তপসিয়া এলাকা ছেয়েছে হোর্ডিংয়ে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
কোথাও বহুতলের উপরে বিপজ্জনক ভাবে লাগানো হয়েছে হোর্ডিং। কোথাও আবার হোর্ডিং, ফ্লেক্স বা ব্যানার ঝুলছে গাছের ডাল থেকে। এমনও দেখা গিয়েছে, হোর্ডিং যাতে আরও ভাল ভাবে দৃশ্যমান হয়, তার জন্য নির্বিচারে কাটা হয়েছে গাছের ডাল। আর ভেঙে পড়া বা ছেঁড়া হোর্ডিং দিনের পর দিন ওই ভাবেই থেকে যাচ্ছে, এমন দৃশ্য তো আকছার দেখা যায় শহর জুড়ে।
বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের কারণে শহরে যে দৃশ্যদূষণ তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে একটি সুনির্দিষ্ট হোর্ডিং-নীতি তৈরির কথা আগেই ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। কোন রাস্তায় কী ধরনের হোর্ডিং থাকতে পারে এবং সেগুলি কী ভাবে বসানো উচিত, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই হোর্ডিং-নীতি তৈরি করতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তাঁরা।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, এ শহরে বেআইনি হোর্ডিং খুলে ফেলতে মাঝেমধ্যে অভিযানে নামে পুরসভার বিজ্ঞাপন বিভাগ। কিন্তু ওই বিভাগে লোকবলের অভাব থাকায় বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিজ্ঞাপন বিভাগে রয়েছেন মাত্র ১৮ জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে ছ’জন আধিকারিক পদমর্যাদার। বাকি ১২ জনের মধ্যে তিন জনকে আবার অন্য কাজে তুলে নেওয়া হয়েছে। এত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে অভিযান চালানো কী ভাবে সম্ভব, পুরসভার অন্দরেই উঠেছে সেই প্রশ্ন।
এ দিকে, বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মীর সংখ্যা তলানিতে ঠেকায় রাজস্ব আদায়ের কাজেও ভাটা পড়েছে। করোনার জেরে ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে বিজ্ঞাপন বিভাগের আদায় হয়েছিল ন’কোটি টাকা। তবে ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে সেই আয় বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, আদায়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু লোকবলের অভাবেই তা বাড়ছে না। তাঁদের বক্তব্য, যে সমস্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং বাবদ পুরসভা টাকা পায় না, সেগুলি খুলে নেওয়ার জন্য অভিযান চালানোর কথা। কিন্তু কর্মীর অভাবে সেই কাজটা সব সময়ে হয়ে ওঠে না। বিজ্ঞাপন বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যদি সমস্ত হোর্ডিং আইন মেনে বসাতে বাধ্য করা যায়, তা হলে বছরে ১০০ কোটি টাকাও আয় করা যায়। কিন্তু এত কম লোক নিয়ে সারা শহরের হোর্ডিং সামলানোর কাজ করা যাচ্ছে না।’’
দৃশ্যদূষণের পাশাপাশি গাছের ডাল ছেঁটে বা গাছ কেটে হোর্ডিং লাগানো হলে তা পরিবেশের পক্ষেও ক্ষতিকর বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, “হোর্ডিংয়ের জন্য গাছের উপরে কোপ পড়ছে বা গাছের ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে— এমন ঘটনা তো হামেশাই দেখা যায় শহরে। এই প্রবণতা থামাতে না পারলে আমাদের সকলের বিপদ।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, নজরদারির অভাবে শহরের বিভিন্ন হেরিটেজ এলাকাতেও হোর্ডিং বসানো হচ্ছে। প্রশাসনের এ বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সম্প্রতি কালবৈশাখীর জেরে দক্ষিণ কলকাতায় ভেঙে পড়েছিল একটি হোর্ডিং। কোনও মতে বেঁচে গিয়েছিলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এমন অসংখ্য হোর্ডিং, ব্যানার রয়েছে, যেগুলি বেশ পুরনো। এক পুর আধিকারিকের কথায় ‘‘বাংলা নববর্ষের পরে এক মাসেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে জনপ্রতিনিধিদের টাঙানো হোর্ডিং শহরের যত্রতত্র এখনও ঝুলছে। ঝড়বৃষ্টিতে সেগুলি ভেঙে পড়লে বড়সড় বিপদ হতে পারে।’’
কলকাতা পুর এলাকার বহু জায়গাতেই হোর্ডিংয়ের লোহার কাঠামো বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে বলে অভিযোগ। পুরনজরদারি এড়িয়ে অবৈধ হোর্ডিংও রয়েছে বিভিন্ন মোড়ে। এক হোর্ডিং অন্য হোর্ডিংকে ঢেকে দিচ্ছে, এমনও ঘটছে। মেয়র পারিষদ (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমারের যদিও দাবি, “বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে পুরসভা নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়। বিপজ্জনক বা ঝুলন্ত হোর্ডিং এখন শহরে নেই বললেই চলে। হোর্ডিং-নীতি তৈরি ও বলবৎ করা হলে এ বিষয়ে পুরসভা আরও কঠোর হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy