সাবা খাতুন। (ডান দিকে) এ ভাবেই বস্তায় উদ্ধার হয়েছে তাঁর দেহ।
ফুটপাতের এক দিকে রাখা মোটরবাইকের পাশেই পড়ে ছিল সাদা চটের বস্তা। দেখে মনে হচ্ছিল, ভিতরে ভারী কিছু রয়েছে। কাছে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেন, বস্তা থেকে বেরিয়ে আছে একটি আঙুল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ ওই বস্তা খুলে দেখে, ভিতরে বছর একুশ-বাইশের এক তরুণীর দেহ। বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর থানার এমএম আলি লেনে। তদন্তে জানা যায়, মৃতার নাম সাবা খাতুন ওরফে নয়না (২২)। তাঁর বাড়ি বেঙ্গলি শাহ ওয়ারসি লেনে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার গলায় ফাঁসের ও ডান হাতে সিগারেটের ছেঁকার দাগ মিলেছে। দেহের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, সাবাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বেঙ্গলি শাহ ওয়ারসি লেনে রেশমা নামে এক মহিলার বাড়িতে থাকতেন সাবা। রেশমার মেয়ে সাবার বন্ধু। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সাবার মোবাইলে একটি ফোন আসে। তার পরেই তিনি বেরিয়ে যান। আর ফেরেননি। পরে রাত আড়াইটে নাগাদ তাঁর বস্তাবন্দি দেহ মেলে। রেশমার সূত্রেই সাবার বোন ও পরিবারের খোঁজ মেলে। তবে সাবার মোবাইল ফোনটি মেলেনি। তাঁর পকেট থেকে মিলেছে কিছু পুরিয়া। সম্ভবত সেগুলি মাদক।
বৃহস্পতিবার দেহ শনাক্ত করার পরে সাবার বোন সুনয়না জানান, তাঁদের খুব ছোটবেলাতেই মা মারা গিয়েছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে কাকদ্বীপে থাকেন। ঠাকুরমার কাছেই বড় হয়েছেন তাঁরা। ঠাকুরমার মৃত্যু এবং বোনের বিয়ের পরে সাবা কাকিমার কাছে থাকতেন। বছরখানেক আগে সাবা ওয়াটগঞ্জে দিদিমার কাছে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। মাস দুয়েক আগে গিয়ে উঠেছিলেন স্টোর গলির বাসিন্দা রেশমার বাড়িতে। সাবার কাকিমা সুলতানা বেগম দাবি করেছেন, “রেশমা জানে, সাবা কোথায় গিয়েছিল এবং কী ভাবে ওর মৃত্যু হয়েছে।” যদিও রেশমার দাবি, সাবা তাঁর মেয়ের বন্ধু ছিলেন। তাই তাঁকে থাকতে দিয়েছিলেন তিনি। ওই তরুণী কী করতেন বা কোথায় যেতেন, তা তিনি জানেন না। রেশমা বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় সাবা আমার মেয়ের স্কুটার নিয়ে খাবার আনতে গিয়েছিল। ফেরার পরেই ওর মোবাইলে ফোন আসে। তার পরেই ও ফের বেরিয়ে যায়। সাবা বলেছিল, ওয়াসিম বিল্ডার বলে এক জন ফোন করেছেন। তাঁর কাছে যাচ্ছে।” রেশমার দাবি, সাবা কখন কোথায় যাচ্ছেন, কবে ফিরছেন, কোনও ঠিক ছিল না। বেরিয়ে গিয়ে ক’দিন পরে ফিরেছেন, এমনও ঘটেছে। জিজ্ঞাসা করলে জানাতেন, দিঘায় বা কাকদ্বীপে গিয়েছিলেন। তাই বুধবার রাতে না ফেরায় তিনি অবাক হননি।
এ দিকে, ‘ওয়াসিম বিল্ডার’ ওরফে ইমরান নামের ওই ব্যক্তি জানান, তিনি বুধবার সওয়া ৬টা নাগাদ সাবাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি বলেই দাবি ইমরানের। তাঁর আবার দাবি, বস্তাবন্দি দেহের বিষয়ে যিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সেই রোহিত ওরফে সাজিদ হোসেনই বুধবার সাবাকে ফোন করে ডেকে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সাজিদের সঙ্গে সাবার সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি ইমরানের। সাজিদের বাড়ির ফুটপাত থেকেই উদ্ধার হয়েছে সাবার দেহ। ওই তরুণীর খুনে কারা জড়িত, তা জানতে সাজিদ ও ইমরানকে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। এ দিন সাজিদের বাড়িতে গেলে জানা যায়, সেখানে কেউ নেই। বুধবার সন্ধ্যায় সাজিদের স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়েছেন।
এ দিকে, সাবার পরিজনদের অভিযোগ, রেশমা ও তাঁর মেয়ে মাদকের কারবারে যুক্ত। সেই সূত্রে সাবাও জড়িয়ে পড়েছিলেন ওই ব্যবসায়। নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে রেশমার দাবি, মেয়ের বন্ধু, থাকার জায়গা নেই শুনেই আশ্রয় দিয়েছিলেন সাবাকে। কিন্তু সাবা টাকা কোথায় পেতেন? রেশমার দাবি, কাকিমার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। কাকিমা অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি টাকা দেননি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy