Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Karate Championship

Karate World Championship: আজ়াদির দিনে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন উম্মিদের

আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ব্যাঙ্ককে বিশ্ব ক্যারাটে মিটে যাওয়ার কথা এই দু’জনের।

দুই কন্যা: ইরাম সিরাজ (বাঁ দিকে) ও উম্মি রুমান।

দুই কন্যা: ইরাম সিরাজ (বাঁ দিকে) ও উম্মি রুমান। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪০
Share: Save:

‘‘নিছকই তেরঙা ওড়ানো নয়। দেশের তেরঙা পতাকার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাও তো ভাবতে হবে!’’— সোমবার বিকেলে রাজাবাজারে দাঁড়িয়ে বলছিলেন জাভেদ আলম এবং উমর আওয়েস। একটু বাদে তেরঙা বেলুনে সাজানো ছিমছাম মঞ্চে এলাকার দুই ক্যারাটে কন্যা ইরাম সিরাজ আর উম্মি রুমানকে ডেকে নিলেন তাঁরা।

আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ব্যাঙ্ককে বিশ্ব ক্যারাটে মিটে যাওয়ার কথা এই দু’জনের। কিন্তু থাকা-খাওয়ার খরচ জুটবে কোথা থেকে! এই কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে পাশে থাকার সঙ্কল্পে জনতাকে আহ্বান করলেন জাভেদ। কিছু টাকা তাঁরা আগেই দেবেন ঠিক করেছিলেন। আরও কয়েক জন পৃষ্ঠপোষক জুটে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। তাঁদের সকলের জন্যই এই দুই মেয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়া যে অন্তত আটকাচ্ছে না, স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল।

ইরাম এবং উম্মি দু’জনেই একাদশ শ্রেণি। মোমিন গার্লস স্কুলের ছাত্রী উম্মি ক্যারাটের অরেঞ্জ বেল্ট। আর বৈতুলমাল গার্লস হাই স্কুলের ইরাম বছর পাঁচেকেই ব্রাউন বেল্ট। দুই সপ্তদশী বিশ্ব খেতাবের আসরে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে মুখিয়ে রয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে তাদের যাতায়াতের টাকা উঠে আসায় কোচ এম এ আলির চোখেমুখেও এ দিন স্বস্তির ছাপ।

এ তল্লাটের ছেলে, মেয়েদের কাছে ক্যারাটে কোচ ‘আলি স্যর’ খানিকটা মতি নন্দীর কোনির ক্ষিদ্দা! তিনি বলছিলেন, “৪০ বছর কোচিং করাচ্ছি! কিন্তু এখানে মেয়েদের ক্যারাটে নিয়ে জনমানসে উৎসাহ একটা বিরাট বদল। বছর দশেক আগে দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে রাজাবাজারের মেয়েদের ক্যারাটে শেখানোর ভাবনা দানা বাঁধে। এখন দেখি কেউ ভাল করলে অনেকেই পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন!” স্থানীয় যুবক, নিজের ছোটখাটো ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত জাভেদেরও একই কথা। তিনি বলছিলেন, “টুকটাক মানুষের পাশে থাকার কাজ আগেও করতাম। কিন্তু ২০১৯-এ নাগরিকত্ব আইনবিরোধী আন্দোলনের পরে ইচ্ছেটা আরও বেড়েছে। কোভিডের সময়েও চেষ্টা করেছি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বা খেলাধুলোয় একটু এগিয়ে দিতেই যা পারি করছি!”

নারকেলডাঙার খালধারে মুখোমুখি দু’টি ঘিঞ্জি গলি। কসাই বস্তি সেকেন্ড লেন। তার দু’ধারেই দুই কিশোরী ক্যারাটে-বীরাঙ্গনার বাস। দু’জনেরই পাঁচ ভাইবোন, একটি ঘরে ঘেঁষাঘেঁষি করে গোটা পরিবার। ইরমের বাবা ঠোঙা বানান। উম্মির বাবা ফুটপাতে বাচ্চাদের ইজের, গেঞ্জির পসরা নিয়ে বসেন। কোচ আলি বলেন, “আমি ওদের সব সময়ে বলি, মা ভাত রাঁধলে ফ্যানটুকু একটু চেয়ে খেয়ে নিস! আর হাতে দু’পাঁচ টাকা থাকলে একটা পেয়ারা পারলে খেয়ে নিবি। রবিবার প্র্যাকটিসের পরে আমিও একটু খাওয়ানোর চেষ্টা করি। এই ভাবে যতটুকু হয়!”

আলির আর এক ছাত্রী তাইবা তাসকিন ২০১৯-এ বিশ্ব মিটে ব্রোঞ্জ জিতে তাক লাগিয়েছিল। তাঁর আরও কয়েক জন ছাত্রী আয়েষা, মণিমালা, হুমাইরা, শিনারাও ব্যাঙ্ককে যাচ্ছেন। সকলেই গরিব ঘরের মেয়ে। কষ্ট করে টাকা জোগাড় হয়েছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইরম, উম্মিরা বলে, “জসবা হ্যায় দেশ কে লিয়ে গোল্ড লায়েগি”। আলির চোখ দুটো তখন চিকচিক করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Karate Championship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy