Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Custodial Death

অভিযুক্ত পুলিশ, তাদের রিপোর্টেই আস্থা কমিশনের?

মানবাধিকার কমিশন সূত্রের খবর, ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’-কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৮
Share: Save:

অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। রিপোর্টও চাওয়া হচ্ছে সেই পুলিশের থেকেই। তা হলে সেই রিপোর্টের যৌক্তিকতা কতটা?

সিঁথি থানায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। ৩১ মার্চের মধ্যে তা জমা দিতে বলা হয়েছে। যেখানে পুলিশই অভিযুক্ত, সেখানে পুলিশের রিপোর্ট কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মী এবং আইনজীবীদের বড় অংশ। কারণ, শেষ কবে হেফাজতে মৃত কোনও বন্দির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কমিশন পদক্ষেপ করেছে, সেটা তাঁরা মনে করতে পারছে‌ন না!

মানবাধিকার কমিশন সূত্রের খবর, ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’-কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।— পুলিশি হেফাজত, জেল হেফাজত ও সেনাবাহিনী বা আধা সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি আসামি বা অভিযুক্তের মৃত্যু। গত এক বছরে, অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত এ রাজ্যে সব মিলিয়ে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে ৬২টি। গত এক বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মোট ৯৩টি ঘটনায় কমিশন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মামলা দায়ের করেছে। কমিশনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এমন আরও অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনে। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যদি ঘটনার তদন্ত করে, তখন রাজ্য মানবাধিকার কমিশন মাথা ঘামায় না। সে ক্ষেত্রে কি মৃত বন্দির পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়? কমিশনের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনা খুব গুরুতর হলে কমিশনের নিজস্ব তদন্তকারী শাখা তদন্ত করে। না হলে পুলিশের রিপোর্টেই ভরসা করা হয়।’’ এমন ক্ষেত্রে তো পুলিশ নিজেই অভিযুক্ত, ফলে তাদের উপরে ভরসা করা কতটা যুক্তিযুক্ত? ওই কর্তা বলেন, ‘‘ওই রিপোর্টকে চূড়ান্ত ধরা হয় না। তবে অসঙ্গতি মিললে পুলিশের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।’’

বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা চাওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যিনি বন্দি অবস্থায় মারা গিয়েছেন, তাঁর পরিবারের মতামত সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের হেফাজতেই যেখানে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, সেখানে শুধু পুলিশের রিপোর্টের যৌক্তিকতা কোথায়?’’ ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিকাল সায়েন্সেস’-এর অধ্যাপক শমীক সেন বলেন, ‘‘ভিক্টিমোলজি বলে একটি কথা রয়েছে। অর্থাৎ, যিনি বা যাঁরা ঘটনার শিকার, তাঁদের বা সংশ্লিষ্ট পরিবারের বয়ানের ভিত্তিতে ঘটনার বিচার করা। এখানে অভিযুক্ত পুলিশের থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয় বলেই বিচারের মূল ভিত্তি লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’

মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র বলেন, ‘‘শুরুর দিকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন হেফাজতে থাকাকালীন বন্দি-মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃতের পরিবার, অভিযুক্ত থানা বা আধিকারিক, দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দিত। কোনও আধিকারিক দোষী সাব্যস্ত হলে আইনি পদক্ষেপের জন্য রাজ্যের কাছে সুপারিশ করত কমিশন। এখন তা হয় না।’’

যদিও সিঁথি থানার ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের ক্লোজ় করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিয়ম মেনে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। তবু সার্বিক ভাবে হেফাজতে থাকাকালীন বন্দি বা অভিযুক্তের মৃত্যু নিয়ে পুলিশি রিপোর্টের উপরে ভরসা কতটা করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy