মেরামতি: মল্লিকবাজারের একটি গ্যারাজে চলছে গাড়ি সারাইয়ের কাজ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
নিজের গাড়ি সারাতে দিয়েছেন? সেটা যে গ্যারাজেই আছে, তা নিয়ে আপনি নিশ্চিত তো?
প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে সম্প্রতি প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি পথ দুর্ঘটনার পর থেকেই। ওই ঘটনায় চার কিশোর-কিশোরী সরস্বতী পুজোর সকালে একটি পুশ্নটা উঠতে শুরু করেছে সম্প্রতি প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি পথ দুর্ঘটনার পরনো গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল। মাঝ রাস্তায় সেই গাড়ি ঢুকে যায় বাসন্তী হাইওয়ের ধারের চৌবাগা খালে। ২৪ ঘণ্টা পরে পাঁকের নীচ থেকে উদ্ধার হয় গাড়ির চালক এক কিশোরের দেহ। তদন্তে জানা যায়, শহরের একটি গ্যারাজ থেকে ওই গাড়িটি ভাড়ায় নিয়েছিল ওই কিশোর।
গ্যারাজ থেকে গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায়? গত বুধবারের ওই ঘটনার পরে শহরের বিভিন্ন গ্যারাজ ঘুরে জানা গেল, প্রায় বেশির ভাগ জায়গাতেই চলে এক অলিখিত গাড়ির ব্যবসা। সারানোর জন্য গ্যারাজে দেওয়ার পরে গাড়ির মালিক জানতেই পারেন না যে, তাঁর গাড়িই ভাড়ায় দেওয়া হচ্ছে ঘণ্টা পিছু আড়াইশো থেকে পাঁচশো টাকায়। এমনকি, সেই গাড়ি নিয়ে কোথায় কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অজানা থেকে যায় তা-ও। বেনিয়াপুকুর এলাকার একটি গ্যারাজ সূত্রে আবার জানা গেল, সারানোর পরে মালিককে গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার দিন তিনি দূরে থাকলে বদলে ফেলা হয় নম্বর প্লেটও। নয়া নম্বর প্লেট-সহ হয় গ্যারাজ মালিকের বন্ধু, নয় অন্য কেউ সেই গাড়িই ভাড়ায় নিয়ে ছুটে বেড়ান শহরের মধ্যে বা ভিন্ রাজ্যে।
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক আধিকারিক জানান, কয়েক দিন আগেই এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চম্পট দেয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। সেই সময়ে ওই আধিকারিক কলকাতার একটি থানার ওসি। তিনি জানান, সিসি ক্যামেরায় পাওয়া নম্বর ধরে গাড়ির মালিক হিসেবে যাঁকে ডাকা হয়েছিল তিনি এক স্কুলের শিক্ষক। অপহরণের ঘটনার কয়েক দিন আগেই তিনি নিজের গাড়ি একটি গ্যারাজে সারাতে দিয়েছিলেন। সেই গাড়িই হাত ঘুরে চলে গিয়েছিল অপহরণকারীদের কাছে। ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ যখন ওই শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছয় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভদ্রলোক তো জানতেনই না যে তাঁর গাড়ি নিয়ে কী কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে!’’ প্রগতি ময়দান থানার ঘটনার ক্ষেত্রেও গাড়িটি ছিল এক চিকিৎসকের।
এই গ্যারাজ-গাড়ির ব্যবসা কোথায় হয়? কয়েকটি সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক দুপুরে যাওয়া হয়েছিল মল্লিকবাজারের একটি গ্যারাজে। গলি তস্য-গলি পেরিয়ে একের পর এক দোকান। তাতেই পুরনো গাড়ি কাটার কাজ চলছে। গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায়? প্রশ্ন শুনে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘কে পাঠিয়েছে?’’ ঠিক নাম না বলতে পারলে হবে না। গাড়ি ভাড়ায় নেওয়ার একটি বড় ‘গেট-পাস’ ওই পরিচিতের নাম বলতে পারা। চেনা নাম বলতে পারলে কথাবার্তা এগোবে। নয়তো বলে দেওয়া হবে, ‘‘ট্রাভেল এজেন্সিতে যান।’’
চেনা নাম বলার পরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘কী রকম গাড়ি লাগবে তার উপরে দাম। পাঁচশো থেকে হাজারের কমে আমরা কাজ করি না। মালিকের নম্বর প্লেটই থাকবে, না আমরা নতুন করে প্লেট করে দেব তা-ও বলে দিতে হবে।’’ কড়েয়ার একটি গ্যারাজের মালিক আবার দুপুর রোদে গাড়ি সারাইয়ের কাজ করতে করতেই বললেন, ‘‘চেনা লোক ছাড়া কাজ করি না। আর মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালান এমন কাউকে আমরা ভাড়াও দিই না। এটা আমাদের নীতির বাইরে।’’ গাড়ি তা হলে হবে না? পাশে দাঁড়ানো এক যুবককে এর পরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আছে গাড়ি? ওই এসইউভি-র মালিকটাকে নাকি দিন একটু বাড়িয়েই বলে রেখেছিলি? ওটাই তা হলে করে দে। ১০ দিনে তো গাড়ি তৈরি হয়ে যাবে!’’
মালিকের সঙ্গী জানিয়েছিলেন, গাড়িটা হয়তো ১০ দিনে সারানো হয়ে যাবে, কিন্তু মালিককে একটু বেশি করে সময় বলা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু গাড়ি সারিয়ে তো পেট ভরে না!’’
একাধিক ঘটনায় গ্যারাজ থেকে গাড়ি ভাড়ায় নেওয়ার প্রমাণ মেলার পরে এ নিয়ে পুলিশ কী ভাবছে? কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ কিন্তু এমন গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রেও অভিযোগ দায়ের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হবে কেন? উত্তর মেলেনি লালবাজারের কোনও কর্তার তরফেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy