Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

শহর তছনছ করে ১৯টি প্রাণ নিল আমপান

লালবাজার জানাচ্ছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে শহরে শুধুমাত্র পর্ণশ্রী লেকের পাশে জমা জল থেকেই পাঁচ জনের দেহ উদ্ধার হয়।

গাছ পড়ে দ্বিখণ্ডিত বাস। বৃহস্পতিবার গল্ফগ্রিনে। —নিজস্ব চিত্র

গাছ পড়ে দ্বিখণ্ডিত বাস। বৃহস্পতিবার গল্ফগ্রিনে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৫:৩০
Share: Save:

আমপানের তাণ্ডবে কলকাতায় প্রাণ গেল ১৯ জনের। সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের বলি হলেন আরও সাত জন। আমপানের দাপট বুধবার রাতেই টের পাওয়া গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেল শহরের তছনছ হওয়া চেহারা। রাস্তার উপরে সমূলে উৎপাটিত বিরাট বিরাট গাছ। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

লালবাজার জানাচ্ছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে শহরে শুধুমাত্র পর্ণশ্রী লেকের পাশে জমা জল থেকেই পাঁচ জনের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের অনুমান, ঝড় চলাকালীন বুধবার দুপুর থেকে রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ওই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পাশাপাশি পাঁচিল চাপা পড়ে, জলে ডুবে কিংবা বাড়ির টালি চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গিরিশ পার্ক থানা এলাকার মুক্তারামবাবু স্ট্রিট এবং বিবেকানন্দ রোডে দু’জনের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। মহাত্মা গাঁধী রোড এবং এক্সাইড মোড়ের কাছেও দুই যুবকের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের দাপটে একসঙ্গে পাঁচিল চাপা পড়ে মা ও ছেলের মৃত্যু হয় মুর অ্যাভিনিউয়ে। মসজিদ বাড়ি লেনে টালি চাপা পড়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়।

লালবাজার জানায়, বুধবার রাতে ভবানীপুর থানার পুলিশ শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের সামনে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান ঝড়ে উড়ে আসা কিছুর আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মানিকতলা, বেনিয়াপুকুর, তালতলা এবং ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় বুধবার রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে তিন জন বেনিয়াপুকুর এলাকারই বাসিন্দা।

কলকাতার পাশেই আগরপাড়া অঞ্চলে বুধবার রাতে ঝড়ের সময়ে একটি গাছ ভেঙে পড়ে একটি টালির চালের বাড়ির উপরে। সেখানে একাই থাকতেন বৃদ্ধা বীণাপাণি সরকার (৮৮)। গাছের চাপে বাড়ির চাল ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান বৃদ্ধা।

আমপানে বিধ্বস্ত হাওড়াও। বুধবার রাতেই সেখানকার বটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে টিনের চাল চাপা পড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। তার পরেও এ দিন পর্যন্ত ঝড়ের কারণেই নানা দুর্ঘটনায় আরও পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ঝড়ের রাতেই বাড়ি চাপা পড়ে সাঁতরাগাছিতে মৃত্যু হয় রজত পোলেন নামে এক যুবকের। বেলুড়ের হারান মুখার্জি রোডে বিকাশ সিংহ (২৮) নামে এক যুবক বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ির বাইরে শৌচকর্ম করতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার পড়ে থাকতে দেখে তিনি তা গুটিয়ে সরিয়ে রাখতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। টিকিয়াপাড়ায় জমা জলে বিদ্যুতের তার পড়ে থাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান খালেদ নিশাদ। একই ভাবে ব্যাঁটরার সানপুরে তড়িদাহত হয়ে মারা যান দুই যুবক।

হাওড়া শহরের বহু এলাকাই এ দিন গাছ পড়ে নয়তো জমা জলে বন্ধ ছিল। ডুমুরজলায় দেখা যায় রোগী নিয়েই জলে আটকে পড়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। বালি, বেলুড় ও লিলুয়া অঞ্চলের ১৬টি ওয়ার্ড অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে জানায় হাওড়া

পুরসভা। কর্তৃপক্ষ জানান, হাওড়া শহরেই ৩০০টির বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে এ দিন বিকেল পর্যন্ত বহু এলাকাই বিদ্যুৎহীন ছিল। জেলাশাসকের বাংলোর ভিতরে গাছ ভেঙে পড়ায় তাঁর যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যায়। প্রাচীন একটি অশ্বত্থ গাছ ভেঙে পড়ে হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিকের অফিসের পাঁচিল ও গেটের উপরে। ফলে সারাদিনই ওই অফিসে কেউ ঢুকতেই পারেননি।

পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাম্প জলে ডুবে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণ নির্জলা কাটাতে হয় হাওড়াকে। হাওড়া পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘সারা দিন-সারা রাত ধরে জল বার করা হয়েছে। পাম্পগুলিকে বিশেষ পদ্ধতিতে শুকনো করে জল পাম্প করে জলাধারে তুলে সরবরাহ করা হবে। শুক্রবার রাতের মধ্যে জল সরবরাহ করার চেষ্টা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Cyclone Amphan Cyclone Amphan in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy