ঠাঁইহারা: জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ছাড়ছেন বাসিন্দারা। শনিবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
প্রতিবেশীকে শুক্রবার রাতেই নোটিস দিয়ে সরতে বলে গিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাত পর্যন্ত তিনি নিজে নোটিস না পেলেও বাড়ি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন স্বপ্না মল্লিক। গত রবিবার সকাল থেকেই নিজের বাড়ির গেটের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে তিনি। আগন্তুক কাউকে দেখলেই কাছে ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘আমার বাড়িটা ঠিক আছে তো?’’
পুত্রবধূ আর দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ১/৩ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িতে থাকেন স্বপ্নাদেবী। গত ডিসেম্বরে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন গুয়াহাটিতে। স্বপ্নাদেবীর কথায়, ‘‘নাতি-নাতনি আতঙ্কে স্কুল-কলেজে পর্যন্ত যেতে পারছে না। আমরা কেউ রাতে ঘুমোতে পারছি না। বাড়ির কথা ভেবে ছেলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে শনিবার রাতেই বিমানে কলকাতা ফিরছে।’’
স্বপ্নাদেবীর মতো আতঙ্কে আর অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন দুর্গা পিতুরি লেন ও গৌর দে লেনের অন্য বাসিন্দারাও। গৌর দে লেনের একটি পুরনো বাড়ির বাসিন্দা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টা ও রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মেট্রোর তরফে আমাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছিল, বাড়ি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মেট্রো এবং পুলিশের প্রতিনিধিরা এসে বলেন, আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’’ একই বক্তব্য দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা, পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী পূজা লালের। মা ও ভাইকে নিয়ে দুর্গা পিতুরি লেনের একটি তিনতলা বাড়ির নীচের তলায় থাকেন পূজা। বাবা বছর কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। পূজার কথায়, ‘‘গত শনিবার চোখের সামনে একটির পর একটি বাড়ি ভেঙে যেতে দেখে আর অফিসে যেতে পারছি না। মাকে নিয়ে বাড়িতেই রয়েছি। গত কাল প্রশাসনের তরফে আমাদের জানানো হয়েছিল, ভয়ের কোনও কারণ নেই। অথচ, আজ সকালে মেট্রোর কর্মীরা এসে আমাদের জানালেন, বাড়ি ছাড়তে হবে। কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’
বৌবাজারে বিপর্যয়ের এক সপ্তাহ পরে শনিবার নতুন করে কোনও বাড়ি ভেঙে না পড়লেও আতঙ্ক ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ দিন দুপুরে দুর্গা পিতুরি লেন ও গৌর দে লেনে গিয়ে দেখা গেল, নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বার করে আনতে ব্যস্ত বাসিন্দারা।
চোখের সামনে বাড়ি ভেঙে পড়তে দেখেছিলেন ১৪/১এ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা দীপককুমার গুপ্ত। বয়স্ক বাবা-মা, দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে হোটেলে রয়েছেন পেশায় আলোকচিত্রী দীপকবাবু। এ দিন দুপুরে ভ্যানে করে ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে বেশ কিছু জিনিস বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। দীপকবাবুর কথায়, ‘‘আমার বাড়িতে একটি দামি ক্যামেরা ছিল। বাড়ি ভেঙে পড়ায় সেটির খুব ক্ষতি হয়েছে।’’ দুর্গা পিতুরি লেনের ফুটপাতে তখন ডাঁই করে রাখা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আনা বিভিন্ন জিনিসপত্র। ১১ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িতে থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী চিন্ময় দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির ভিতর থেকে জিনিসগুলি বার করে আনা হয়েছে। কিন্তু সে সব হোটেলে রাখার জায়গা নেই। কোথায় রাখব, জানি না।’’ শনিবার রাতেও দেখা গেল, দুর্গা পিতুরি লেনের ফুটপাতে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy