অঝোরে: দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেনের পরে গৌর দে লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও ধরা পড়ল ফাটল। নিজের ঘরের ফাটল দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বন্দনা মণ্ডল (বাঁ দিকে)। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে বৌবাজারের বিপর্যয়ে গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বুধবার সকালে সেকরাপাড়া লেনের আরও একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। ওই এলাকার ২০টি বাড়িকে নতুন করে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেনের পরে এ দিন পাশের গৌর দে লেনের বিভিন্ন বাড়ি থেকেও বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আতঙ্ক আর ক্ষোভ দুই-ই বাড়ছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
পুলিশ এ দিনও দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকড়াপাড়া লেনের বিপজ্জনক এলাকা ঘিরে রেখেছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় ঘটনাস্থলে যায় বিশেষজ্ঞদল। সেই দলে ছিলেন সিঙ্গাপুর থেকে আসা সুড়ঙ্গবিদ জন ব্রিজ ক্রিস্টোফার এবং মুম্বই থেকে আসা ভূতত্ত্ববিদ মণীশ কুমার। বিভিন্ন গলিতে ঢুকে নম্বর ধরে ধরে বাড়ি পরখ করেন তাঁরা। লাল রং দিয়ে বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিতও করে দেন। বিপর্যয় মোকাবিলার তৎপরতার মধ্যেই সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেকরাপাড়া লেনের ৯ নম্বর বাড়ির বেশির ভাগ অংশ। রবিবারেই ওই বাড়ির একটা দিক ধসে পড়েছিল। তার পাশের বাড়িটিও হেলে পড়ে অন্য বাড়ির গায়ে। এ দিন বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়।
বেলা আড়াইটে নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয় মেট্রোকর্মীদের ঘিরে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁদের যে-সব হোটেলে রাখা হয়েছে, সেখানে ঠিকমতো খাবার মিলছে না। সমস্যা আছে জলেরও। কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেন মেট্রোকর্মীরা। এর পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেঙে পড়া বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী।
বাড়ি বৃত্তান্ত
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের জেরে যে-সব বাড়ি এখনও পর্যন্ত ভেঙেছে বা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে
দুর্গা পিতুরি লেন
• ভেঙেছে ১৩এ এবং বি, ১৪ নম্বর, ১২ নম্বর, ১১/১ বাড়ি।
• ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এ এবং ৬এ/১ নম্বর বাড়ির অবস্থা বিপজ্জনক। যে-কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
সেকরাপাড়া লেন
• বুধবার ৯ নম্বর বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছে।
• বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে ৬এ, ৬এ/১, ১০/২, ৭এ, ৭বি, ৮এ, ৮বি, ৯, ১০, ১০/১, ১১, ১২, ১৩ বাড়ি।
শ্যামল সেন নামে গৌর দে লেনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাতে ঘুম হচ্ছে না। পাশের গলিতে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ছে। শুধু মনে হচ্ছিল, কবে আমাদের বলবে! শেষ পর্যন্ত সেটাই হল। এখন দেখি, কোথায় গিয়ে উঠতে হয়!’’ শ্যামলবাবুর এক প্রতিবেশীর দাবি, ‘‘মাসখানেক আগে মেট্রোর লোকজন এসে বলেছিলেন, সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য ড্রিল করা হবে। কয়েক দিন অন্য জায়গায়
থাকতে হতে পারে। কিন্তু এ তো দেখছি, সব বাড়িই একের পর এক ভেঙে পড়ছে!’’ ভেঙে পড়া ৯ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা চিরঞ্জিৎ সেন বলেন, ‘‘আমার পাখিগুলো চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। ভেঙে পড়ার আগে অন্তত বাড়িটায় একটু ঢুকতে দিতে পারত!’’
দুর্গা পিতুরি লেনের কিছু বাড়িতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বার করার জন্য এ দিন কয়েক জনকে ঢুকতে দেওয়া হয়। স্থানীয় একটি কলেজের ক্যাম্প থেকে পুলিশের ‘টোকেন’ দেখিয়ে বাড়িতে ঢোকা গিয়েছে। শুভাশিস সেন নামে এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ভিতরে সব পাঁচিলেই ফাটল ধরেছে। বাড়িটা পুরো নড়ছে। সোনার জিনিস, নথিপত্র আর মেয়ের স্কুলের বইখাতা নিয়েই বেরিয়ে এসেছি।’’ তরুণকুমার বড়াল নামে এক ব্যক্তি হেলে পড়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’হাত জোড় করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। বললেন, ‘‘স্রেফ ঠাকুরদের বার করে আনার জন্যই বাড়িতে ঢোকাটা খুব দরকার ছিল। দেখি, এই ভয় নিয়ে আরও কত দিন চলতে হয়!’’
কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড বা কেএমআরসিএলের কর্তাদের দাবি, ধস ঠেকাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজের জন্য যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। লিখিত চিঠি দিয়ে দায় স্বীকার করেও নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কেএমআরসিএলের বোর্ড মিটিংয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy