চিন্তা বাড়িয়েছে পুজোর পৃষ্ঠপোষক বা শুভানুধ্যায়ীদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা। ফাইল ছবি
মে, জুন পর্যন্তও গমগমে পরিস্থিতি ছিল। কর্পোরেট এজেন্সিগুলির খোঁজখবর নেওয়ার ঠেলায় টগবগ করে ফুটছিলেন পুজোকর্তারা। ধরেই নেওয়া হয়েছিল, করোনা-পর্ব কাটিয়ে আবার ফিরছে জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজো। গত দু’বছরে সাত-আট লক্ষ টাকার বাজেটে নেমে যাওয়া উদ্যোক্তারাও এক লাফে বাজেট করেছিলেন ৩০ লক্ষের!
কিন্তু জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে পুজোর ‘রেট’ নিতে আসা লোকজনের ভিড় যেমন কমেছে, তেমনই কমেছে কর্পোরেট এজেন্সিগুলির ফোন আসা। প্রায় কোনও কর্পোরেট সংস্থাই কথাবার্তা পাকা করছে না। ফলে পুজোকর্তাদের কেউ চিন্তায় পড়েছেন ১৫টি গেটের সব ক’টিই এখনও ফাঁকা পড়ে থাকায়। কেউ চিন্তিত ‘টাইটেল পার্টনার’ না পাওয়ায়। তাঁদের বড় অংশেরই প্রশ্ন, তবে কি নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারির জেরেই এমনপরিস্থিতি? চিন্তা বাড়িয়েছে পুজোর পৃষ্ঠপোষক বা শুভানুধ্যায়ীদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা। আগে নগদে পৃষ্ঠপোষকতা করা ব্যক্তিরাও জানিয়ে দিচ্ছেন, সেপ্টেম্বরের শেষে ভাববেন। বড় পুজোর কর্তাদের অনেকের দাবি, এর মধ্যেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু মাঝারি ও ছোট পুজো কমিটিগুলি বুঝেই পাচ্ছে না, এখন সামাল দেওয়া হবে কোন পথে!
প্রসঙ্গত, সোমবারই নেতাজি ইন্ডোরে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি ক্লাবগুলির অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়েছেন। বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। যদিও বড় পুজোগুলির দাবি, অনুদানের ওই ৬০ হাজার টাকা তাদের বাজেটের খুব সামান্য একটি অংশ।
হিন্দুস্থান পার্কের উদ্যোক্তা সুতপা দাস বললেন, ‘‘মে-জুনেও বিজ্ঞাপনের জন্য যত ফোন আসছিল, জুলাই-অগস্টে আসছে তার অনেক কম। কী ভাবে কী করব, চিন্তায় রয়েছি।’’ সমাজসেবীর উদ্যোক্তা অরিজিৎ মৈত্র বললেন, ‘‘এ বারে প্রথম থেকেই যে কর্পোরেট উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল, তাতে ভাটা পড়েছে নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারিতে। ছোট বা মাঝারি পুজোয় একটি গেটের জন্য কর্পোরেট সংস্থা যে টাকা দেয়, বড় পুজোয় দেয় তার অনেক বেশি। ব্যক্তি নামের সঙ্গে জড়িত পুজোয় টাকা দিলে এর পরে কী হতে পারে, সেই ভয় হয়তো কাজ করছে কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে। তদন্তে তাদেরও ডাক পড়তে পারে ভেবে এ বার তারা বুঝে খরচ করার পথ নিলে ছোট ও মাঝারি পুজোগুলিকে ভুগতে হবে। গত দু’বছরে কর্পোরেট বিজ্ঞাপন তেমন আসেইনি। এ বারও একই পরিস্থিতি হলে সামনের বার অনেক পুজো হয়তো উঠেই যাবে।’’
টালা বারোয়ারির উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্যের আবার দাবি, ‘‘বড় নাম দেখে অনেকেই ভয়ে বা ভক্তিতে টাকা দেন। কিন্তু ছোট বা মাঝারি পুজোর সেই সুযোগ নেই। এখন কর্পোরেট সংস্থাও শেষ মুহূর্তে কম টাকায় রফার সুযোগ নিলে কী হবে, বলা যাচ্ছে না।’’
বাজেট ঘিরে একই রকম ধোঁয়াশার কথা জানালেন ‘বড় পুজো’ খ্যাত দেশপ্রিয় পার্কের কর্তা সুদীপ্ত কুমার বা বাগবাজারের পুজোর গৌতম নিয়োগীরা। গৌতম বললেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে কী দাঁড়াবে, বলা যাচ্ছে না। অনেক পুজোই হয়তো ভুগবে। তবে, কলকাতার পুজোর সামনে এ বার ব্যক্তি পরিচয় ছেড়ে বেরোনোর সুযোগ রয়েছে। অমুক দাদার বা তমুক মন্ত্রীর পুজো বলা হয়তো বন্ধ হবে।’’
শহরে এমন পুজোর অন্যতম চেতলা অগ্রণী, ত্রিধারা সম্মিলনী বা সুরুচি সঙ্ঘ। চেতলার পুজোকর্তা তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য না করলেও পুজো কমিটির তরফে সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘হঠাৎ কথাবার্তা থমকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের তেমন চিন্তা থাকে না। গোনাগুনতি গেট, গোনাগুনতি স্পনসর।’’ ত্রিধারার দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘এখনও যে ভাবে সব চলছে, তাতে আমি খুশি। শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, দেখাই যাক।’’ সুরুচির কর্তা স্বরূপ বিশ্বাসের আবার দাবি, ‘‘এই বাজারেও তাক লাগানো কাজ করছি। নিজস্ব কায়দায় ঘাটতি ম্যানেজ করে নিতে হয়।’’ শ্রীভূমির পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী বললেন, ‘‘আমাদের এ বার ৫০ বছর। যা-ই হোক, ভাল করতেই হবে। এগ্জ়িকিউটিভ কমিটির সদস্যদের থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, কিছু বন্ধু আছেন, যাঁরা ভাল-মন্দে পুজোর সঙ্গ ছাড়েন না।’’
মন্ত্রীর গ্রেফতারিতে যে পুজো ঘিরে সংশয় সব চেয়ে বেশি, সেই নাকতলা উদয়ন কর্তৃপক্ষেরও দাবি, গ্রেফতারি বা টাকা উদ্ধারের কোনও প্রভাব তাঁরা দেখছেন না। পুজোর সম্পাদক অঞ্জন দাসের মন্তব্য, ‘‘সমস্যা তেমন নেই। যেমন স্পনসর আসত, তেমনই আসছে। বরং আমাদের পুজো নিয়ে এ বার উৎসাহ যেন বেশি।’’ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা শাশ্বত বসুর মন্তব্য, ‘‘শুধু উৎসাহ দেখালে হবে? স্পনসরদের সঙ্গে পাকা কথা হচ্ছে কই! না আঁচালে শান্তি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy