তল্লাশি: পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের চিনার পার্কের একটি ফ্ল্যাটে হানা ইডি-র আধিকারিকদের। বাইরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
কথা ছিল, বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে দেখেও চুপ থাকার পরিবর্তে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা করে নেবেন এক পক্ষ। আইনি কড়াকড়ি না করার শর্তে প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা নেবেন অন্য পক্ষ! এর পরে জলের কল, বিদ্যুতের মিটার বাবদও আলাদা আলাদা হিসাব রয়েছে আলাদা আলাদা লোকের সঙ্গে। অভিযোগ এমনই।
কিন্তু গত কয়েক দিনে ধীরে ধীরে যেন সব থমকে গিয়েছে! টাকা নিয়ে কাজ করতে দেওয়া তো দূর, সমস্ত লেনদেনের বিষয় থেকেই ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে খবর। সর্বক্ষণ যেন কী হয়, কী হয় ভাব! সূত্রের খবর, বেহালা, গড়িয়া, টালিগঞ্জ, ভবানীপুর, তিলজলা, তপসিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মানিকতলা, বেলেঘাটা, কাশীপুরের মতো বেআইনি নির্মাণের জন্য প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসা এলাকাগুলিতে এই ধরনের নির্মাণকাজ গত সোমবার থেকে বন্ধ। ভুক্তভোগী অনেকেরই দাবি, নেতার আশীর্বাদধন্য পাড়ার যে মাতব্বরেরা দু’দিন আগে পর্যন্ত টাকা চেয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন, এখন তাঁদের বার বার ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরে এখন কাজ আটকে থাকার কথা বলতে গেলে আবার নেতা-দাদারা বলছেন, ‘‘চার দিকে সব তল্লাশি হচ্ছে জানেন না? এখন কাজ বন্ধ। সব থিতিয়ে গেলে কাজ হবে।’’
খোঁজ করে জানা গেল, শুধু বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রেই নয়। টাকা নিয়ে সমঝোতা করে দেওয়ার সমস্ত কারবারেই গত কয়েক দিন ধরে এমন ভয়ের পরিবেশ। এর মধ্যে নির্মাণ ক্ষেত্রের পরেই রয়েছে পুর পরিষেবা-ভিত্তিক কাজ। বাড়ি ওঠা তো বটেই, একই রকম ভাবে মন্দা দেখা দিয়েছে যেমন খুশি ভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার রমরমায়। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বস্তি এলাকায় এক বাড়িতে দু’টি জলের কলের লাইন বা এক মিটার বক্সে একাধিক মিটার ঢোকানোর আবেদন ঘুরপথে করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের সেই কাজও এগোচ্ছে না।
পুর পরিষেবার পরেই যে বিষয়ে সতর্কতা সব চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে, তা হল ক্ষমতার জোরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস এবং শহরের রাস্তায় যেমন খুশি পার্কিং ব্যবসা চালানোর রমরমায়। গত কয়েক দিনে এই দুই ক্ষেত্রেও ভাটার টান। শহরতলির বহু জায়গায় ভেড়ির তোলাবাজি এবং জমি-বাড়ির দালালির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে একই ছবি।
কলেজ স্ট্রিট এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘আমার বড়দা মারা গিয়েছেন। দাদার চাকরিটা ওর ছেলে পাবে। সেই জন্য ঘুরে ঘুরে জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে গিয়েছিল। সরকারি চাকরি নাকি টাকা না দিলে হয় না, বলেছিলেন এক সরকারি অফিসার। আমাদের থেকে এক লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। ওই টাকা নাকি হাত ঘুরে অনেক উঁচু পর্যন্ত যায়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কোনও মতে ৬০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার পরে এখন বাকিটা দিতে চাইলেও আর নেওয়া হচ্ছে না। ফোন করলেই কেটে দেওয়া হচ্ছে। ‘‘গত কাল ফোন ধরে বলা হয়েছে, এখন সময় খারাপ। পরিস্থিতি অনুকূল হলে ফোন করা হবে।’’— দাবি ওই ব্যক্তির।
বাড়ির কলে জলের জোর কমে যাওয়ায় ফেরুলের কাজ করানোর আবেদন করেছিলেন মধ্য কলকাতার একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর জন্যেও ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। এখন আর টাকাও নিচ্ছে না, কাজও হচ্ছে না।’’
কলকাতায় নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার কর্তার আবার অভিযোগ, ‘‘হরিদেবপুর এলাকায় একটি জমিতে পাঁচিল তোলার কাজে নেমেছিলাম। তার জন্য আমাদের থেকে দু’লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠানো হয়। কেন দেব? এই নিয়ে ঝামেলার পরে এক নেতার কাছে যাই। যাঁরা টাকা চেয়েছিলেন, তাঁদের ফোন করে বুঝিয়ে বলেন তিনি। কিন্তু লাভ হয়নি। যাঁরা টাকা চেয়েছিলেন, তাঁরা পরে দেখা করে বলেন, ওই নেতার ভাগের ২০ হাজার টাকা কম দেবেন, কিন্তু বাকিটা দিতেই হবে। ঘটনাচক্রে, গত চার দিন ধরে তাঁদের ফোন করেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’’
বেলেঘাটার এমনই এক ভুক্তভোগীর যদিও মন্তব্য, ‘‘খবর রয়েছে, প্রায় ১৫০০ জনেরও বেশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এই মুহূর্তে রাজ্যে নজরদারি চালাচ্ছেন। এর পরে কোথায় হানা আর কোথায় তল্লাশি, এই ভেবেই এখন সবাই সতর্ক। কিন্তু পরে সব থিতিয়ে গেলে আবার যে কে সে-ই পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সেটাই দেখার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy