Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Janata Curfew

‘জনতা কার্ফু’ কেমন হবে, জল্পনা

অনেকেরই প্রশ্ন, ‘জনতা কার্ফু’ কি এক দিনই থাকবে, না কি দীর্ঘায়িত হবে?

সারসার: দাঁড়িয়ে অটো-ট্যাক্সি, নেই যাত্রী। করোনা-আতঙ্কের জেরে এ ভাবেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরও। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সারসার: দাঁড়িয়ে অটো-ট্যাক্সি, নেই যাত্রী। করোনা-আতঙ্কের জেরে এ ভাবেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরও। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৫:২৭
Share: Save:

আজ, রবিবার ‘জনতা কার্ফু’র দিন সকাল ৭টা থেকে ঠিক কী হতে চলেছে দেশে? এই প্রশ্নই শনিবার দিনভর ঘুরপাক খেল শহর জুড়ে। এই মুহূর্তে যার স্পষ্ট উত্তর নেই কারও কাছেই। নাগরিকদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানানোর এমন নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে তো বটেই, স্বাধীন ভারতে আদৌ আছে কি না, মনে করতে পারছেন না কেউ। যার জেরে অনেকেই দিনভর ছুটে বেড়ালেন রবিবার প্রয়োজন পড়তে পারে, এমন সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রাখতে। কেউ আবার প্রয়োজনীয় সংস্থাগুলি খোলা থাকবে কি না, সেই খোঁজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অনেকেরই প্রশ্ন, ‘জনতা কার্ফু’ কি এক দিনই থাকবে, না কি দীর্ঘায়িত হবে? কারণ, এ দিনই রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শহরের সমস্ত রেস্তরাঁ, পানশালা, হুকা বার, পাব, নাইট ক্লাব, মাসাজ পার্লার ও বিনোদন পার্ক রবিবার সকাল ছ’টা থেকে বন্ধ থাকবে। আগামী কিছু দিন এ ভাবেই চলার সম্ভাবনা যে প্রবল, তা মেনে নিয়ে অনেকেই বলছেন, ‘জনতা কার্ফু’র নির্দেশিকা এক দিনের জন্য হলেও মানুষই বাইরে বেরোনো এবং জমায়েত স্বেচ্ছায় এড়িয়ে চলছেন। আপাতত বিনোদনের থেকে সুরক্ষাতেই বেশি নজর সকলের।

এই সচেতনতার চিত্রই এ দিন দেখা গিয়েছে শহরের নানা জায়গায়। সকালের দিকে গণ পরিবহণ এবং বাজারগুলিতে কিছুটা ভিড় চোখে পড়লেও বেলা বাড়তেই তা উধাও। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউ মার্কেট-সহ একাধিক বড় বাজার। বেসরকারি সংস্থার একাধিক অফিস রয়েছে, এমন বেশ কিছু পাড়াও প্রায় জনশূন্য। সুনসান নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মোড় যেন রবিবার কী হতে চলেছে, তারই ‘ট্রেলার’ দেখিয়েছে এ দিন।

মেট্রোয় কবি সুভাষগামী একটি রেকে এ দিন দুপুরে মহিলাদের বসার জায়গায় ভিড় সে ভাবে ছিল না। এক দিকে সাত জনের আসনে বসে পাঁচ জন। তাঁদের মুখোমুখি তিন জন। কেউই দাঁড়িয়ে নেই। দু’জন ছাড়া সকলেই মাস্ক পরে। শোভাবাজার থেকে ওঠা মাস্কহীন এক মহিলা পাঁচ জন যে দিকে বসে, সে দিকে এগোতেই আঙুল দিয়ে উল্টো দিকে যাওয়ার জন্য বলে দিলেন বাকিরা। নির্দেশ স্পষ্ট, ফাঁকা জায়গা থাকতেও এই পরিস্থিতিতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসার কী আছে? চাঁদনি চক স্টেশনের বাইরেই এ দিন আবার মাস্ক নিয়ে বসেছেন দুই যুবক। দাম জানতে চেয়ে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘এগুলোয় কাজ হয়?’’ এর পরেই তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘যাক, দিয়ে দিন একটা। অন্তত নিজের কাছে তো পরিষ্কার থাকব যে, ভাইরাস আটকানোর একটা চেষ্টা করেছিলাম!’’

একই চেষ্টা যোধপুর পার্কের একটি দৈনন্দিন সামগ্রীর বড় বিপণিতে। এ দিন সকালে সেখানে আবার দুর্গাপুজোর মতো ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। কেনাকাটা সেরে এক জন করে ক্রেতা বেরোলে তবেই অপেক্ষায় থাকা এক জন করে ঢুকতে পারছিলেন। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার মোড়ে আবার দোকানের সামনেই পিস বোর্ডের উপরে হাতে লেখা পোস্টার। তাতে লেখা, ‘আজ কিনলে এক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে। কাল কিনলে বাড়িতে থেকে!’ দোকান-মালিক শরৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘নোটবন্দিতে যা খেল দেখিয়েছিলেন মোদী, তাতে একেবারেই তাঁর সমর্থক নই। কিন্তু আমি বোকাও নই যে বুঝব না, কীসে নিজের ভাল হয়। কাল বাড়িতেই থাকছি।’’

‘গণ বাড়ি থাকা’ নিয়ে আবার প্রবল চিন্তায় শহরের একাধিক রুটের অটো এবং ট্যাক্সিচালকেরা। প্রায় জনশূন্য উল্টোডাঙায় মাঝরাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক অটোচালক এ দিন বলতে শুরু করলেন, ‘‘এই গাড়ি আমার নিজের নয়। ভাড়ায় নিয়ে চালাই। প্রতিদিন মালিককে চারশো টাকা দিতে হয়। আমাদের ভাষায় ওকেই বলে ‘বাতচিত’। পরশু বাতচিতের টাকা দিতে পারিনি, কালও না। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত মাত্র একটা ট্রিপ হয়েছে। আজ আর আগামী কালও না দিতে পারলে কী হবে জানি না।’’ শেষ ট্রেনে শোভাবাজার মেট্রোয় নামা এক যাত্রীকে আবার চেঁচাতে চেঁচাতে হাঁটতে দেখা গেল। বার দু’য়েক তিনি বললেন, ‘‘ভাইরাস, ভাইরাস! সব বন্ধ!’’ এর পরে তাঁর চিৎকার, ‘‘রাজার ইচ্ছেই হল তাঁর নির্দেশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Janata Curfew Coronavirus Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy