নর্দমার মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল দেহটি। মঙ্গলবার, টালায়। নিজস্ব চিত্র
নর্দমার মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে একটি দেহ। হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। মাথাটা থেঁতলানো। দেহ ওল্টাতেই দেখা যায়, যুবকের মুখ বাঁধা রয়েছে একটি জ্যাকেট দিয়ে। মঙ্গলবার, বড়দিনের সকালে টালা ট্যাঙ্কের পাশ থেকে এ ভাবেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল এক যুবককে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিহতের নাম শেখ আবদুল আব্বাস (৩৪) ওরফে পাপ্পু। তাঁর বাড়ি ঘটনাস্থলের উল্টো দিকেই।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মাথায় এবং মুখে ভারী কিছু জিনিস দিয়ে আঘাত করে ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় পুলিশ এক মহিলা-সহ পাঁচ জনকে আটক করে জেরা করছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, একটি পরিবহণ সংস্থার কর্মী আব্বাসের বাড়ি খেলাতবাবু লেনের ৩০ নম্বর বস্তিতে। মল্লিকবাজারে একটি ফ্ল্যাটও কিনেছিলেন তিনি। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও ছ’বছর ও ছ’মাসের দু’টি মেয়ে রয়েছে। আব্বাসরা তিন ভাই। ছোট ভাই মহম্মদ মোক্তার ওরফে মুন্না পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি বলেন, ‘‘দাদা মাঝেমধ্যে সন্ধ্যায় একটু মদ্যপান করে বাড়ি ফিরত। রাত দেড়টা-দু’টোও হত।’’ সোমবার অনেক রাতেও আব্বাস বাড়ি ফেরেননি দেখে বাড়ির লোকজন ভেবেছিলেন, কোনও বন্ধুর বাড়িতে রয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু সকালে পাড়ায় শোরগোল শুনে বা়ড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, আব্বাস ওই অবস্থায় পড়ে আছেন।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দেহটি যে ভাবে উদ্ধার হয়েছে, তাতে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, খুনই হয়েছেন আব্বাস। ঘটনাস্থলের অদূরেই ঝোপঝাড়ের মধ্যে মিলেছে চাপ চাপ রক্ত। তদন্তকারীদের অনুমান, সেখানেই আব্বাসকে খুন করা হয় এবং ট্যাঙ্কের পাশে দেহটি ফেলে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ আব্বাসের কয়েক জন বন্ধুর নাম পেয়েছে। তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই আব্বাস মদের আসর বসাত ওই পার্কে। সোমবার রাতেও সেখানে মদ্যপান চলেছিল। তদন্তকারীরা ওই জায়গা থেকে মদের বোতল এবং প্লাস্টিকের কিছু গ্লাস পেয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, আব্বাসের সঙ্গে মদের আসরে দেখা যেত তিন যুবককে। তাঁদের আটক করার পরে পুলিশ আর এক যুবক ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ পেয়ে মঙ্গলবার তাঁদেরও আটক করে জেরা শুরু করেছে। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, ওই মহিলার সঙ্গে আব্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। আব্বাস জুয়াও খেলতেন। সেখান থেকেও কিছু কাঁচা টাকা হাতে এসেছিল তাঁর। টাকার জন্য, না কি সম্পর্কের টানাপড়েনে তাঁকে খুন হতে হল, তদন্তকারীরা সেটাই
খতিয়ে দেখছেন।
এ দিন ঘটনার পরে অঝোরে কাঁদছিলেন আব্বাসের মা সালমা বিবি, স্ত্রী ফতিমা আফরিন। মা বলছিলেন, ‘‘ওর পায়েস খেতে ইচ্ছে হয়েছিল বলে বিকেলেই বাড়িতে চাল, ক্ষীর ও দুধ নিয়ে এসেছিল। সে সব পড়ে রয়েছে। ছেলেটাকে এ ভাবে কেন মারল, বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy