এই পাইপের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় সুবীর গোস্বামীর দেহ। বুধবার, পর্ণশ্রীতে। নিজস্ব চিত্র
বছর পঞ্চাশের এক ভবঘুরে প্রৌঢ়ের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে তাঁর আত্মীয়ের খোঁজ করতে গিয়ে বুধবার বিপাকে পড়ে গেল পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। মৃতের স্ত্রী প্রথমে স্বামীর দেহ শনাক্ত করলেও পরে বলে দেন, ওই ব্যক্তি তাঁর স্বামী নন। মহিলা এ-ও বলেন, ‘‘পুলিশের ভুল হয়েছে। আমার স্বামীকে আজই আহত অবস্থায় কয়েক জন উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এই দেখে এলাম।’’
পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, গত ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে ছিলেন না ওই মহিলা। পারিবারিক কিছু কারণে স্বামীর মৃতদেহেরও আর দায়িত্ব নিতে চাননি তিনি। ওই থানার এক পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘মৃতের বৃদ্ধা মা আছেন শুনেছি। আমরা এ বার ওই বৃদ্ধার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। প্রয়োজনে পুলিশই শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করবে।’’
এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ পর্ণশ্রী থানায় খবর যায়, এলাকার করুণাময়ী আশ্রম মাঠে একটি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। পুলিশ গিয়ে দেখে, মাঠে পড়ে থাকা একটি অব্যবহৃত জলের পাইপের মধ্যে পচাগলা ওই দেহটি পড়ে আছে। ওই ধরনের পাইপ ভূগর্ভে বসানো হয়। মৃতের শরীরে কোনও পোশাক নেই। মুখ এবং শরীরের বেশির ভাগ অংশেই পচন ধরে গর্ত হয়ে গিয়েছে। এক কাগজকুড়ানি ওই দৃশ্য দেখতে পেয়ে পাড়ার লোকেদের জানান। পুলিশ দেহটি বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পরে জানা যায়, মৃতের নাম সুবীর গোস্বামী (৫০)। বেশ কিছু দিন ধরে ওই পাইপের মধ্যেই থাকছিলেন তিনি। আশপাশের বাড়ি থেকে খাবারের উচ্ছিষ্ট চেয়ে খেতেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পাশেই একটি জলাভূমির ধারে আবর্জনার স্তূপ। সেখানেই পরপর রাখা পাইপগুলি। তার মধ্যে একটিতে ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। পাইপের মধ্যে ছেঁড়া পোশাক, জঞ্জালের স্তূপ। এক দিকে ঝুলছে একটি চাঁদমালা। স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘ওইখানেই দেহটা পড়ে ছিল।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুবীরের বাড়িতে। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর আগেই ওই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন সুবীর। স্ত্রী শাশ্বতীর সঙ্গে তাঁর মা-বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কয়েক বছর পরে মানসিক ভারসাম্যহীন সুবীরকে দেখতে পান এলাকার লোকজন। তার পর থেকে ওই পাইপের ভিতরেই থাকতে শুরু করেন তিনি।
তত দিনে সুবীরের বৃদ্ধা মা-ও ওই বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছিল আগেই। স্বামী ছিলেন সরকারি চাকুরে। তাঁর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলে। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পরে ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান তিনি।
সুবীরের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হলে তাঁর স্ত্রী প্রথমে স্বামীর মৃত্যুর খবর উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশ ভুল করেছে। এই তো, থানা থেকে এলাম। পুলিশই বলল, মাঠ থেকে যে পচাগলা দেহ মিলেছে, সেটা আমার স্বামীর নয়। আমার স্বামী এসএসকেএমে ভর্তি। বেঁচে আছেন।’’ সেখানে দাঁড়িয়েই পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরে মহিলা বললেন, ‘‘বাঁচুক আর মরুক। আমি আর কিছুর মধ্যেই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy