—ফাইল চিত্র।
ফোনে খবর এসেছিল, করোনা-আক্রান্ত কিশোর ছেলেকে দেখতে বারবার হাসপাতালে যাচ্ছেন বাবা। যার জেরে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়ায় আবাসনের বাকি বাসিন্দাদের মধ্যে। ভয় এতটাই যে, ওই পরিবারের ভেজা কাপড় মেলাতেও আপত্তি জানাচ্ছেন তাঁরা! তাই তাঁদের সচেতনতার পাঠ দিতে শনিবার সকালে নাগেরবাজারের ওই আবাসনে হাজির হলেন ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’-এর সদস্য, বেহালাবাদক পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত এবং তিন জন চিকিৎসক— অরিজিৎ ঘোষ, সায়ন্তন চক্রবর্তী ও পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়।
সত্যরূপের কথায়, ‘‘গিয়ে বুঝলাম, তথ্য-বিভ্রান্তি আর দিশাহারা অবস্থা থেকেই এমন আচরণ প্রতিবেশীদের। দু’ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর পর্বে বুঝিয়েছি, আক্রান্তের পরিবারকে একঘরে করে নয়, সতর্ক থেকেই করোনাকে এড়ানো সম্ভব।’’ গত ১ জুলাই চিকিৎসক দিবসেই পথ চলা শুরু হয়েছিল ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ (সিসিএন)-এর। হেল্পলাইনের সাহায্যে পরামর্শ ও তথ্য জুগিয়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে এবং আতঙ্কের পরিবেশ কাটাতেই এই ফোরামের মাধ্যমে একজোট হয়েছেন এ শহরের বেশ কিছু কোভিডজয়ী ও তাঁদের পরিবার। তাঁরা পাশে পেয়েছেন চিকিৎসকদেরও। আগামী সপ্তাহেই সিসিএন-এর সেই হেল্পলাইন পুরোদস্তুর চালু হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই সাহায্য চেয়ে পরপর আসতে শুরু করেছে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেজ।
শুরুর প্রথম দিনেই এসেছিল প্রথম বার্তা। এক জন জানিয়েছিলেন, বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। পরের দিনই সিসিএন-এর সদস্যেরা হাজির হন তাঁর বাড়িতে। তার পর থেকে ফোন-মেসেজের বিরাম নেই। কখনও সর্দি-কাশি নিয়ে আতঙ্কিত তরুণী সিসিএন-এর সদস্য চিকিৎসককে ফেসবুকে মেসেজ করেছেন, কখনও বা হোম কোয়রান্টিনে বন্দি ছেলে হাসপাতালে থাকা কোভিড-আক্রান্ত বাবার খোঁজ না-পেয়ে ফোন করেছেন কোভিডজয়ী অমৃতা পাণ্ডাকে। উল্টো দিকের বাড়িতে করোনা পৌঁছে যাওয়ার আতঙ্কেও সত্যরূপকে (তাঁর মামা কোভিডজয়ী) ফেসবুকে মেসেজ করেছেন বেহালার সত্তরোর্ধ্ব দম্পতি। রিপোর্ট যে পজ়িটিভ, রাত সাড়ে ৯টায় সে কথা জেনে পরামর্শ নিতে আইনজীবী অরিন্দম দাসকে ফোন করেছেন এক ডায়াবিটিসের রোগী। করোনায় আক্রান্ত শুনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কী ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, সে কথা জানিয়েও এসেছে ফোন। মনে জোর পেতে বিশাখাপত্তনম থেকেও যোগাযোগ করেছেন এক মহিলা।
এ সব ক্ষেত্রে কখনও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে, কখনও নবতিপর বৃদ্ধের করোনা-জয়ের উদাহরণ দিয়ে, কখনও বা হাসপাতাল-অ্যাম্বুল্যান্স সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন সত্যরূপ-অরিন্দম-অমৃতারা। বাড়িতে কোয়রান্টিনের সময়সীমা কাটানোর পরে যে দ্বিতীয় বার করোনা পরীক্ষার আর প্রয়োজন নেই— আইসিএমআরের সেই নয়া নির্দেশিকা অনেকে জানেন না
বলেই হেনস্থার পর্ব চলছে। এমনটাই মত ওই সদস্যদের।
হাওড়ায় একই পরিবারের চার জন আক্রান্ত হওয়ার পরেও বাড়িতে থেকেই যে করোনা-জয় সম্ভব, তা কিছু দিন আগে করে দেখিয়েছেন কলেজপড়ুয়া অমৃতা। এখন এই সব ফোন সামলাচ্ছেন কী ভাবে? তাঁর কথায়, ‘‘বাচ্চার কোভিড হতে পারে কি না, বাড়িতে করোনার চিকিৎসা সম্ভব কী ভাবে— এ সব জানতে চেয়েও অসহায় ভাবে ফোন করেছেন অনেকে। এ সব ক্ষেত্রে সিসিএন-এর চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেই
প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমিও এক সময়ে প্রবল অসহায় বোধ করেছিলাম। তাই এখন সর্বতো ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy