এখন এক দমচাপা প্রতীক্ষা, স্বাভাবিকের জন্য—নিজস্ব চিত্র।
হঠাৎ কোনও আগন্তুক প্রথম বার সেই বিশাল হলঘরে ঢুকলে চমকে যাবেনই। এক বিশাল হলঘর জুড়ে টেবিলের পর টেবিল, তাকে ঘিরে চেয়ারের ঝাঁক। না, একটি টেবিলে চারটি চেয়ারের চেনা জ্যামিতি নয়, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটি টেবিলকে ঘিরে চেয়ারের বৃত্ত। আর এমন একটা গুঞ্জরণ হলঘর জুড়ে যে, তেমন কল্পনাশক্তি থাকলে কোনও মহা-মৌচাকের কথাই মনে আসবে। মনে হতে বাধ্য, কোনও কল্পবিজ্ঞান ছবির সাউন্ডট্র্যাক যেন বেজে চলেছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। যেমনটা হয়ে থাকে ভিন্ গ্রহের কোনও যান পৃথিবীপৃষ্ঠে অবতরণের সময়। ভাল করে ঠাহর করলে আগন্তুক দেখতে পাবেন, অগণিত নারী-পুরুষের কণ্ঠস্বর এই কলতানের উৎস। মনে হতে পারে, সভ্যতার শেষ সংলাপগুলো যেন লিখিত হচ্ছে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় আর সেগুলি আউড়ে চলেছেন এই হলঘরে উপস্থিত থাকা মানুষ। ‘ধূমপান নিষেধ’-এর বিজ্ঞপ্তিকে তুড়িতে উড়িয়ে সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়া উঠে আসছে এক একটা টেবিল থেকে। ইতি উতি দৌড়ে বেড়াচ্ছেন সাদা পোষাকের কিছু মানুষ, তাঁদের ডাকতে টেবিল থেকে অদ্ভুত একটা আওয়াজ ভেসে আসছে , যা চেনা মানবিক ভাষার চাইতে একেবারেই ভিন্ন। সাদা পোশাকের মানুষরা টেবিলে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন ধূমায়িত পেয়ালা। তাতে চুমুক দিয়ে আবার টেবিলের লোকেরা ফিরে যাচ্ছেন গুঞ্জরণে। একটা নিরন্তর চক্র চলছে এই কর্মকাণ্ডের। কোনও ছেদ নেই। বিরাম নেই।
না। এই দৃশ্য কোনও হলিউড পরিচালকের তোলা কোনও সাই ফাই ছবি থেকে তুলে আনা নয়। এ ছবি আমাদের একান্ত পরিচিত কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসের শনিবারের সন্ধেবেলার। এবং অবশ্যই এই ছবি অন্তত পক্ষে মাস চারেক আগেকার। সোজা কথায় বললে, কোভিড-১৯ অতিমারি সংক্রান্ত লকডাউনের আগের। কফিহাউস একটা বিশেষ ধরনের জয়েন্ট। শহরের জেনারেশন জেড-এর কাছে তার দস্তুর না-পসন্দ হতেই পারে। সেই প্রজন্মের জন্য তিলোত্তমার বিভিন্ন প্রান্তে ঝলমল করে সিসিডি, বারিস্তা বা অন্য কফি জয়েন্ট। কোথাও নিচু মোড়ায় বসে এথনিক ঘর-সজ্জার মাঝখানে বইয়ে ডুব দেওয়ার সুযোগ, তো কোথাও অঙ্গসজ্জায় সত্যজিৎ রায় জ্বলজ্বল করছেন । কলকাতা শহর গত কয়েক বছরে ব্রিস্তো-সংস্কৃতিতেও অভ্যস্ত। সাবেকি চপ-কাটলেটের গরিমা নয়, বরং ম্যাগি বা পাস্তার বৈচিত্রের পাশাপাশি নীলগিরি কফির উন্মন আনা সুবাস সেই সব অনাড়ম্বর সরাইখানায়। খিদে বা তেষ্টা মেটানোর থেকেও বড় আয়োজন আড্ডার। আবার গত কয়েক বছরে শহরের অনেক কফিখানাই চেনা আড্ডার ছক পেরিয়ে হয়ে উঠেছে কর্মস্থল। ফ্রি ওয়াইফাই। হালকা বাজনার আবহে দ্রুত আঙুল চলছে ল্যাপটপে। খুব নিচু স্বরে কেউ সেরে নিচ্ছেন দফতরি আলোচনা। ইতালিয়ান ওমলেটের স্বাদ নিতে নিতেই হয়ত এই টেবিলে চলছে কর্পোরেট মিটিং আর ঠিক তার পাশের টেবিলেই হয়তো সেই ছেলেটিকে আজ হ্যাঁ বলার জন্য অপেক্ষা করছে মেয়েটি। একটু পরেই ছেলেটি এসে ঢুকবে, কপালের বিনিবিনে ঘাম পরম মমতায় মুছিয়ে দেবে এসি-র সাহচর্য, কোল্ড কফির সুস্বাদ। দুটো সমান্তরাল ভুবনকে লালন করছে ক্যাফে নামক এক বাস্তবতা।
সাবেকি অ্যালবার্ট হলের জনারণ্যই হোক অথবা আধুনিক ক্যাফে-ব্রিস্তোর নিভৃতি, কলকাতা আর তার আড্ডা কালচার অনেকাংশেই ক্যাফে-নির্ভর। সেই পুরনো বসন্ত কেবিন বা সাঙ্গুভ্যালির আড্ডার সূত্রকে হয়তো এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবু কোথাও তো উত্তরাধিকার থেকেই যায়! রয়েছেও। সবই ঠিকঠাক। গতিমান শহর সাবেক আর সাম্প্রতিককে একসঙ্গে নিয়েই চলতে অভ্যস্ত। কোনও সংঘাত এর মধ্যে নেই। বরং ইঙ্গিত রয়েছে সহাবস্থানের। শহরের পুরনো অংশের সমান্তরালে সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের মতো নতুন অংশেও ক্যাফে সংস্কৃতির এই প্রাণময় চেহারা প্রসারিত। লকডাউনের আগে পর্যন্ত সবই মসৃণ। জীবনানন্দের ভাষায় “কেমন স্বাভাবিক! কী স্বাভাবিক!”
আরও পড়ুন: নিজের সঙ্গেই যুদ্ধে জয়ী কৃতী ছাত্রী
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস। এদিন আর সেদিন। ছবি:পিটিআই এবং শাটারস্টক।
কিন্তু লকডাউন পর্বের পরেও কি এই স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখতে পারল কলকাতা? একই ছন্দে কি ফিরে এল ক্যাফে সংস্কৃতির চাকা? প্রশ্নটা সহজ। কিন্তু উত্তর খুব সরল নয়। কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস কেবল মাত্র আড্ডাক্ষেত্র নয়। ছোট প্রকাশকদের ব্যবসা-ক্ষেত্রও বটে। লেখকদের সঙ্গে বসে নতুন বইয়ের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ব্যবসার অনেকখানি এখানে বসেই সেরে নেন অনেকে। আনলক চালু হতে খুলল অ্যালবার্ট হল। কিন্তু না, আগের চেহারায় একেবারেই নয়। কলেজ স্ট্রিট কফিহাউস খোলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গিয়েছিলেন প্রকাশক ফাল্গুনী ঘোষ। জানালেন, অনেকটাই বদল এসেছে হলের চেহারায়। বেড়েছে দুই টেবিলের মাঝখানের দূরত্ব। কমে এসেছে মেনু। চিরচেনা ওজনদার চিনেমাটির পেয়ালা-পিরিচ উধাও। বদলে কাগজের মুখঢাকা কফি-কাপ। স্ট্র লাগানো। জল পরিবেশিত হচ্ছে প্লাস্টিকের গেলাসে। তবে এক টেবিলে বহুজনসঙ্গে কোনও বাধা নেই। সেখানে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের গল্প ফুরুৎ।
শহরের অন্য প্রান্তে যাদবপুর কফিহাউসের চেহারা কিছুটা আলাদা। সেখানকার নিয়মিত আড্ডাধারী কবি প্রসূন মজুমদার জানালেন, আনলকের পরে চেনামুখ অনেকেই ফিরেছেন। কফিহাউস সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। প্রত্যেকটা সারি থেকে একটা করে টেবিল তুলে দিয়ে টেবিলগুলোর মধ্যে ফাঁক বাড়ানো হয়েছে। তবে এক-একটা টেবিল শেয়ার করার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা সংক্রান্ত কোনও বিধিনিষেধ নেই। কফিহাউসে ঢুকে পড়ার পরে মাস্ক পরা নিয়ে জোরাজুরি কেউ করছে না। সম্ভবত প্রতিদিন যাঁরা আসেন তাঁরাই এখন কফিহাউসে আসছেন এবং এতদসত্ত্বেও অনেক টেবিলই ফাঁকা থাকছে বলে কড়াকড়ি কম। মাস্ক পরে কফি খাওয়া সম্ভব নয় বলেই বোধ হয় টেবিলে বসা চার-পাঁচজনের কারও মুখে মাস্ক থাকার কথা ওঠে না। তবে বর্ষীয়ান ওয়েটার সুকুমারদা মাস্কটা গলায় হারমোনিয়ামের মতো ঝুলিয়ে রেখে স্বভাবসুলভ ভাবেই টেবিল থেকে টেবিলান্তরে কফি-সহ সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়িয়ে চলেছেন। আন্তরিকতাটা মিসিং নয়।
আরও পড়ুন: সবুজ হারানো পথেই ফের হবে বৃক্ষরোপণ
সাবেক জয়েন্টের পাশাপাশি খুলেছে আধুনিক জয়েন্টগুলোও। গলফগ্রিনের ট্রাভেলিস্তান ক্যাফে চালান পারমিতা গায়েন ও তাঁর স্বামী অরিজিৎ দত্ত। উত্তর-লকডাউন পর্বে কোনও বদল এল ? প্রশ্নের উত্তরে পারমিতা জানালেন— “আনলক ওয়ানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একরকম, আনলক টু-এর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আর এক রকম। আনলক ওয়ানের সময়ে রাত ন’টা পর্যন্ত খোলা থাকছিল ক্যাফে। আনলক টু-তে বিভিন্ন জায়গায় কনটেনমেন্ট। পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। তবে থেমে তো থাকা যায় না। সিক্সটি পারসেন্ট ক্যাপাসিটি বজায় রেখে কাজ শুরু করতে হয়েছে।” আর একটু ডিটেলও জানালেন পারমিতা, “স্বাভাবিক সময়ে ২৭ থেকে ৩০ জনকে আমরা অ্যাকোমডেট করতে পারি। সেটা ১২ থেকে ১৫-য় নামিয়ে আনতে হয়েছে। আমাদের কর্মচারী ৮-১০ জন। এখন কাজ করছেন জনা পাঁচেক। কাস্টমারের সংখ্যাটাও কমেছে। খরচটা বিয়ার করতে হচ্ছে। ক্লিনিংয়ের জন্য খরচ বেড়েছে। বড় জয়েন্টে যা সম্ভব, তা এখানে সম্ভব নয়। দুম করে খাবারের দাম তো বাড়ানো যায় না। তবে আশার কথা, এই মুহূর্তে যা গেস্ট ক্যাপাসিটি, তা পূর্ণ হচ্ছে। উইক এন্ডে অনেককে ফিরেও যেতে হচ্ছে জায়গা না পেয়ে। তবে রেগুলার গেস্টের সংখ্যা কমেছে।”
বাঘা যতীনের ক্যাফে ড্রিফটার-এর মালিক রাজরূপ ভাদুড়ি জানালেন, “পোস্ট লকডাউন পর্বে কিছু প্রিকশন তো নিতেই হয়েছে। গ্যাদারিং কমানো, মাস্ক-স্যানিটাইজার ইত্যাদি বিষয়কে আবশ্যিক করা—এই সব বদল তো আনতেই হয়েছে। তবে ক্রাউডফল ঘটেছে। লকডাউনে স্টে অ্যাট হোম অ্যান্ড ইটিং অ্যাট হোম— মানুষের অ্যাটিটিউডে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। অনিশ্চয়তার ভয় তাড়া করছে প্রায় সকলকেই। অতিরিক্ত ব্যয়ের দিকে অনেকেই ঝুঁকছেন না।” রেগুলার ক্রাউডও কি কমেছে? রাজদীপ জানাচ্ছেন, “হ্যাঁ। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনেকেই মিটিং করতেন, লাঞ্চ মিটিং হতো। সেই সব এখন আর হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইন মিটিং হচ্ছে। তবে অনেকেই আসছেন আড্ডা দিচ্ছেন। বুঝতে পারছি, তাঁদের আর বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছে না। সব মিলিয়ে অর্ডার কমেছে। অনেক ক্যাফে ক্রাউড ফান্ডিং করে ব্যবসা চালু রাখার চেষ্টা করছেন। আমারা সেই কাজটা করছি না। এ ভাবে কতটা বাধা ডিঙোনো যাবে জানা নেই। আমাদেরও কর্মচারী কমাতে হয়েছে।”
রেগুলার ক্যাফে গোয়ারদের মধ্যে একটা লক্ষণীয় অংশ ‘ডব্লিউএফসি’-তে অভ্যস্ত। ওয়ার্ক ফ্রম ক্যাফে। কর্পোরেট জগতের নয়া লব্জ। অফিসের দমবন্ধ পরিবেশের বাইরে বেরিয়ে ক্যাফের উষ্ণতায় কাজ। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের নির্দিষ্ট কোনও অফিসই নেই। ক্যাফের বিল পে করে কোম্পানি। ক্যাফেতেই সারাদিন ল্যাপটপ আর ফোনে সেরে নেওয়া কাজ। সান্ত্বনা ভট্টাচার্য, সেক্টর ফাইভের একটি নামী তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী জানালেন, “সাধারণ সময়ে সপ্তাহে এক বার সেক্টর ফাইভের কোনও ক্যাফেতে আমাদের লাঞ্চ মিটিং বা ইভনিং মিটিং হতোই। আমাদের মতো অনেক অফিসের কর্মীরাই নিয়মিত হাজির হতেন ক্যাফেতে। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে আমরা বাড়ি থেকে কাজ করছি। অফিস প্রায় যাই-ই না। ফলে যা মিটিং সবই অনলাইনে। ক্যাফে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” অয়ন দাশগুপ্ত সেক্টর ফাইভেরই অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি বলছেন, “অফিসের মিটিং তো হতোই। তার বাইরেও, আমরা বন্ধুরা মিলেও প্রায়ই আশেপাশের ক্যাফেতে আড্ডা মারতে যেতাম। এখন সে সবের প্রশ্ন নেই। সবাই প্রায় বাড়ি থেকে কাজ করছে। আর তা না করলেও, চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব কম বাইরে থাকার। ” অয়ন আরও বললেন, “আমার পরিচিত কয়েকটা ক্যাফে শুনলাম বন্ধ রাখছে। লোকজন নেই। লোকসান হচ্ছে। ফলে বন্ধ। কাজ নেই ক্যাফের কর্মীদেরও। কয়েকটা ক্যাফে লকডাউনের সময় দু’তিন মাসের বেতন দিয়েছিল। এখন আর দিতে পারছে না। কর্মী ছাঁটাইও করা হচ্ছে।”
কী কাজ করছে রেগুলার ক্যাফে গোয়ারদের মনে? সিরিয়াল অভিনেত্রী রূপান্বিতা দাস খুলেই বললেন, “শুটিং সেরে ক্যাফেতে গিয়ে আড্ডা মারা আমার অনেক দিনের অভ্যাস। দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটা ক্যাফে আমার খুব প্রিয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেখানে আড্ডা মারতে যেতাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন ভয়ে যাই না। সত্যি প্রচণ্ড ভয় লাগছে। গত চার মাসে এক বার মাত্র ক্যাফেতে গিয়েছি।”
শূন্য চেয়ারগুলো ভরবে কবে? ছবি: টুইটার থেকে
আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশে এক দিনে ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত
দেশের একটি নামী ক্যাফে চেনের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের আউটলেটের ম্যানেজার বলেন, “চার মাস তো ক্যাফে বন্ধ ছিল। তার পর ১০ জুন থেকে খুলেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে লোকজন একেবারেই নেই। কর্মীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। আমরা বেঙ্গালুরুতে প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট পাঠাচ্ছি।” তাঁর কথায় ইঙ্গিত, এই ভাবে চললে কলকাতায় এই ক্যাফে চেনের অনেক আউটলেট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ ক্যাফে খোলা রাখার যে খরচ, সেই খরচই উঠছে না।
আবার কোনও একটা কল্পবিজ্ঞান সিনেমার কথা মাথায় আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তেই। ক্রমশ যেন ঘনিয়ে আসছে একটা মহাপ্রলয়। আস্তে আস্তে বিষণ্ণতার একটা বাষ্প ছেয়ে যাচ্ছে শহরে। নগরালির হৃৎস্পন্দন যে সব জায়গায় সব থেকে বেশি বোঝা যেত, সেই জায়গায় হানা দিচ্ছে ভয়, কর্মহীনতার আশঙ্কা, সর্বোপরি যে কোনও সময়ে মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক। ক্যাফে তাদের লোকবল কমাচ্ছে। আবার অনেক সেক্টরেই চলছে কর্মী সঙ্কোচ। ফলে যে তরুণটি সন্ধে সাতটায় অফিস সেরে ঠান্ডা ঘরে ঢুকে ক্যাপুচিনোয় চুমুক দিতে দিতে কার লোন নেবে কিনা ভাবছিল, সে অনুপস্থিত। যে তরুণীটি চাকরি কনফার্ম হলে নতুন একটা বুককেস অর্ডার করবে ভাবছিল, সে অফিস শেষ হতেই মাস্কে মুখ ঢেকে তড়িঘড়ি বাড়ির পথ ধরে। স্যানিটাইজারের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে অফিসের করিডর। মাস্ক আর ফেসশিল্ডের আড়ালে ঝাপসা হয়ে ওঠে দৃষ্টি। ক্রমশই কি কমে আসছে সময়? আবার সব কিছু আগের মতো হবে কি? মিডিয়া জানাচ্ছে— অভ্যস্ত হয়ে ওঠ নিউ নর্ম্যাল-এ। কিন্তু এত সহজ যে বিষয়টা নয়, তা সকলেই জানি। ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ ছবির সেই জাদুকর বরফিকে মনে পড়ছে, যে একটা ধোঁয়া ছড়িয়ে পুরো একটা রাজ্যের মানুষকে বোবা করে রেখেছিল। আর একটা অ্যান্টিডোট পুড়িয়ে ধোঁয়া দিতেই আবার কথা বলে উঠল রাজ্যের মানুষরা। তেমন কোনও জাদু কি সম্ভব নয়? রাতারাতি বদলে যাক বাস্তবতা। নিউ নর্ম্যাল থেকে এক লহমায় ফিরে আসুক নর্ম্যাল। কলেজ স্ট্রিট থেকে সেক্টর ফাইভ ছেয়ে যাক কড়া কফির আন্তরিক গন্ধে। আড্ডার উষ্ণতা তাড়িয়ে দিক মৃত্যুর হিমগম্ভীর ছায়াকে। হবে কি এই সব? ডিসটোপিয়ার এই ছবি যেন স্থায়ী না হয়। জাদু যে বাস্তব নয়, তা আমরা জানি। তবু দিন কাটে আশায় আশায়। এক দিন হয়ত মাস্ক আর ফেসশিল্ডের আবরণ থেকে জেগে উঠবে সভ্যতা। কমে আসবে ক্যাফেগুলোয় টেবিলের ব্যবধান। কর্পোরেট মিটিংয়ের সমান্তরালে চলবে মন দেওয়া নেওয়ার পর্ব, নতুন কবিতা পড়ে শোনাবে তরুণ কবিটি। ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে জ্বলন্ত চুমুক দিতে দিতে শহর শুনবে সেই কবিতা। শহর সাক্ষী থাকবে মন দেওয়া নেওয়ার। শহর করমর্দনের হাত বাড়িয়ে দেবে সদ্য কন্ট্র্যাক্ট আদায় করা লাজুক একজিউটিভটির দিকে। দেবেই। দিতে হবেই। এত সহজে হেরে গেলে চলবে না।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy