তাই মহারাষ্ট্রের ঠাণে পুরসভা বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে পারলেও কলকাতা পুরসভা পারে না।’’ ২৬ এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডেও এই সমস্যা রয়েছে। দুই ওয়ার্ডের শাসক দলের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর তারকনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মহম্মদ জসিমউদ্দিন জানাচ্ছেন, বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রে শরিকি বিবাদ, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে দ্বন্দ্ব, কয়েক দশকের ভাড়াটে সংক্রান্ত সমস্যা কাজের পক্ষে বড় বাধা।

বরোর আর এক কাঁটা যত্রতত্র পার্কিং। পোস্তা-সহ বরো এলাকার অনেকটা অংশে মালপত্র ওঠানো-নামানো হয়। তাই পণ্যবাহী ভারী গাড়ি থেকে ছোট গাড়ির রমরমায় রাস্তা সঙ্কীর্ণ হচ্ছে বলে অভিযোগ। রাজাবাজার, মেছুয়া থেকে বড়বাজার হয়ে পোস্তার মধ্যে হাঁটার পরিসরও মেলে না বললে চলে। বড়বাজার, পোস্তা, গিরিশ পার্কে অবৈধ পার্কিংয়ের ভূরি ভূরি অভিযোগ স্বীকার করেছেন শাসক ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। স্মিতার দাবি, ‘‘পার্কিংয়ের বিষয়টি পুরসভার সদর দফতর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কোনও রাস্তায় পার্কিং দেওয়ার আগে পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে ভাল হয়।’’ পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ আগরওয়ালও বলছেন, ‘‘পোস্তায় অবৈধ পার্কিং বড় সমস্যা।’’ বাসিন্দা ভোলা প্রসাদ সাউয়ের প্রস্তাব, বরং বহুতল পার্কিং প্লাজ়া করে রাস্তা পরিষ্কার রাখা হোক।

জমা জলের তালিকায় কয়েক দশক ধরেই নামডাক এই বরোর সুকিয়া স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, ঠনঠনিয়ার। এই অঞ্চলের নিকাশি নিয়ে অবশ্য কাজ হয়েছে অনেক, তবু যন্ত্রণামুক্তি ঘটেনি। মানুষ আদৌ এর থেকে মুক্তি পাবেন কি না, সেই চিন্তাও যেন আর ভাবায় না। যেমন ভাবায় না অগ্নিশয্যায় শুয়ে থাকা জোড়াবাগান, পোস্তা, বড়বাজার নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের। বার বার আগুন লাগে। তবু বহু পুরনো দোকান, গুদামের ফায়ার অডিট হয় না, দাবি এক ব্যবসায়ীর। সবুজের অভাব আর এক সমস্যা। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর সাধনা বসুর দাবি, ফুটপাতবাসীদের রান্নার তাপে গাছ মরে যায়।

এলাকায় শিক্ষার বিস্তার নিয়ে খুশি গোপন করেননি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাসক দলের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর ইলোরা সাহা। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের (বড়বাজার) মতো স্কুলে ইংরেজি বিভাগ চালু হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকায় স্কুলটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। হিন্দি মাধ্যমও চালু হবে।’’

অলিগলিতে ইতিহাস লুকিয়ে থাকা এই বরোর ভৌগোলিক অস্তিত্ব নিয়ে ভাবিত নয় কোনও পক্ষ। নিমতলা ঘাট থেকে রবীন্দ্র সেতুমুখী (হাওড়া সেতু) গঙ্গার ভাঙন তাই চুপচাপ গ্রাস করছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর সুজাতা সাহা মানছেনও সে কথা। জানাচ্ছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Municipal Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy