ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র
ছ’দিন আগের বেনিয়াপুকুরের স্মৃতি ফিরিয়ে দিল বৃহস্পতিবারের এন্টালি।
শুক্রবার রাতের মতো এ দিন দুপুরে এন্টালি থানার বিবিরবাগান এবং মতিঝিলেও প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গুলি চলার পাশাপাশি দুষ্কৃতীরা ওই দুই এলাকাতেই ব্যাপক হারে বোমাবাজি করেছে বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ। শুক্রবার বেনিয়াপুকুরে গুলিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ দিনের দুটি ঘটনাতেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন গুলিবিদ্ধ দুই যুবক। এ দিন বিবিরবাগানের ঘটনায় আহত শেখ আসলামের ডান পায়ে গুলি লাগে এবং মতিঝিল কলোনিতে আহত সামেদ আলি ওরফে আশুর হাতে গুলি লাগে। দু’জনকেই এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’জনের অবস্থা স্থিতিশীল।
পুলিশের দাবি, এ দিনের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বেআইনি বহুতলের প্রোমোটিং ঘিরে এন্টালিরই দু’টি দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর লড়াই। ওই বহুতলের প্রোমোটার একটি ফ্ল্যাট একাধিক ক্রেতাকে বিক্রি করেছেন বলে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সেই প্রোমোটারি এবং ফ্ল্যাটের দখলদারি নিয়েই দুই দুষ্কৃতী গোষ্ঠী দু’জায়গায় একে-অপরের উপরে গুলি চালিয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে আগেও গুলি চলেছে। গ্রেফতারও হয়েছে অভিযুক্তেরা। শহরের বুকে পরপর গুলি চালানোর ঘটনায় উদ্বিগ্ন লালবাজারের কর্তারা। এই নিয়ে গত ছ’মাসে এমন দশটি ঘটনা ঘটল বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে প্রথম গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটে বিবিরবাগানে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের হুমকির প্রতিবাদ করায় জনসমক্ষে শেখ আসলামকে গুলি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে ছোড়া হয় বোমা। গুলি-বোমার আওয়াজে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাড়াহুড়োয় এক দুষ্কৃতী মোটরবাইক ফেলে পালালে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
জনরোষে জ্বলছে দুষ্কৃতীর ফেলে যাওয়া বাইক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালে এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে এসে হুমকি দেয় নিয়াজুর নামে এক দুষ্কৃতী। পরে স্থানীয় দুষ্কৃতী কালো ও বাপির গোষ্ঠীকে নিয়ে সে হামলাও চালায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, নির্মীয়মাণ ওই বহুতলে তাকে একটি ফ্ল্যাট পাইয়ে দিতে হবে বলে অনেক দিন ধরেই চাপ দিচ্ছিল নিয়াজুর। প্রোমোটার তাতে রাজি হলেও স্থানীয় কয়েক জন ফ্ল্যাট অন্য কয়েক জনকে বিক্রি করে দেয়। অভিযোগ, তার জেরেই এ দিন সকালে এসে ওই বাসিন্দাদের হুমকি দেয় নিয়াজুর। ফের দুপুর ১টা নাগাদ বাহিনী নিয়ে সে ফিরে আসে। কেন তাকে ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে বচসা শুরু হয়। আচমকাই ওই দলটি গুলি চালাতে শুরু করে। চলতে থাকে বোমাবাজিও। তখন বহুতলের পাশেই ছিল প্রোমোটারের সহযোগী শেখ আসলাম। তাঁর পায়ে গুলি লাগে। এলাকার মানুষ তখন ওই দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে বাইক ফেলে চম্পট দেয় তারা। আসলামের ভাই জাহিদের দাবি, গত কয়েক দিন ধরেই নিয়াজুররা ভয় দেখাচ্ছিল। নিয়াজুরকে ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করা হোক, তা এলাকার মানুষ চান না। লালবাজার সূত্রের খবর, নিয়াজুর বাহিনী গুলি চালানোর পরে এলাকাবাসীরা যখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে মতিঝিলে ফের দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হন আর এক যুবক। স্থানীয় আর এক দুষ্কৃতী দল নেটো ও বাবলুর বাহিনী ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ সামাদ আলি কালো ও বাপির ঘনিষ্ঠ বলে এলাকাবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মিনিট চল্লিশের মধ্যে ঘটা দু’টি ঘটনার মধ্যে যোগ রয়েছে। পুলিশের দাবি, বিবিরবাগানের পাশেই থাকে নেটো। বোমা-গুলির শব্দে নেটোদের ধারণা হয়েছিল, তাদের উপরেই হামলা করা হয়েছে। সেই হামলার বদলা নিতেই মতিঝিলে কালো ও বাপির দলবলের ওপর বোমা-গুলি নিয়ে হামলা করে তারা। তাতেই আহত হন সামাদ আলি নামে ওই যুবক।
লালবাজার সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগেও এন্টালিতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল এই দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলেও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছে ওই দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy