এ বার ‘গাঁধীগিরি’র পথে হাঁটতে চলেছেন বাসমালিকেরা।
পুলিশি জুলুমে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। প্রতিবাদে বহু আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে তাই এ বার নিজেরাই কলকাতার পথে যানশাসন করবেন বাসমালিকেরা। সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিল বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের শেষে বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী হবে শহর।
বাস-ট্যাক্সি-সহ এ শহরের প্রায় সব গণপরিবহণ মাধ্যমের মালিকেরাই পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে সরব। বেশির ভাগ সংগঠনেরই অভিযোগ, অকারণে পুলিশের জরিমানা করার প্রবণতা দিন-দিন বাড়ছে। ফলে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে চালক এবং মালিকদের। সম্প্রতি পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে এ শহরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছেন ট্যাক্সিচালকেরা। কিন্তু সে আন্দোলনের রাস্তা ছিল ধর্মঘট কিংবা মিটিং-মিছিল। তাতে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে শহরের নিত্যযাত্রীদের। তাই পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে নিজেরাই পুলিশের কাজ করে বাসমালিকদের এমন প্রতিবাদের রাস্তা নিঃসন্দেহে অভিনব।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থকে আজ, সোমবার এই প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন তাঁরা। তপনবাবু বলেন, “আমরা বারবার মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে এ ব্যাপারে জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়েই পথে নামার এই সিদ্ধান্ত।”
কিন্তু কেন এমন প্রতিবাদ?
তপনবাবুর দাবি, “নিত্যযাত্রীদের অসুবিধা করে আন্দোলন করতে চাই না আমরা। তাই এমন ভাবনা।” তাঁর অভিযোগ, “শহরে পুলিশি জুলুম বেড়েই চলেছে। যে ভাবে হোক গাড়িকে জরিমানা করে সরকারের তহবিল ভরানোই এখন পুলিশের মূল লক্ষ্য। অথচ দুর্ঘটনা ও বে-লাগাম যান চলাচল বন্ধ করতে যাত্রী এবং চালক, উভয় পক্ষের সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সেটাই পুলিশ করছে না। তার প্রতিবাদেই আমরা যানশাসনে রাস্তায় নেমে চালক ও যাত্রীদের সচেতন করতে চাই। এতে পরোক্ষে পুলিশও বুঝবে, জরিমানা করাই যানশাসনের একমাত্র উপায় নয়।” উদাহরণ হিসেবে বাসমালিকদের বক্তব্য, “এ শহরে বেশির ভাগ জায়গাতেই নির্দিষ্ট বাসস্টপ নেই। যাত্রীরা যত্রতত্র হাত দেখিয়ে গাড়ি থামান। চালকেরাও দাঁড়ান। তা জরিমানায় বন্ধ হয় না। যাত্রী এবং চালকদের সচেতনতা বাড়লেই এই বদভ্যাসও বন্ধ হবে।”
বাসমালিকেরাই জানাচ্ছেন, এমন প্রতিবাদ এ শহরে নতুন নয়। এর আগে ১৯৯৯ সালের ২০ ডিসেম্বর একই রকম প্রতিবাদে নেমেছিল জয়েন্ট কাউন্সিল। সে বার কলকাতার ২৩টি মোড়ে জয়েন্ট কাউন্সিলের ১১০০ স্বেচ্ছাসেবক যানবাহন এবং পথচারী নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নেমেছিলেন। প্রায় সেই ঢঙেই এ বার ফের জয়েন্ট কাউন্সিল শহরের কয়েকটি ব্যস্ত মোড়ে এমন যানশাসন ও পথচারী নিয়ন্ত্রণে নামতে চাইছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, এক মাস ধরে সপ্তাহে তিন দিন করে এই কর্মসূচি নেবেন তাঁরা।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আর এক বাসমালিক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট। সংগঠনের নেতা দীপক সরকারের বক্তব্য, “এমন অভিনব উদ্যোগ সব সময়েই স্বাগত। আমরাও এই আন্দোলনে সামিল হতে পারি।” তবে আন্দোলনের ভাবনাকে স্বাগত জানালেও তাতে আখেরে লাভ হবে না বলেই মনে করেন দীপকবাবু। তাঁর দাবি, “পুলিশ তো কোনও কারণ ছাড়াই চালকদের জরিমানা করছে। তাদের লক্ষ্য তো শুধুমাত্র সরকারের তহবিল ভরানো। এর বিরুদ্ধে আমাদের সরব হতে হবে।”
বাসমালিকেরা যে জুলুমের অভিযোগ তুলছেন, তা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা। কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের বক্তব্য, “কোনও রকম জুলুম হচ্ছে না। বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সি চালকদের নিয়ম মানতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেই ওঁরা পুলিশের উপরে চাপ তৈরি করতে চাইছেন। কিন্তু ট্যাক্সিচালকদের আন্দোলনেও আমরা যেমন পিছু হটিনি, তেমনই বাসমালিকদের আন্দোলনেও পুলিশ শিথিল হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy