কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে ঘিরে ব্যাপক ধস্তাধস্তি। নিজস্ব ছবি।
চরম বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যের গ্রাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বেশ কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের হাতে বেনজির ভাবে হেনস্থা হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বাইরে নিয়ে যেতে পারলেন না তাঁকে। অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েও তাঁকে উদ্ধার করা গেল না সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশকে ঢুকতে দিতে রাজি হননি উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ফলে প্রবল অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে এখনও আটকে রয়েছেন বাবুল।
সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) বৃহস্পতিবার নবীন বরণের আয়োজন করেছিল বৃহস্পতিবার। সেই উপলক্ষে একটি আলোচনাসভার আয়োজনও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ দিন দুপুরে বাবুল সুপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছতেই বিক্ষোভ শুরু করে একদল পড়ুয়া। ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে বাবুলের পথ আটকানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পিছু হঠেননি, তিনি অনুষ্ঠানস্থলের দিকে এগোতে থাকেন। তার পরেই শুরু হয় শারীরিক ভাবে বাবুলকে হেনস্থা করা। তাঁকে ঘিরে ধরে কিল, চড়, ঘুসি, লাথি চলতে থাকে। তাঁর চুলের মুঠি ধরে টানার দৃশ্যও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
নিরাপত্তারক্ষীদের চেষ্টায় কোনওক্রমে অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট হলে পৌঁছন বাবুল। সেখানে অনুষ্ঠান সেরে তিনি যখন বেরতে যান, তখন আরও বড় জমায়েত নিয়ে পথ আটকায় বিক্ষোভকারীরা। ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে বাবুল সুপ্রিয় বেরতে পারছেন না দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও কিছু জওয়ানকে সেখানে পাঠানো হয়। তবে বাহিনী বলপ্রয়োগের রাস্তায় হাঁটেনি, ফলে বাবুল সুপ্রিয়কে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারও করা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে।
দু’দফার বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে মারধর তো করা হয়েছেই, তাঁর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে ছুড়ে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস নিজে বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একটা পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বাবুল এবং সুরঞ্জন, দু’জনেই পড়ে গিয়ে চোট পান বিক্ষোভকারীদের ধাক্কাধাক্কিতে।
আরও পড়ুন: রাজীবকে পেতে মরিয়া সিবিআই, আইপিএস মেস ঘুরে হোটেলের রান্নাঘরেও ঢুকলেন গোয়েন্দারা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, সে খবর আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেও পৌঁছয়। তিনি উপাচার্যকে নির্দেশ দেন যে কোনও মূল্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করতে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ডাকার পরামর্শও দেন রাজ্যপাল। একই অনুরোধ বাবুল নিজেও করেন। কিন্তু উপাচার্য তাতে রাজি হননি। তিনি জানিয়ে দেন যে, পদত্যাগ করতে রাজি আছেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ ডাকবেন না কিছুতেই।
তুমুল অশান্তির মধ্যে পড়ে গিয়ে চোট পাওয়ার জেরে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অসুস্থও হয়ে পড়েন। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুরঞ্জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বাবুল সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মারতে মারতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছেন। তিনি ক্ষমা না চাইলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:রাজীব প্রশ্নে উষ্মা, অমিতের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের পর মমতা বললেন, কথা হয়েছে এনআরসি নিয়ে
বাবুল সুপ্রিয় বিক্ষোভের মাঝে দাঁড়িয়েই বলেন, ‘‘সকলেই দেখেছেন, আমাকে কী ভাবে মারধর করা হয়েছে। কিল, চড়, ঘুসি মারা হয়েছে, চুল ধরে টানা হয়েছে, লাথি মারা হয়েছে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, তা কোন ধরনের গণতন্ত্রের পরিচয়— সে প্রশ্নও তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরও কিন্তু বাবুলকে ঘিরে এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছে না। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘এই ভাবে কাউকে হেনস্থা করা যায় না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে তাকে সমর্থন করতে পারছি না।’’ বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীও এই ঘটনাকে সমর্থন করেননি। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি এই ঘটনা ঘটিয়েছে, নাকি বিজেপিই লোক দিয়ে এই কাণ্ড করাল সহানুভূতি টানতে, সুজন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। গণতন্ত্রের পরিসরটাকে আমরা এই ভাবে ছোট করে আনতে পারি না।’’
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপাচার্যের ভূমিকায়। উপাচার্য উপযুক্ত পদক্ষেপ না করাতেই পরিস্থিতির এই রকম অবনতি ঘটেছে বলে রাজভবন সূত্রে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের একজন মন্ত্রীকে বেআইনি ভাবে আটকে রাখা হয়েছে— বিবৃতিতে এই রকম গুরুতর কথাই লিখেছে রাজভবন।
আরও পড়ুন: বিনা ছাড়পত্রে উদ্বোধনে ডাক কেন? ডেউচায় না যেতে মোদীকে আর্জি বিজেপি সাংসদের, প্রশ্ন উদ্দেশ্য নিয়েও
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস কোনও পদক্ষেপ না করায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ফোন করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে-কে। অবিলম্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধারের বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দেন তিনি। রাজ্যপাল নিজেও পৌঁছন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy