বিপদ-ফাঁদ: শিয়ালদহে বিদ্যাপতি সেতুর উপরে পড়ে কেব্ল। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বছর তিনেক আগে পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুতে বাতিস্তম্ভ থেকে ঝুলতে থাকা তারের কুণ্ডলীতে জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক মোটরবাইক আরোহীর। বুধবার বিকেলেও বিধাননগরের বৈশাখী আইল্যান্ডের কাছে তারের কারণেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক বাইকচালকের। পুলিশ সূত্রের খবর, একটি ট্যাঙ্কারকে পাশ কাটানোর সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটির নীচে চলে যান উল্টোডাঙার ক্যানাল ইস্ট রোডের বাসিন্দা শুভম ধর (২৫)। যদিও স্থানীয়দের বক্তব্য, ডিভাইডার থেকে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা একটি অপটিক্যাল ফাইবারের তারের কারণেই মোটরবাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন শুভম। এই দুর্ঘটনা আরও এক বার শহরে তারের জটের বিপজ্জনক ছবিকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
বৃহস্পতিবার কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখা গেল, তারের জঙ্গল এখনও একই ভাবে রয়ে গিয়েছে। তিন বছর আগের দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড ও কলকাতা পুরসভার তরফে কেব্ল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, রাস্তায় বিপজ্জনক ভাবে তারের কুণ্ডলী ঝুলতে দেখলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কেব্ল অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে পুলিশ। পুরসভাও একাধিক বার বৈঠক করে সতর্ক করেছিল কেব্ল অপারেটরদের। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
এর পরে কয়েক বছর আগে বিদ্যুতের তার ছাড়া বাকি সব ধরনের তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তা আজও ঠিকমতো কার্যকর করা হয়নি। মাস দুয়েক আগে নবান্নে কেব্ল টিভি, টেলিফোন, ইন্টারনেট পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের নিয়ে বৈঠকে দ্রুত সেই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলেছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন তথা পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে বাস্তব বলছে, টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— সর্বত্রই এখনও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তারের কুণ্ডলী।
বৃহস্পতিবার বাইপাস এলাকার মেট্রোপলিটন মোড়ের কাছে, শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতুর উপরে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তার উপরে কেব্ল ঝুলতে দেখা গেল। হরিশ মুখার্জি রোডেও বাতিস্তম্ভ থেকে ঝুলছে তারের জট। কালীঘাট মন্দিরের অদূরে কালী টেম্পল রোডের ফুটপাতে এমন ভাবে তারের জট রয়েছে যে, পথচারীরা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।
এ ছাড়াও পরিত্যক্ত তারের কুণ্ডলী রাস্তায় বা ফুটপাতে ফেলে না রেখে পুরসভার ভ্যাটে ফেলতে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল পুরসভা। সেই সঙ্গে রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া টিভির তার কমপক্ষে কুড়ি ফুট উঁচুতে থাকার কথাও বলা হয়েছিল। বার বার নির্দেশ এবং বৈঠক সত্ত্বেও সেই পরিস্থিতি বদলায়নি। যদিও পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘শহরের সমস্ত কেব্ল মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। হরিশ মুখার্জি রোডে কেব্লের টানেল বসানোর কাজ শেষ হওয়ার পরে এখন আলিপুর রোডে কাজ চলছে। ধীরে ধীরে শহর জুড়ে মাটির নীচে টানেল বসানো হবে।’’ তবে বাতিস্তম্ভ থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে থাকা কেব্লের জন্য শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। লালবাজারের এক কর্তাও বলেন, ‘‘যেখানে যেখানে তারের জট বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই তার সরাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
তবে শহরের মাল্টি সার্ভিস অপারেটরদের (এমএসও) অবশ্য দাবি, শুধু টিভির কেব্লই নয়, একাধিক সংস্থার বিভিন্ন পরিষেবার তার বাতিস্তম্ভ থেকে টানা হয়। শহরের অন্যতম বড় একটি এমএসও-র কর্তা সুরেশ শেঠিয়ার দাবি, ‘‘আমাদের যাবতীয় তার যাতে মাটির তলায় থাকে, তার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। আমাদের তার কোথাও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy