Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া আর কোনও গতি নেই

চিন, দক্ষিণ কোরিয়া বা ইতালি— সবার অভিজ্ঞতা থেকেই আমাদের শেখার আছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২০ ০৯:০০
Share: Save:

এ কোনও ভয়াবহ জৈব রাসায়নিক হামলার চক্রান্ত কি না, পরের কথা। কিন্তু এটা সত্যিই যে এমন বিপর্যয় গত এক শতকে দুনিয়া দেখেনি।

আমাদের মানবকোষ সমূহের জন্যও এমন ছোঁয়াচে শত্রু পুরোপুরি অচেনা, যা তাকে এতটা ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশে হাজারো ভাইরাসের ছড়াছড়ি। সে সব বিভিন্ন রোগ ঘটালেও শরীর তাতে ধাতস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই অচেনা শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ে মানুষ একেবারেই অপ্রস্তুত। খুব কম ওষুধই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। সব থেকে যেটা ভয়ঙ্কর, করোনা জ্বর কোনও গোষ্ঠীর ৩০-৪০ শতাংশ জনসংখ্যায় ছড়াতে পারে। এ যাবৎ কোনও ভাইরাল সংক্রমণের এমন ভয়াবহতা দেখা যায়নি। চেনা ইনফ্লুয়েঞ্জা টেনেটুনে ৫ শতাংশ জনসংখ্যায় ছড়ায়। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ সব থেকে জরুরি।

চিন, দক্ষিণ কোরিয়া বা ইতালি— সবার অভিজ্ঞতা থেকেই আমাদের শেখার আছে। চিনের তথ্য নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। ওদের হাসপাতালগুলির দশ দিনের ভিডিয়ো একই সঙ্গে বীরত্ব এবং বোকামি মনে হতে পারে। কিন্তু বিপুল প্রাণহানি এবং খরচের বিনিময়ে দু’মাসের যুদ্ধে গোটা বিশ্বকে ওরা অনেক কিছু শেখাল। উহানের অভিজ্ঞতা এই রোগটির চরিত্র এবং দাওয়াই সম্বন্ধে একটা আভাস দিয়েছে। এর প্রতিষেধক তৈরির জন্য পর্যাপ্ত নমুনাও সরবরাহ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়াও করোনা-হামলা ভালই সামলেছে। ওরা চেষ্টা করেছিল, যত দ্রুত সম্ভব সব থেকে বেশি লোকের শরীরে ভাইরাস পরীক্ষা করাতে। প্রয়োজনে তাঁদের সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করতে। ওদের ভাইরাস পরীক্ষার কিটের কার্যকারিতার মাত্রা নিয়ে কিছু ধন্দ আছে, তবে এই সক্রিয়তার তুলনা নেই।

অন্য দেশগুলি, যেখানে এই ভাইরাস ক্রমশ ছড়াচ্ছে সেখানে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণই একমাত্র রাস্তা। তাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলেও অন্য উপায় নেই। সংক্রমণের হার ৩-৫ শতাংশ হলে, সমস্যা ছিল না। যেমন ইউরোপে ইনফ্লুয়েঞ্জায় বছরে লাখখানেক লোক মারা যান। তবে সমাজে এর সামগ্রিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি হয়। কিন্তু কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের হারই ২৫-৩০ শতাংশ।

কলকাতায় যদি ছড়ায় এক কোটি লোকের এই শহরে এমন রোগ ছড়ালে ২৫ লক্ষ করোনাগ্রস্ত মানুষ আমাদের মধ্যে থাকবেন। তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ অর্থাৎ আড়াই লক্ষ লোকের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অবস্থা হতে পারে। মেরেকেটে ছ’হাজার হাসপাতাল-শয্যার এই শহরে দু’সপ্তাহ ধরে আড়াই লক্ষ লোকের চিকিৎসা করতে হলে সংক্রমণ রুখতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ছাড়া আর কোন পথ থাকতে পারে! তাতে হয়তো, করোনার বিরুদ্ধে সামগ্রিক প্রতিরোধক্ষমতা তত মজবুত হবে না। রোগটি আবার ফিরতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর নিরিখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কেন এটা জরুরি তা ইতালির দুর্দশা থেকেই শেখা উচিত। এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার দু’শতাংশ হলেও সে দেশে তা পাঁচ শতাংশ ছুঁয়েছে, কারণ, রোগীদের অনেকেরই চিকিৎসা সাধ্যে কুলোয়নি। সত্তরোর্ধ্বদের চিকিৎসায় হাল ছাড়তে হয়েছে। ইউরোপের উন্নত একটি দেশের জন্য এমন পরিস্থিতি করুণ। তাই মৃত্যুর হার নয়, সংক্রমণের মাত্রা খেয়াল রাখুন। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা ঘরবন্দি হওয়াটা কষ্টকর। তবু এ ছাড়া উপায় নেই। ভারত সংক্রমিতদের দূরে সরিয়ে রেখে দেশের বৃহৎ জনসংখ্যাকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আগামী ৩-৪ সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার পরে হয়তো পরিস্থিতি আয়ত্তে আসবে। সব সঙ্কটেরই কিছু ভাল দিক থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাত

ধোয়া বা কাশির সহবত নিয়ে তৈরি সচেতনতা হয়তো যক্ষ্মা বা পেটের অসুখ কমাতে কাজে আসবে। অনেক দিন বাদে ধর্মীয় মৌলবাদের থেকে বেশি ছোঁয়াচে মারণ ভাইরাসে দুনিয়া টালমাটাল। ছোঁয়াছুঁয়ি কম হলে হিংসা-মারামারি কমবে এটা আশা করা যেতেই পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy