যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ।— নিজস্ব চিত্র
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে নিয়ে সর্বত্রই প্রবল আলোচনা। যাদবপুর ক্যাম্পাস এবং সরকারি মহলে যেমন তাঁর নিয়োগ নিয়েই বিতর্ক চলছে। তাঁর ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তেমনই তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা কিছু পোস্ট নারীবিদ্বেষী, সংরক্ষণ-বিরোধী এবং সমপ্রেম-বিরোধী বলেও অভিযোগ উঠেছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে এই নিয়োগের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, বর্তমানে বুদ্ধদেব রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠ শিক্ষক সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘের’ এই রাজ্যের সভাপতি। এক সময়ে তিনি তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপারও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ দিন বুদ্ধদেব অবশ্য বলেন, “এই ধরনের প্রশ্ন করবেন না। এতে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ নষ্ট হয়।” বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
কিছু দিন আগেই যাদবপুরের কয়েক জন শিক্ষক রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পূর্বতন অস্থায়ী উপাচার্য অমিতাভ দত্ত যথাযথ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন না, কর্মসমিতির বৈঠক ডাকছেন না, এমন অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন। সেই শিক্ষকদের মধ্যে বুদ্ধদেবও ছিলেন। তার কয়েক দিন পরেই অমিতাভ পদত্যাগ করেন। এর পর উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার আবহে বুদ্ধদেব-সহ আরও কয়েক জন শিক্ষককে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজভবন সূত্রের খবর, তাঁরা অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য পদের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কি না সেই নিয়ে রাজ্যপাল খোঁজ নিয়েছিলেন। এর পর শনিবার রাজ্যপাল বুদ্ধদেবকে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করেন। যে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড িনয়ে বিতর্ক, বুদ্ধদেব তারও সদস্য ছিলেন।
তবে উপাচার্য পদে বসতে গেলে ইউজিসি-র নিয়ম অনুযায়ী দশ বছর অধ্যাপক পদে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। রাজ্যপাল নিযুক্ত আরও বেশ কয়েক জন অন্তর্বর্তী উপাচার্যের মতোই বুদ্ধদেবেরও সেই অভিজ্ঞতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। সেই সঙ্গে এ দিন বুদ্ধদেবের ফেসবুকে প্রোফাইলে শেয়ার করা কিছু পোস্ট সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেরই অভিযোগ, এই সব পোস্টের বক্তব্য সমপ্রেম-বিরোধী, সংরক্ষণ-বিরোধী এবং নারীবিদ্বেষী। এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে অনেকেই সরব হয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি তিন ব্লকের অন্তর্গত বনমালী চট্টা হাইস্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন বুদ্ধদেব। সে সময় তাঁর গণিতের শিক্ষক ছিলেন বাসুদেব পয়ড়্যা। বাসুদেব এ দিন বলেন, ‘‘ছেলেটা খুব কম কথা বলত। তবে অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ।’’ প্রাক্তনীর এই পদপ্রাপ্তিতে খুশির হাওয়া স্কুলে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক হন বুদ্ধদেব। এর পর তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের কলকাতা শাখায় পড়াশোনা করার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একটি বেসরকারি সংস্থাতেও কাজ করেছেন কিছু দিন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে শিক্ষকতা করতে আসার পরে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন আবুটার সদস্য বলেই ক্যাম্পাসে বুদ্ধদেবের পরিচিতি ছিল। এর পরে তিনি ওয়েবকুপার সদস্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবকুপা নেতা মনোজিৎ মণ্ডল রবিবার বলেন, ‘‘বুদ্ধদেব সাউ আবুটাতে ছিলেন। মাঝে বছর দু'য়েক ওয়েবকুপার সদস্য ছিলেন। ওয়েবকুপার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের কোষাধ্যক্ষও হন। ২০১৭ সালে আবার আবুটাতে ফিরে যান।’’ আবুটার নেতা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তরুণ নস্কর বলেন, “বুদ্ধদেব আবুটার সদস্য। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা) এবং পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিরও (ওয়েবকুটা) সদস্য।” প্রসঙ্গত জুটা এবং ওয়েবকুটায় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক মতামতের শিক্ষকেরাই রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy