—নিজস্ব চিত্র।
তাঁর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা খুন হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার নিমতায়। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই খুনের ঘটনার খবর পেয়ে শিলিগুড়ি থেকে ফিরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখা করলেন খুন হওয়া ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। দীর্ঘ ক্ষণ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি জানান, এমন একটি খুনের খবর পেয়ে মিছিল বাতিল করে তিনি নিজের কেন্দ্রে ফিরে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘শিলিগুড়িতে একটা স্যাড নিউজ় পেয়েছিলাম। তাই মিছিন ক্যান্সেল করে চলে এসেছি। সিধেসাধা ব্যবসায়ী ছিল। ওরা পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি করে। পুলিশ কিছু ক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার করেছে। আমি মনে করি এরা ক্রিমিনাল নয়। ক্রিমিনালের চেয়েও বড় ক্রিমিনাল।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, নিমতার ঘটনা পরিকল্পিত খুন। এদের ক্রিমানাল ব্রেন। পুলিশের রিপোর্ট থেকে দেখলাম।
স্থানীয় সূত্রে খবর, খুন হওয়া ব্যবসায়ী ভব্য লখানির স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে দুই নাবালক পুত্র। তাদের এক জন দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। অন্য জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এক জনের স্কুলের পরীক্ষা ছিল বুধবার। তার মধ্যেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পায় সে। এমন একটি ঘটনায় পুরো পরিবার স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছে। প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে মমতা কথা বলেছেন বলে খবর। মমতা বলেন, ‘‘একটা ছেলে কালও পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। দুটো বাচ্চা ছেলে, মা এবং স্ত্রী রয়েছে পরিবারে। স্বাভাবিক ভাবে পুরো পরিবারটাই ভেঙে পড়েছে।’’
উইকেট দিয়ে পিটিয়ে খুনের পর বস্তাবন্দি দেহ জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে তার উপর রাতারাতি তুলে দেওয়া হয়েছিল পাঁচিল। বুধবার ভবানীপুরের ব্যবসায়ী ভব্য লখানির দেহ নিমতায় উদ্ধারের চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে খাস কলকাতায়। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে খুন হন ভব্য। ব্যবসায়িক মিটিংয়ে ডেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য মিলেছে। অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় উইকেট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় ব্যবসায়ীর। সংজ্ঞাহীন হওয়ার পরেও পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন খুনিরা। তার পর উইকেটগুলো এক জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীর রক্তমাখা জামাকাপড় ছুড়ে ফেলা হয় নিমতার একটি ধাপায়। সেগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনের ঘটনায় দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ব্যবসায়ীর স্ত্রী নেহা লখানি থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে কেউ অপহরণ করেছেন। সোমবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড এলাকা থেকে ভব্য বেরনোর পর তাঁর আর কোনও খোঁজ পাননি। ঘটনার তদন্তে নেমে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে বুধবার নিমতা থানার একটি বাড়ি থেকে ভবানীপুরের ওই ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। অভিযোগ, খুনের পর দেহ বস্তাবন্দি করে জলের ট্যাঙ্কের নীচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর রাতারাতি তার উপর পাঁচিল তুলে দেন অভিযুক্তেরা। যে বাড়ি থেকে ভব্যের দেহ পাওয়া যায়, সেটি অনির্বাণ গুপ্ত নামে এক যুবকের। নিমতার প্রবোধ মিত্র লেনের বাসিন্দা অনির্বাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রাথমিক তদন্তে তিনি খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন বলে খবর। পাশাপাশি ৩৮ বছরের সুমন দাস নামে এক যুবককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অনির্বাণের সঙ্গে হাত লাগিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দেহ লুকোনোর চেষ্টা করেন তিনি। দু’জনকেই টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
খুনের কারণ হিসাবে উঠে আসছে আর্থিক লেনদেনের তথ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, অনির্বাণের সঙ্গে ওষুধের ব্যবসা করতেন ভব্য। বেশ কিছু ওষুধ সরবরাহ করবেন বলে ভব্যের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন অনির্বাণ। কিন্তু কোনও ওষুধই সরবারহ করেননি। টাকাও ফেরত দেননি। মনে করা হচ্ছে, ওই নিয়ে একটি ‘মিটিং’ করবেন বলে ব্যবসায়িক সঙ্গীকে নিমতার বাড়িতে ডাকেন অনির্বাণ। এ নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘অনির্বাণের বাড়িতে খুন করে ছাদের উপর জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত অনির্বাণ মৃতের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। ওষুধ সরবরাহের অজুহাতে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। ওই ওষুধ সরবরাহ করেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy