Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Flyovers

উড়াল-পথে রং তো হবে, তবে স্বাস্থ্য ফিরবে কি?

সেতুর ‘স্বাস্থ্য’ বজায় রাখতে রং করা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে।

শহরের একাধিক সেতু ও উড়ালপুলের সঙ্গে রঙের প্রলেপ পড়বে চিংড়িঘাটা উড়ালপুলেও। নিজস্ব চিত্র।

শহরের একাধিক সেতু ও উড়ালপুলের সঙ্গে রঙের প্রলেপ পড়বে চিংড়িঘাটা উড়ালপুলেও। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫২
Share: Save:

গত সপ্তাহেই রাজ্যের অন্তর্বর্তী বাজেটে শুধুমাত্র কলকাতার জন্যই একাধিক উড়ালপুল, স্কাইওয়াকের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ওই ঘোষণার আগেই শহরের একাধিক উড়ালপুল এবং সেতু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাতে রং করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর।

যদিও সেতুর ‘স্বাস্থ্য’ বজায় রাখতে রং করা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সেতু এবং উড়ালপুলের কাঠামো নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। আর কাঠামোর ক্ষয় বা মরচে পড়া আটকাতেই সে সবে রং করা হয়।’’

কেএমডিএ সূত্রের খবর, চেতলা, জিরাট, জীবনানন্দ সেতু ও গার্ডেনরিচ উড়ালপুল জরুরি ভিত্তিতে পরিষ্কার করে তাতে রং করার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দিনই আবার উল্টোডাঙা উড়ালপুলে রং এবং চিংড়িঘাটা উড়ালপুল ও অম্বেডকর সেতু পরিষ্কার-সহ ছ’মাসের মেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। পরদিন, অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি উল্টোডাঙার অরবিন্দ সেতু ও শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতুতে রেলিং-সহ সামগ্রিক কাঠামোয় মরচে নিরোধক রঙের (প্রোটেকটিভ পেন্ট) জন্য দরপত্র ডাকা হয়। সব মিলিয়ে সেতু এবং উড়ালপুল পরিষ্কার ও রং করার জন্য প্রায় ২৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সেতু এবং উড়ালপুলে রং করায় দু’টি উদ্দেশ্য সাধন হয়। প্রথমত, এর একটি নান্দনিক দিক রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেতু এবং উড়ালপুলের কাঠামোয় মরচে পড়া আটকানো যায়। কারণ, বর্তমানে যে রং লাগানো হয়, তাতে ‘ওয়াটার-প্রুফিং কোয়ালিটি’ থাকে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য তথা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, উড়ালপুল ও সেতুর রেলিংয়ে জল নিরোধক (ওয়াটার প্রুফ) রং করা হয়। কিন্তু ভিতের রঙে জল নিরোধকের পাশাপাশি ‘অ্যান্টি করোসিভ প্রপার্টি’ বা মরচে নিরোধক উপাদানও থাকে। চিরঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘আসল উদ্দেশ্য হল কাঠামোর ভিতরে জলের প্রবেশ রোধ করা। কারণ, জল যখনই চুঁইয়ে চুঁইয়ে কংক্রিটের ভিতরে প্রবেশ করে ইস্পাত বা লোহায় পৌঁছয়, তখনই কাঠামোর ক্ষয় শুরু হয়।’’

সেতু বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ সোম জানাচ্ছেন, কাঠামোয় মরচে পড়া আটকাতে রং সাহায্য করে ঠিকই। কিন্তু ইতিমধ্যেই মরচে পড়ে গিয়ে থাকলে, তার মাত্রা কতটা, তাতে কাঠামো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সবের পরীক্ষা করে তবে রং করা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘রঙের থেকেও বেশি প্রয়োজন সেতু ও উড়ালপুলের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করে তা মেরামত করা।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের আবার মত, সেতু এবং উড়ালপুলের ক্ষেত্রে ভারবহন ক্ষমতা ঠিক রয়েছে কি না, সেটাই প্রধান বিচার্য। রঙের ভূমিকা সেখানে নগণ্য। কারণ, রং করা হয় মূলত বাহ্যিক সৌন্দর্যরক্ষা ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ (প্রিভেন্টিভ মেজা়রস) হিসেবে। সে কারণে সেতু এবং উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ-নীতিতে (মেন্টেনেন্স স্ট্র্যাটেজি) রং করাটা একদম শেষের ধাপে পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘এ ছাড়া রং যেহেতু রোদ, হাওয়া এবং জলের সংস্পর্শে আসে, তাতে তার স্থায়িত্ব সাময়িক হয়। ফলে সেতু এবং উড়ালপুলের কাঠামোগত শক্তি বিন্যাসের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রঙের কোনও ভূমিকা নেই।’’

ফলে সেতু এবং উড়ালপুল রঙিন হলেও তাদের স্বাস্থ্যে জেল্লা ফিরবে কি না, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে বলে মত অনেকের।

অন্য বিষয়গুলি:

Flyovers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE