বিপজ্জনক: ফুটপাতে ডাঁই করে রাখা মালপত্র ও পসরা। বৃহস্পতিবার, বড়বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ
একটার পর একটা অগ্নিকাণ্ড। প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটনার পরে দমকল ও পুলিশের তরফে নিয়মমাফিক পরিদর্শন করা হয়। আরোপ করা হয় কিছু বিধি-নিষেধ। কিন্তু শহরের বাজারগুলি ঘুরলেই বোঝা যায়, দমকলের সেই নির্দেশ কার্যত কিছুই মানা হয় না। ফলে বছরের পর বছর একই থেকে যায় বাজারের ভিতরের চিত্রটা।
অতি সম্প্রতি বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার পরে সেখানকার ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল দমকল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, বাজারের মধ্যে যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত জায়গা রাখতে হবে। কারণ ঘটনার সময়ে দেখা গিয়েছিল, বাজারের ভিতরে বিভিন্ন ব্লকের সরু গলির জন্য জিনিসপত্র দ্রুত বার করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। জিনিসপত্র ও ডালা সরিয়ে আগুনের উৎস পর্যন্ত পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল দমকলকর্মীদের। তৎকালীন দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সে সময়ে জানিয়েছিলেন, গলির উপরে জিনিস রেখে ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। কিন্তু প্রাক্তন মেয়রের সেই হুঁশিয়ারি স্রেফ মুখের কথা হয়েই থেকে গিয়েছে।
বাগড়ি মার্কেটের উল্টো দিকে মেহতা মার্কেট। গলির উপরেই হরেক মাল নিয়ে ডালা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানদারেরা। মোবাইলের কভার থেকে শুরু করে ইমিটেশনের গয়না, কী নেই সেই ডালায়? কয়েক জন দোকানি আবার তাঁদের দোকান বাড়িয়ে বাইরে টেবিল পেতেও জিনিসপত্র রেখেছেন। সব মিলিয়ে এমন অবস্থা যে, মাঝখান দিয়ে দু’জন লোক পাশাপাশি যেতে পারবেন না। মেহতা মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আব্দুল বারিক অবশ্য বলেন, ‘‘বাজারের ভিতরের গলিতে জায়গা চওড়া করতে আলোচনা হয়েছে। কমপক্ষে ছ’ফুট চওড়া করা হবে। কেউ নিজের দোকান গলির মধ্যে বাড়াতে পারবেন না।’’
একই ছবি বড়বাজার চত্বরে রামপুরিয়া মার্কেট, মোতি মার্কেট থেকে শুরু করে প্রায় সব বাজারে। বাগড়ির কাছে লক্ষ্মী কাটরা মার্কেটে প্রবেশপথের মুখেই আগুন জ্বালিয়ে চলছে কচুরি-সিঙাড়ার দোকান। বাজারে ঢোকার পরে দেখা গেল, কোথাও কোথাও ডাঁই করে এমন ভাবে মালপত্র রাখা যে হাঁটার জো নেই। মাথায় জিনিস নিয়ে যেতে মুশকিলে পড়ছেন মোটবাহকও। কোনও জায়গায় আবার মাথার উপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। আগুন লাগলে কী ভাবে বেরোবেন? এক দোকানদার হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘উপরওয়ালার ভরসায় গলিতে ডালা পেতে এত দিন দোকান চালাচ্ছি। আগুন লাগলে সেই উপরওয়ালাই ভরসা।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক দোকানদার বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে আলোচনা হয় ঠিকই। কিন্তু আমরাই বা কোথায় যাব?’’
যদিও দমকলের ডিভিশনাল অফিসার সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বাগড়ির অগ্নিকাণ্ডের পরে আমাদের প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরেছেন। যে সব নিয়ম মানা হচ্ছে না, সেগুলি দ্রুত মানার জন্য সতর্ক করা হয়েছে দোকানদারদের।’’ অন্য দিকে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘বিভিন্ন বাজারে বিক্ষিপ্ত ভাবে অভিযান শুরু হয়েছে। এ বার সার্বিক ভাবে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছি।’’ বাজারের গলিতে ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy