পরিবেশ-বিরোধী: বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের জাতীয় পতাকা। মঙ্গলবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যেন প্লাস্টিকের পতাকা ব্যবহার না করা হয়— আগামী রবিবার, স্বাধীনতা দিবসের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে।
অবশ্য শুধু এ বছরই নয়। এর আগেও একাধিক বার প্লাস্টিকের পতাকা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় সেই পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞার জন্যই শুধু নয়, বরং জাতীয় পতাকার অবমাননা যাতে না হয়, তার জন্যই পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বনিয়ন্ত্রণ দরকার।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত পরামর্শবিধি (অ্যাডভাইজ়রি) রাজ্য সরকারের কাছে এসে পৌঁছেছে। তাতেও উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের মধ্যেও পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই সমস্ত রাজ্যকে এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচারের জন্য বলা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে এ-ও জানা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকার প্রদর্শন, সম্মানজ্ঞাপন সংক্রান্ত নিয়মবিধি ‘ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া ২০০২’ এবং ‘দ্য প্রিভেনশন অব ইনসাল্টস টু ন্যাশনাল অনার অ্যাক্ট, ১৯৭১’-ও পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যে হেতু প্লাস্টিকের তৈরি পতাকা জৈব ভাবে পচনশীল নয়, তাই এই পতাকা যত্রতত্র পড়ে থাকে। যার ফলে জাতীয় পতাকার অবমাননার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে প্লাস্টিকের বদলে কাগজের পতাকা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রেও যাতে পতাকার সম্মান বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সে কারণে কাগজের পতাকা যথাযথ সম্মান দিয়ে সরিয়ে ফেলার কথাও বলা হয়েছে।
যদিও এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তা কতটা মান্য করা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, এই পরামর্শবিধি সাম্প্রতিক সময়ে জারি করা হয়েছে, এমনটা নয়। বরং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়। কিন্তু তার পরেও তা অমান্য করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের বক্তব্য, ‘‘ছোটদের হাতে ছোট আকারের জাতীয় পতাকাই দিতে হবে। কিন্তু সেই পতাকার যাতে কোনও ভাবে অসম্মান না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। উদযাপনের পরে জাতীয় পতাকা যত্রতত্র পড়ে থাকল, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’
পরিবেশবিদদের একাংশের আবার বক্তব্য, প্লাস্টিকের পতাকা তৈরি বন্ধ করা না গেলে পুরোপুরি ভাবে এর ব্যবহার আটকানো সম্ভব নয়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক তৈরির উৎস যতক্ষণ না বন্ধ করা যাবে, ততক্ষণ এই সমস্যা কাটবে না। কেউ না কেউ ঠিক প্লাস্টিকের পতাকা তৈরি করবে। তা ব্যবহারও হবে।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, জাতীয় পতাকার সম্মান প্রদর্শনে কেন সরকারের নিষেধাজ্ঞার উপরে নির্ভর করতে হবে। কেন এ ব্যাপারে মানুষ নিজেরাই সচেতন হবে না? তাঁর কথায়, ‘‘আগে তো কাগজের পতাকাই ব্যবহার করা হত। তাতে তো স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে কোনও ভাটা পড়েনি। তা হলে কেন প্লাস্টিকের পতাকার প্রয়োজন পড়ছে? এ বার স্বাধীনতা উদযাপন হোক কাগজের পতাকাতেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy