দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে স্টেশনে রয়েছে এমন চারটে চূড়া
উত্তর শহরতলির নোয়াপাড়া ছাড়িয়ে দক্ষিণেশ্বরের উদ্দেশে প্রথম বার মেট্রোর চাকা গড়াবে বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর। প্রায় ৪.১ কিলোমিটার ওই অংশে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হবে ট্রেন চলাচল। নোয়াপাড়ার পর মেট্রোর এই সম্প্রসারিত অংশে রয়েছে এক জোড়া স্টেশন, বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর।
এ বারের কালীপুজোতেই এই লাইনে পরিষেবা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের মধ্যে হুহু করে এগিয়েছে লাইন পাতা, স্টেশন সাজানোর কাজ। কিন্তু আমদানি সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের গেরোয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সময় মতো জার্মানি থেকে এসে পৌঁছয়নি। তাতেই আগের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সম্প্রতি ট্রেন প্রোটেকশন ওয়ার্নিং সিস্টেম (টিপিডব্লিউএস)-এর সেই সরঞ্জাম বসানো শেষ হয়েছে। বাকি প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যেতেই এ বার হচ্ছে ট্রায়াল রান। মেট্রোর পরীক্ষামূলক দৌড়ের আগে কতটা তৈরি ওই দুই স্টেশন?
বরাহনগর
এটাই কলকাতা মেট্রোর সব চেয়ে উঁচু স্টেশন। উচ্চতা ৫৫ ফুটের কিছু বেশি। মানে প্রায় ৫ তলা বাড়ির সমান। শিয়ালদহ উত্তর শাখার বরাহনগর রোড স্টেশনের যে টিকিট কাউন্টার, তার গা ঘেঁষে ২৮০ মিটার লম্বা নতুন রাস্তা পৌঁছে গিয়েছে প্ল্যাটফর্মের দরজা পর্যন্ত। রাস্তার বাঁ দিকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্টগামী অংশ আর ডান দিকে শিয়ালদহ শাখার লাইন। মেট্রো চালু হলে ছোট গাড়ি চলতে পারে ওই রাস্তায়।
ভিড় সামলাতে বরাহনগর স্টেশনে আড়াআড়ি টিকিট কাউন্টার
স্টেশনের রং গেরুয়া। ঢুকতেই ডান হাতে টিকিট কাউন্টার। এগুলো আর পাঁচটা টিকিট কাউন্টারের মতো নয়। অল্প জায়গায় লম্বা লাইন সামলাতে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে। তিনতলা স্টেশনটার দোতলায় ধুধু করছে জায়গা। ফুটবল মাঠের সমান মস্ত হলঘর। তিনতলায় প্ল্যাটফর্ম। স্টেশনের পিছন দিকেও টিকিট কাউন্টার রয়েছে। ভবিষ্যতে বেলঘরিয়া এক্সেপ্রেসওয়ে দিকের এন্ট্রি গেট চালু করা হলে তা খুলে দেওয়া হবে বলে মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে।
বরাহনগর স্টেশন ছাড়িয়ে ক্রসওভার, ব্যারাকপুরগামী লাইনের কথা ভেবে তৈরি
দক্ষিণেশ্বর
রেলের টিকিট কাউন্টারের পাশ দিয়েই দক্ষিণেশ্বর মেট্রোয় ঢোকার রাস্তা। হালকা হলুদ রঙের এই স্টেশনের দু’পাশের চারটে চূড়া দক্ষিণশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি। স্টেশনে ঢুকতেই রামকৃষ্ণ, সারদা আর স্বামী বিবেকানন্দের তিনটি বিশালাকার ফাইবারের মূর্তি। দোতলায় উঠে টিকিট কাউন্টার। এর পর তিনতলায় প্ল্যাটফর্ম। আপ লাইনের প্ল্যাটফর্ম থেকে দক্ষিণেশ্বেরের কালী মন্দির স্পষ্ট দেখা যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে পড়ন্ত বিকেলে মন্দিরের আড়ালে সূর্যাস্ত দেখা যাবে।
প্রান্তিক স্টেশন হলেও এখানে ট্রেন ঘোরার জায়গা নেই। তাই স্টেশনে ঢোকার আগে পাতা হয়েছে ক্রসওভার। যখন যে লাইন ফাঁকা থাকবে, এই ক্রসওভারের মাধ্যমে সেই লাইনে ট্রেন পাঠিয়ে তার অভিমুখ বদল করা হবে। আপ এবং ডাউন ট্রেনও সেই মতো ছাড়বে। বরাহনগর স্টেশনের শেষেও এমন একটা ক্রসওভার রয়েছে। ভবিষ্যতে ব্যারাকপুর লাইন চালু হলে এখান থেকেই সে দিকে ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হবে বলে মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে।
মেট্রোর এই অংশ তৈরির দায়িত্বে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার জানালেন, ব্রডগেজের এই মেট্রো লাইনে সর্বোচ্চ ঘণ্টা প্রতি ৯০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানো সম্ভব।
দুটো স্টেশনের দেওয়াল সাজানো হয়েছে নানান ভাস্কর্যে। সাজানো, রং করা, সব শেষ। এ বার শুধু ‘ফিনিশিং টাচ’ বাকি। কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন বুধবারের এই মহড়া কলকাতা মেট্রোর অভ্যন্তরীণ ইনস্পেকশন। এর পর কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি এই অংশে ইনস্পেকশন চালাবেন।
দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের ভিতরে
কলকাতার আদি মেট্রো পথের সম্প্রসারিত এই অংশে পরিষেবা চালু হয়ে গেলে বিটি রোডের উপর যানজট অনেকটাই কমবে বলে আশা। টালা ব্রিজ ভাঙার পর কলকাতার উত্তর শহরতলি থেকে শ্যামবাজার বা ধর্মতলা পৌঁছনো যন্ত্রণার হয়ে উঠেছে। এই লাইনে মেট্রোর চাকা গড়াতে শুরু করলে সেই যন্ত্রণাও মিটবে বলে আশা। কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বরের ভাড়া হবে ৩০ টাকা। বুধবার থেকে মহড়া শুরু হলেও এই লাইনে পরিষেবা কবে চালু হবে মেট্রোর তরফে তা এখনও জানানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy