Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Municpal Corporation

‘পুর ব্যর্থতা’র দায় কার? মমতার উষ্মায় বাড়ল চর্চা

লোকসভা ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুর নির্বাচনে যেখানে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩২টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল, সেখানে মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে ৪৭টিতে এগিয়ে বিরোধীরা।

অভিযান: ফুটপাতে বসা হকারদের স্টলের অতিরিক্ত অংশ খুলে ফেলার কাজ চলছে। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাট এলাকায়।

অভিযান: ফুটপাতে বসা হকারদের স্টলের অতিরিক্ত অংশ খুলে ফেলার কাজ চলছে। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাট এলাকায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ০৭:২৫
Share: Save:

কলকাতার পুর পরিষেবা নিয়ে কি অনেকেই খুশি নন? লোকসভা নির্বাচনে শহরের ১৪৪টির মধ্যে ৪৭টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার তথ্য সামনে আসতেই নানা মহলে এই প্রশ্ন উঠেছিল। সোমবার নবান্নের সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল পরিচালিত বিভিন্ন পুরসভার কাজের সমালোচনা করার পরে নতুন করে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যা নিয়ে অনেকেরই বক্তব্য, ভোটের মুখে বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়া থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে পুরপ্রতিনিধিদের আড়াল করে শুধু পুরকর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপানো কি তবে ভাল ভাবে নেননি শহরের ভোটারেরা? তার সঙ্গেই কি যুক্ত হয়েছে পুর পরিষেবা স‌ংক্রান্ত নানা অভিযোগ ঘিরে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের দায়সারা ভূমিকা?

লোকসভা ভোটের ফলে দেখা গিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুর নির্বাচনে যেখানে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩২টিতেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল, সেখানে মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে ৪৭টিতে এগিয়ে বিরোধীরা। বহু ওয়ার্ডে তৃণমূল বেশ কম ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। যা নিয়ে চিন্তায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। উঠে আসছে শহুরে ভোটারদের মুখ ফেরানোর সম্ভাব্য নানা কারণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, পুর পরিষেবা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মধ্যে। অবৈধ নির্মাণ, ফুটপাত দখল, অবৈধ পার্কিং থেকে পুরপ্রতিনিধিদের দাদাগিরি, ওয়ার্ডে তাঁদের দেখা না পাওয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে লাগামহীন বেআইনি নির্মাণ।

ভোটের মুখে গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বরাবরই স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের আড়াল করে পুলিশ ও পুরসভার আধিকারিকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘টাকা খান পুলিশ, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা। আর দোষ হয় কাউন্সিলরের।’’ সাধারণ মানুষ মেয়রের এই ভূমিকা ভাল ভাবে নেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলাফলে।

এক পুর আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘প্রতি সপ্তাহে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষ মেয়রের কাছে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ করেন। এ দিকে, মেয়র নিজেই পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বে। বেআইনি নির্মাণের দায় কি তাঁর উপরেও বর্তায় না?’’ শহরের ফুটপাত জবরদখল হয়ে যাওয়া ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শাসকদলের এক পুরপ্রতিনিধি বললেন, ‘‘ধর্মতলা, চাঁদনি চক, ডালহৌসি, পার্ক স্ট্রিট চত্বরে হকারদের দাপাদাপিতে পথচারীরা রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।’’ বিভিন্ন ওয়ার্ডে শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিদের ‘দাদাগিরি’র অভিযোগও বিস্তর। আবার প্রয়োজনে তাঁদের বহু ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। উল্টে বাড়ি সংস্কারের কাজেও ‘তোলা’ চাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

আছে বেআইনি পার্কিংয়ের পুরনো রোগও। আইনি জটিলতায় পার্কিংয়ের টেন্ডার দেওয়া যাচ্ছে না দীর্ঘদিন। সেই সুযোগেই চলছে পার্কিং ফি-র নামে বাড়তি টাকা হাতানোর খেলা। পরিস্রুত পানীয় জল না পাওয়াও শহুরে ভোটে প্রভাব ফেলেছে বলে মত অনেকের। পুরসভার এক মেয়র পারিষদ সরাসরিই বললেন, ‘‘এখনও সংযুক্ত এলাকায় (১০০ থেকে ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ড) পরিস্রুত পানীয় জলের বেশ অভাব রয়েছে। অথচ, পুরসভার তরফে নিয়মিত বুস্টার পাম্পিং স্টেশন উদ্বোধন করে পানীয় জলের সঙ্কট মিটে গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।’’

মেয়র অবশ্য এই সমস্ত দাবিই উড়িয়ে দিয়েছেন। পুর পরিষেবার সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে বলে তাঁর মত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আসলে হিন্দিভাষীরা আমাদের ভোট দেননি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এর চেয়েও বেশি পিছিয়ে ছিলাম আমরা। তার পরে বিধানসভা ও পুরসভার ভোটে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy