খোঁজ: ‘ঘর কা পতা’ ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র।
সংঘর্ষের দিনে থমথমে শ্রীনগরের রাস্তা। রায়নাওয়াড়ির অলিগলিতে ক্যামেরা ঘাড়ে করে নিজেদের ছোটবেলার বাড়িটা খুঁজতে বেরিয়েছেন দুই বোন— ঊর্বশী ও মধুলিকা জালালি। দেওয়ালে লেখা ‘গো ইন্ডিয়া গো’! কিন্তু তিন দশক আগে ভূস্বর্গের ভুবন থেকে উৎখাত হওয়া পরিবারের দুই মেয়েকে পেয়ে আপ্লুত বুজুর্গরা।
বড় বোন চিনতে পারছেন তাঁর বন্ধু রুকসানার বাড়ি। কোনও পার্বণে হলুদ ভাত চাখার স্মৃতি উথলে উঠছে। ঊর্বশীর চোখে জল দেখে অচেনা পথচারী বলেন, আমি তোমার ভাই! তিন দশক আগের বাড়িটা পোড়ানো হলেও অটুট জন্ম শিকড়! দু’বোনের বাবা প্রাণনাথ জালালির মৃত্যুসংবাদ শুনে ডুকরে উঠছেন গুলাম চাচা! চাচি দু’বোনকে জড়িয়ে ধরছেন— ‘প্রতিবেশী নন, তোদের বাবা আমার ভাই ছিলেন!’ চাচা বলেন, ‘এ বাড়ি তোদের, যখন ইচ্ছে আসবি!’
জঙ্গি উপদ্রবের জেরে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ভূস্বর্গ ত্যাগের তিন দশক পরের এই অভিজ্ঞতা ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন মধ্য তিরিশের মধুলিকা। ইতিহাসের ক্ষত ঢাকার প্রশ্ন নেই। তবে তাঁদের গল্প ভাঙিয়ে নানা অভিসন্ধি হাসিল করার চেষ্টাটা ভালই বোঝেন মুম্বইবাসী এই পণ্ডিতকন্যা। মধুলিকার প্রথম স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘ঘর কা পতা’ রবিবার উত্তম মঞ্চে ক্যালকাটা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখবে কলকাতা। ‘কাশ্মীর ফাইলস’-এর ভিন্ন মেরুতে যা অন্য সুরের ছোঁয়াচ। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে উৎসবে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের ৩৮টি ছবি দেখা যাবে।
‘‘সিনেমা হলে, ওটিটি-তে দেখা যায় না, এমন সিনেমাই আমরা দেখাই! কাশ্মীরি পণ্ডিত মেয়ে মধুলিকার নিজের পরিবার ও উপত্যকার সম্পর্কের ছবিটিও ভীষণ প্রাসঙ্গিক”— বলছিলেন উৎসবের অন্যতম আয়োজক কস্তুরী বসু। মধুলিকার ছবি দেখানোর শেষে এই উপমহাদেশে বিভাজনের রাজনীতি ও তার মোকাবিলা নিয়ে আলোচনাও হবে। তথ্যচিত্রে কাশ্মীর-সমস্যা মেলে ধরায় সক্রিয় কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিচালক সঞ্জয় কাকও ‘ঘর কা পতা’ দেখে মুগ্ধ। তাঁর কথায়, “আজকের ভারতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে স্রেফ এক ধাঁচের আখ্যানই প্রাণপণে প্রচার করা হচ্ছে। সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যের কথা বলার জন্য মূল ধারার ছবি ‘শিকারা’ও দক্ষিণপন্থীদের চক্ষুশূল। এখন ‘কাশ্মীর ফাইলস’ দিয়ে সার্বিক ভাবে কাশ্মীরি মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে।”
ভূস্বর্গ ছাড়ার আতঙ্কের দিনগুলি মনে নেই তখন শিশু মধুলিকার। কিন্তু তাঁর দুই দিদির মনে আজও বিভীষিকার ছাপ। এর বহু বছর বাদে ২০১৪ সালে বাবার সঙ্গে প্রথম বার উপত্যকায় ফেরেন মধুলিকা। কিন্তু বাবা পুরনো বাড়ি দেখতে যেতে রাজি হননি। বাবার মৃত্যুর পরে সেই বাড়ি খুঁজতেই দিদি ঊর্বশীর সঙ্গে মধুলিকার শ্রীনগর-যাত্রা। এখন বছর বছর কাশ্মীরে যান তিনি। পড়শি গুলাম চাচাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগ। মধুলিকা বলছেন, “কাশ্মীরের সত্যির মধ্যে অনেক পরত। কোনও সরকারই পণ্ডিতদের সুবিচার দিতে কিচ্ছু করেনি। ৩৭০ ধারা রদ করার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। এ সব না-বুঝেই ‘কাশ্মীর ফাইলস’ দেখে কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন। আমাদের যন্ত্রণা তাতে কমে না।”
পরিবারে বিয়ের পুরনো ভিডিয়ো, ছবির অ্যালবামের ছেঁড়া-ছেঁড়া স্মৃতি আর বর্তমানের খোঁজে ফিল্মি আঙ্গিকে উঠে আসছে শিকড়কে ভালবাসার যন্ত্রণা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পূর্ব বাংলায় নির্যাতিতাদের কাহিনি ‘হোয়াই নট’, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান নিয়ে ‘আ বিড ফর বেঙ্গল’ ইত্যাদি ছবিও দেখানো হবে আসরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy