অনিয়ম: সত্যবালা আইডি হাসপাতালে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত পিপিই। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কোভিড বর্জ্য নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই হাসপাতালগুলি থেকে ওই বর্জ্য সংগ্রহের কাজের খরচের হার (রেট) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও তা নষ্টের জন্য নিযুক্ত সংস্থা ওই বর্ধিত হারেই কাজ করবে। গত এপ্রিল থেকে নতুন হার কার্যকর হয়েছে বলে ধরা হবে। দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ও নষ্টের খরচ বেড়েছে। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই হার বৃদ্ধি হয়েছে।
যদিও কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেই যেখানে ‘ফাঁক’, সেখানে খরচের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন, প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই সব জায়গা থেকে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ ঠিকঠাক হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই অন্য বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের বিপদও থাকছে। সেখানে বর্ধিত হারের অর্থ কী?
তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, কোভিড বর্জ্য নিয়ে শুরু থেকেই সচেতন পদক্ষেপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে কলকাতা-সহ রাজ্যের কোভিড হাসপাতালগুলি থেকে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ, তার প্রক্রিয়াকরণ ও নষ্টের জন্য ছ’টি ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি’ (সিবিডব্লিউটিএফ) কাজ করছে। সতর্কতার সঙ্গে সেই কাজ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিদিন কোভিড হাসপাতালগুলির কোভিড বর্জ্যের পরিমাণও যথেষ্ট। তাই বর্জ্য সংগ্রহ সুষ্ঠু ভাবে সচল রাখতে খরচের হার বাড়ানোর বিষয়টি দফতরের বিবেচনায় ছিল।
আরও পড়ুন: মাটি ভাল, তাই নির্বিঘ্নে উড়ালপুল পেরোল ‘উর্বী’
বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গত অগস্টে স্বাস্থ্য দফতর আট সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করেছিল। কমিটির সিদ্ধান্ত মতোই সিবিডব্লিউটিএফ-এর কাজের জন্য সম্প্রতি ওই হার বৃদ্ধি হয়েছে। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘পরিবর্তিত খরচের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়ে গিয়েছে। সংস্থাগুলি নতুন হারেই টাকা পাবে। তবে এটি শুধু কোভিড হাসপাতালগুলির জন্য প্রযোজ্য।’’
আরও পড়ুন: কোভিড বর্জ্য সংগ্রহের বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যত দিন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এপিডেমিক ডিজ়িজ়েস, কোভিড ১৯ রেগুলেশনস, ২০২০’ অনুযায়ী এই অতিমারি অবস্থা থাকবে, তত দিন এই নতুন হার বহাল থাকবে। আগামী দিনে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হলে সে ক্ষেত্রেও খরচের এই বর্ধিত হার থাকবে। এর আগে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দু’টি সিবিডব্লিউটিএফ-এর টাকা বকেয়া পড়েছিল। কোভিড-বর্জ্য সরাতে যাতে দেরি না হয়, তখনও স্বাস্থ্য দফতর সেই টাকা জরুরি ভিত্তিতে মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রা শুরু ফুলবাগান স্টেশন পর্যন্ত
প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে কোভিড বর্জ্য নিয়ে একটি মামলার প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেখানে সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, জুন পর্যন্ত কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও পুর এলাকা থেকে মোট ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৪৭ কিলোগ্রাম কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭১৫ কিলোগ্রাম কোভিড বর্জ্য এসেছে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে। বাকি ৮৩২ কিলোগ্রাম বর্জ্য এসেছে পুর এলাকা থেকে।
কোভিড বর্জ্যের পরিমাণ এত কম কেন, তখন সেই প্রশ্ন তোলেন পরিবেশকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এমনিতেই কোভিড বর্জ্য ঠিকঠাক সংগ্রহ করা হচ্ছে না। তা যদি হত, তা হলে বর্জ্যের পরিমাণ এত কম থাকত না। কাজই যেখানে ঠিক মতো হচ্ছে না, সেখানে খরচের বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই।’’ আর এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘কোভিড বর্জ্যের বিপদ নিয়ে সরকারের তরফে সার্বিক সচেতনতার প্রচারই নেই। শুধু খরচ বাড়ালেই সমস্যা মিটবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy