ডেঙ্গি। প্রতীকী ছবি।
কোভিড অতিমারির ভীতি কাটিয়ে উঠে শারদোৎসবে মাতোয়ারা জনতা। প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ‘ট্যাকল’ করে পুজোর ময়দানে গোল দিচ্ছে দর্শনার্থীদের ভিড়। কিন্তু প্রশ্ন হল, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সুযোগে কতটা ছক্কা হাঁকাচ্ছে ডেঙ্গি?
চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাই মশাবাহিত এই রোগের প্রকোপ যে বাড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’’ পুজোর আনন্দের মধ্যেই প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ফোন পাচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীদের প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া গেলেও সঙ্কটজনক রোগীরও খোঁজ মিলছে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, পুজোর দিনগুলিতে বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষায় সমস্যা হচ্ছে। তাই মৃদু উপসর্গ থাকা অনেকেই পরীক্ষা করাচ্ছেন না। পাশাপাশি, যাঁদের সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিয়ে সামলানো যাচ্ছে না, তাঁদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পুজোর উচ্ছ্বাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর চাপা পড়েছে। পুজো মিটলেই ছবিটা স্পষ্ট হবে।’’
পুজোর সময়ে এই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ডেঙ্গি-পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে বলেই মত সংক্রামক রোগের চিকিৎসকদের। ওই রোগের চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘হিসাব অনুযায়ী, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ফলে মশাবাহিত রোগের সমস্যা বাড়বে তো বটেই। তার চেয়েও বড় কথা, এমন ভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ চলতে পারে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, প্রকৃতির এই খামখেয়ালি মনোভাব ঠিক হওয়া পর্যন্ত ডেঙ্গির মশার বংশবিস্তারও পুরো কমবে না। হয় বৃষ্টি পুরোপুরি থামতে হবে, অথবা টানা তিন-চার দিন ভারী বৃষ্টি হতে হবে। আর এই দু’টির কোনওটিই না হলে শীতের মরসুম অর্থাৎ ঠান্ডা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একই কথা বলছেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পণ্ডা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন ২৫-২৭ জন করে ডেঙ্গি রোগী ভর্তি থাকছেন। তাঁদের মধ্যে সঙ্কটজনক রোগীও রয়েছেন। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের বড় অংশই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত।’’
পুজোর ক’দিন জ্বরে আক্রান্ত হলেও উপসর্গ মৃদু থাকায় অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছেন। তাঁরা ডেঙ্গি পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে কোনও একটি এলাকায় বা অঞ্চলে ডেঙ্গির প্রকোপ ঠিক কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা বোঝাও সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে, পুজোর ক’দিন প্রতিটি পুর এলাকায় ঠিক মতো জঞ্জাল সাফাই বা জমা জল সরানোর দিকে কি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে? এই ব্যাপারে অধিকাংশ পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। দশমীর পরে পরিত্যক্ত মণ্ডপে যাতে জল কিংবা আবর্জনা জমে না থাকে, তার জন্য বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গির প্রকোপ বুঝতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নজরদারির যে ব্যবস্থা রয়েছে, পুজোর দিনে তা তেমন ভাবে চোখে পড়েনি।
চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘শুধুমাত্র ডেঙ্গির মরসুমে নয়, কোথাও যাতে জল ও আবর্জনা জমে না থাকে তার জন্য সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি চালানো দরকার।’’ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ফলে ছোট ছোট জায়গায় জল জমে থাকা সব চেয়ে উদ্বেগের বলে জানাচ্ছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিয় হাটি। তিনি বলেন, ‘‘টানা ভারী বৃষ্টি না হলে এডিস মশার লার্ভা ধুয়ে বেরিয়ে যাবে না। তাতে মশার বংশবিস্তার বাড়বে। তবে নভেম্বরে ঠান্ডা পড়তে শুরু করলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy