প্রতীকী ছবি।
ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সময়ে পরিবেশবান্ধব এবং কম খরচের কার্যকরী জ্বালানি হিসাবে আলোচনায় উঠে এসেছিল সিএনজি বা কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস। কিন্তু গত কয়েক মাসে সিএনজির দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। আর তার ঋণাত্মক প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে সিএনজি-চালিত বাস কেনার আগ্রহে।
বেসরকারি বাস এবং অ্যাপ-ক্যাবের ক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধির দাবির বিকল্প হিসাবে সিএনজি-চালিত বাসের কথা ভাবা হয়েছিল। সেই মতো সিএনজি-চালিত বেসরকারি বাসের রুট চালু করা ছাড়াও ডিজ়েল-চালিত সরকারি বাসকে সিএনজি-চালিত ইঞ্জিনে পরিবর্তন করার তৎপরতাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু, গত কয়েক মাসে সিএনজি-র দাম যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, তা কলকাতায় এবং রাজ্যে লিটারপ্রতি ডিজ়েলের মূল্যকেও প্রায় হার মানাতে বসেছে। সংস্থা ভেদে কেজিপ্রতি সিএনজি-র দাম এখন দাঁড়িয়েছে ৯০-৯৪ টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে সিএনজি উত্তোলন ব্যাহত হওয়ার কারণেই জোগানে টান পড়েছে বলে খবর। ফলে অশোধিত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সিএনজি তৈরি করে, এমন সংস্থাগুলি এর দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বণ্টনসংস্থাগুলিও সিএনজির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলিতে যে ৩০০ ডিজ়েল-চালিত বাসকে সিএনজি-চালিত বাসে পরিবর্তন করার তৎপরতা শুরু হয়েছিল, সেই প্রচেষ্টা অনেক দিনই হিমঘরে। ইঞ্জিন বদল নিয়ে প্রযুক্তিগত সংশয় আগেই ছিল। মোটা টাকা খরচ করে গাড়িগুলিকে দীর্ঘ মেয়াদে কতটা ব্যবহার করা যাবে, সেই আশঙ্কাও ছিল। তাই ওই পরিকল্পনা মুলতুবি রাখা হয়।
এখন কেজিপ্রতি সিএনজি-র দাম ডিজ়েলের দামের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ায় সরকারি আধিকারিকেরা হাঁফ ছেড়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস ওই প্রকল্প স্থগিত হয়েছিল। না হলে আরও খারাপ দিন দেখতে হত।’’ তবে নিউ টাউনে সিএনজি-চালিত বেসরকারি বাসের যে রুট চালু রয়েছে, তার অংশীদার বাসমালিকেরা এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে। শুরুর দিকে সিএনজি-চালিত বাস নামানোর প্রশ্নে আগ্রহ ছিল অনেকটাই। ৭-৮ মাস আগে যখন সিএনজির দাম ছিল কেজিপ্রতি প্রায় ৬৪ টাকা, তখন ডিজ়েলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৯০-৯২ টাকা। পাশাপাশি, জ্বালানি হিসাবে এক কেজি সিএনজি-র কার্যকারিতা এক লিটার ডিজ়েলের তুলনায় প্রায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি। ফলে দু’দিকে লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন সেই পথ প্রায় বন্ধ। নিউ টাউনের যে রুটে সিএনজি-চালিত বেসরকারি বাতানুকূল বাস চলছে, সেখানে ২০টি বাসের রাস্তায় নামার অনুমতি থাকলেও আদতে চাকা গড়াচ্ছে ১২টির। আরও দু’টি বাস রাস্তায় নামানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ প্রসঙ্গে সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘গ্যাসের দাম বাড়ছে লাফিয়ে, জোগানও অনিয়মিত। পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাম্পও তৈরি করা যায়নি। সব মিলিয়ে সিএনজি-চালিত বাস রাস্তায় নামানো নিয়ে আগ্রহ কমছে মালিকদের।’’
সূত্রের খবর, ডিজ়েল-চালিত বাসের তুলনায় সিএনজি-চালিত বাস কিনতে প্রায় ২০ শতাংশ টাকা বেশি খরচ হয়। বাড়তি টাকা খরচ করে লাভের আশা ক্রমশ কমে আসায় পরিবেশবান্ধব বাস চালুর সম্ভাবনাও ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy