আদালতে ধৃত অনুপম ও কাবেরী ভট্টাচার্য। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
নিজেদের সন্তানের খাতার পাতা ছিঁড়ে তাতেই লিখিয়েছিলেন ‘সুইসাইড নোট’। নিজেদের নয়, মায়ের!
বেহালার পর্ণশ্রীতে বৃদ্ধার মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনই জানাচ্ছে পুলিশ। শনিবার ওই এলাকায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বৃদ্ধা শিপ্রা ভট্টাচার্যের দেহ। প্রাথমিক ভাবে সেটি আত্মহত্যাই ভেবেছিল পুলিশও। তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যার যুক্তি সাজিয়েছিলেন শিপ্রাদেবীর মেয়ে-জামাই। কিন্তু মেয়ে-জামাইয়ের ‘সাজানো’ আত্মহত্যার তত্ত্ব ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হয়। তাতে মৃতার দেহে শ্বাসরোধ করার চিহ্ন মেলে।
শনিবার বিকেলে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে রাতেই আটক করা হয় মৃতার মেয়ে ও জামাইকে। দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পরে জামাই অনুপম ভট্টাচার্য ও মেয়ে কাবেরী ভট্টাচার্যকে রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা স্বীকার করেছেন, সম্পত্তির লোভে তাঁরাই বৃদ্ধাকে খুন করেছেন। তখনই অনুপম জানান, নিজের ছেলের খাতার পাতা ছিঁড়ে তাতে অন্যকে দিয়ে সুইসাইড নোট লেখানো হয়েছিল। রবিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, পর্ণশ্রী থানা এলাকার ফকির পাড়া রোডের ওই দোতলা বাড়ির একতলায় থাকতেন শিপ্রাদেবী। দোতলায় থাকতেন অনুপম ও কাবেরী। মৃতার স্বামী, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বিমান ভট্টাচার্য বছর দু’য়েক আগে মারা যান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর পনেরো আগে শিপ্রাদেবীর একমাত্র কন্যা কাবেরীর সঙ্গে বিয়ে হয় বাগুইআটির বাসিন্দা অনুপমের। অনুপম একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। বছর কয়েক আগে তাঁর চাকরি চলে যায়। স্থানীয়েরা জানান, গত আট বছর ধরে পর্ণশ্রীর বাড়িতেই থাকেন অনুপম-কাবেরী। তাঁদের চার বছরের একটি ছেলে আছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, কাবেরী ও অনুপমের স্থায়ী ভাবে ওই বাড়িতে বসবাস পছন্দ ছিল না বিমানবাবুর। তিনি থাকতে এ নিয়ে জামাইয়ের সঙ্গে কয়েক বার ঝামেলাও হয়। বিমানবাবুর মৃত্যুর পরে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে শিপ্রাদেবীর সম্পর্ক আরও খারাপ হতে থাকে। মাস কয়েক আগে বৃদ্ধাকে তাঁর জামাই মারধরও করেন বলে অভিযোগ। তদন্তকারীরা জানান, নিজের কোনও কাজ না থাকায় শ্বশুরবা়ড়ির সম্পত্তি বিক্রি করার দিকে নজর ছিল অনুপমের। অভিযোগ, এই কাজে স্বামীকে ইন্ধন দিয়েছেন কাবেরীও।
এ দিকে, বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় মেয়ে-জামাইয়ের যোগ থাকার ইঙ্গিতে রীতিমতো বিস্মিত এবং চিন্তিত মনোবিদরাও। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘বস্তুতান্ত্রিক মানসিকতা ও তাৎক্ষণিক লোভ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। যার পরিণাম এমন খুন। সামাজিক প্রতিফলন কী হতে পারে, তা-ও মাথায় না রেখে কেবল নিজের ইচ্ছে মেটাতেই এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy