Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ধর্মঘটের মহানগর

অনেক বাসে ভাঙচুর, সংঘর্ষে আহত ওসি

ধর্মঘট ঘিরে দিনভর নানা ঝঞ্ঝাটে কাটাল মহানগর। কসবায় ধর্মঘটের সমর্থকদের সঙ্গে শাসকদলের সংঘর্ষের সময়ে আহত হন থানার ওসি, একাধিক জায়গায় ভাঙচুর হয় বাস। ভাঙচুর চলে পার্টি অফিস, বাসগুমটিতে। দোকান-বাজার খোলা রাখার পক্ষে-বিপক্ষেও চলে হুমকি-শাসানি।

ধর্মঘটের সকালে শহরের চিত্র। হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে সরকারি বাসের উইন্ডস্ক্রিন। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।

ধর্মঘটের সকালে শহরের চিত্র। হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে সরকারি বাসের উইন্ডস্ক্রিন। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০১:১২
Share: Save:

ধর্মঘট ঘিরে দিনভর নানা ঝঞ্ঝাটে কাটাল মহানগর। কসবায় ধর্মঘটের সমর্থকদের সঙ্গে শাসকদলের সংঘর্ষের সময়ে আহত হন থানার ওসি, একাধিক জায়গায় ভাঙচুর হয় বাস। ভাঙচুর চলে পার্টি অফিস, বাসগুমটিতে। দোকান-বাজার খোলা রাখার পক্ষে-বিপক্ষেও চলে হুমকি-শাসানি।

লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোড এলাকায় গোলমাল থামাতে গিয়ে কসবা থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসি আহত হন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, ধৃতেরা সিপিএম সমর্থক। তাঁদের ছোড়া ইটেই আহত হয়েছেন দুই পুলিশকর্তা।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে খবর আসে ব্যানার্জি পাড়া লেন এবং শরৎ ঘোষ গার্ডেন রোডে ধর্মঘট সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে যান কসবা থানার ওসি সুব্রত লাহিড়ী এবং অতিরিক্ত ওসি সুর্বণ দত্ত চৌধুরী। পুলিশ জানিয়েছে, তখন সিপিএম সমর্থকেরা কিছুটা দূরে গিয়ে গরফা মেন রোডে বেসরকারি বাস আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। অন্য দিকে ছিলেন ধর্মঘট বিরোধীরা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রথমে ধর্মঘট সমর্থকেরা গরফার নাজির বাগানের বাজার বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা তাঁদের হাটিয়ে দেন। এর পরে তাঁরা গরফা মেন রোডে বাস আটকে যাত্রীদের নামানোর চেষ্টা করেন।’’

পুলিশের অভিযোগ, ওই সময়ে বিরোধীরা ধর্মঘট সমর্থকদের দিকে তেড়ে গেলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ওসি-র নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ-বাহিনী ধর্মঘট সমথর্কদের হটাতে গেলে তাঁদের লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করে অপর পক্ষ। অভিযোগ, ওই সংঘর্ষের সময়েই ইটের আঘাতে ওসি-র একটি দাঁত ভেঙে যায়। ডান হাতে চোট পান অতিরিক্ত ওসি। দু’জনকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকেই সৈকত মজুমদার এবং সমীর মণ্ডল নামে দুই সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই সিপিএম সমর্থক-সহ ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

সিপিএমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সকালে ধর্মঘটের সমর্থনে একটি জমায়েত করা হয় ওই এলাকায়। আচমকাই ওই জমায়েতের উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। সিপিএমের অভিযোগ, ওই ঘটনায় আহত হন এক মহিলা-সহ তিন সিপিএম কর্মী। পুলিশের উপরে আক্রমণে তাঁদের কর্মী জড়িত নয় বলে সিপিএমের পক্ষে দাবি করা হয়েছে। এলাকার বিদায়ী সিপিএম কাউন্সিলর দীপঙ্কর দে-র অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত দুই সিপিএম কর্মীকেই শাসকদলের মদতে পুলিশ মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করেছে।

অন্য দিকে, এ দিন সকালে কুঁদঘাট বাস স্ট্যান্ডের কাছে বন্ধ থাকা দোকান জোর করে খুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, শাসক দলের লোকেরা পুলিশের সামনেই মারধর করেন ধর্মঘট সমর্থকদের। পরে তাড়া করে এলাকা ছাড়া করা হয় ধর্মঘট সমর্থকদের। অভিযোগ, এর পরেই শাসকদলের ওই কর্মীরা দোকানপাট খোলার জন্য হুমকি দিতে থাকেন ব্যবসায়ীদের। পুলিশ অবশ্য ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে বাগুইআটি-কেষ্টপুরেও। অভিযোগ, সকালে শাসকদলের মোটরবাইক বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দোকান খোলার জন্য চাপ দিতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দোকানদারকে ফোন করে ডেকে এনে দোকান খুলতে বলা হয়েছে বলেও অভিযোগ। অন্য দিকে, বাগুইআটির আটঘরায় একটি পেট্রোল পাম্প খোলা নিয়ে অশান্তি হয় ধর্মঘট সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে। অভিযোগ, বন্ধ ওই পেট্রোল পাম্পটি জোর করে খুলতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা ও ধাক্কাধাক্কি। বাগুইআটি থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

বুধবার রাতে কসবার বোসপুকুর রোডে সিপিএমের একটি পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই হামলার সঙ্গে যুক্ত। ওই রাতেই বেহালার সিরিটি এলাকায় সিপিএমের একটি পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পরে বেহালা থানায় সিপিএমের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেই কসবার রথতলা বড়বাগান থেকে তিনটি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ দিন কলকাতা এবং হাওড়ায় বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ধর্মঘট সমথর্ক এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে। ধর্মঘট শুরু হওয়ার পরেই সকাল সাতটা নাগাদ প্রথম সরকারি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে কলেজ স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় কয়েক জন দুষ্কৃতী ‘এস টু এ’ রুটের একটি বাসের কাচ লক্ষ করে ঢিল ছুড়ে পালায়। আচমকা এমন ঘটায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অন্য দিকে, হাওড়ায় শহর ও শহরতলিতে মোট ২১টি বাস ও বাসগুমটি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৮টি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ধর্মঘট বিরোধী শাসকদলের বিরুদ্ধে। অন্য তিনটি বাস ভাঙচুরে ধর্মঘট সমর্থকেরা জড়িত বলে দাবি পুলিশের। সকালে হাওড়ায় প্রথম ঘটনাটি ঘটে লিলুয়া থানা এলাকার কোনা বাস স্ট্যান্ডে। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন বাস নামাননি কোনা-ধর্মতলার রুটের মিনিবাস চালকেরা। অভিযোগ, বেলা ১১টা নাগাদ তৃণমূলের সমর্থকেরা ওই বাস স্ট্যান্ডে ঢুকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দাঁড়িয়ে থাকা ১০টি মিনিবাস ও দু’টি ৫৭এ রুটের বেসরকারি বাস ভাঙচুর করেন। ধর্মঘটের দিন বাস না চালানোর জন্য স্ট্যান্ডে ঢুকে ভাঙচুরের পরের ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকড়ায়। অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকেরা বাঁকড়া-পার্ক সার্কাস রুটের ৬টি মিনিবাস ভাঙচুর করা হয়। যদিও বাস ভাঙচুরের অভিযোগ মানতে রাজি হননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। হাওড়ার তৃণমূল জেলা সভাপতি (শহর) তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ঠিক নয়। তৃণমূল কেন ভাঙচুর করবে? বাস না পেয়ে স্থানীয়েরাই ভাঙচুর করেছেন।’’

বেসরকারি বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি, ধর্মঘট সমর্থকদের বিরুদ্ধে দু’টি সরকারি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ গোলাবাড়ি থানা এলাকায় ২টি ট্রাম কোম্পানির বাস ভাঙচুর করা হয়। এর পরেই ফোরশোর রোডে ভাঙচুর হয় আরও একটি বেসরকারি বাস। বাস ভাঙচুরের ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য কলকাতায় ১৭ জনকে এবং হাওড়ায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

ধর্মঘটে অবশ্য আক্রান্ত হয়েছে খোদ শাসকদলও। নারকেলডাঙ্গা নর্থ রোডে এক তৃণমূলকর্মীর গা়ড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে ওই এলাকার এক তৃণমূলকর্মী শিবু ঘোষ অভিযোগ করেন, তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের অভিযোগ, ওই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় কয়েক জন কংগ্রেসকর্মী জড়িত। তৃণমূলের ওই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন এলাকার কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিথ্যে অভিযোগ করছে শাসকদল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE