Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় মৃত্যু: ভিডিয়ো ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হাই কোর্টের নির্দেশ পুলিশ কমিশনারকে

প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, মৃত ব্যক্তির দেহ অবিলম্বে কলকাতা পুলিশ মর্গ থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৭
Share: Save:

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার মামলায় পদক্ষেপ করল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, মৃত ব্যক্তির মরদেহ অবিলম্বে কলকাতা পুলিশ মর্গ থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

মৃতের পরিবারের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের আবেদনে এখনই সাড়া দেয়নি হাই কোর্ট। পরিবারকে এত দিন মামলায় যুক্ত করা হয়নি। তারা মামলায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য জানাতে পারবে বলে শুক্রবার আদালত জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, পরিবারকে এ বিষয়ে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য আদালতে জমা দিতে হবে। তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। অন্য দিকে, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। কলকাতা পুলিশের তরফে শুক্রবার হাই কোর্টে এই মামলার কেস ডায়েরি এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়।

হাই কোর্ট শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। ফুটেজ কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে, সিডি বা অন্য কোনও ডিভাইসে ফুটেজ রেকর্ড করে রাখতে। তার শংসাপত্র নিতে হবে বলেও জানিয়ে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ বলেছে, ফুটেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় পুলিশকেই নিতে হবে।

মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল শুক্রবার হাই কোর্টে সওয়াল করেত গিয়ে বলেন, ‘‘আমহার্স্ট থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হোক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক, প্রত্যেক থানায় সিসিটিভি থাকা বাধ্যতামূলক। সেই নির্দেশ মেনে ফুটেজ দেখানো হয়। সাধারণ মানুষকে এ ভাবে ফোন করে পুলিশ ডাকতে পারে না। তলব করা যেতে পারত। হঠাৎ ফোন করে ডাকা হয়।’’

পরিবারের তরফে আইনজীবী অমৃতা পাণ্ডের আবেদন, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। রেলের হাসপাতালে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হোক। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ তখনই দেওয়া হয়, যখন দেখা যায় যে দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু এখানে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তেমন উল্লেখ করা হয়নি। ব্রেন হেমারেজের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনও অবৈধ পদক্ষেপ করেছে বলে আমরা মনে করছি না।’’

প্রসঙ্গত, বুধবার মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে পাঠিয়ে অশোক সিংহ নামে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ তোলে তাঁর পরিবার। এই ঘটনার জেরে বুধবার সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ হয়ে যায় কলেজ স্ট্রিট। পরিবারের দাবি, চুরির মোবাইল কেনার অভিযোগে যুবককে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন মারধরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে পরিবার। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। একই সঙ্গে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসিকে অবিলম্বে অপসারণের দাবিও তোলেন তিনি।

সূত্রের খবর, পানের দোকানের মালিক অশোককে চুরি যাওয়া মোবাইল বেআইনি ভাবে কেনার অভিযোগে তলব করা হয়েছিল থানায়। সেখানে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়, খুন তো দূরের কথা, ওই ব্যক্তিকে মারধরই করা হয়নি। তিনি নিজেই থানায় অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। তাতেই মাথা ফেটে যায় তাঁর, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে আসে। ‘অসুস্থ’ ব্যক্তিকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় করা একটি ফেসবুক লাইভের দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির দেহ পড়ে রয়েছে থানার একটি ঘরের মেঝেতে। তাঁর দু’চোখ খোলা। দেহ নিথর। আত্মীয়স্বজনদের চিৎকার-চেঁচামেচির জবাবে কোনও কথা বলছেন না থানায় উপস্থিত কর্মীরা। পরে অবশ্য তাঁদের দেখা যায় কিছুটা সক্রিয় হয়ে ওই যুবকের দেহটিকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে। যদিও ওই ফেসবুক লাইভের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজলের করা মামলায় হাই কোর্টে মূলত তিনটি আর্জি জানানো হয়েছে। এক, ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। দুই, কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে। তিন, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সজলের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এই ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা করতে চেয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy