Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Madhyamik

Madhyamik: অনটনে পূরণ করা হয়নি ফর্ম, আক্ষেপ কিশোরের

বৃহস্পতিবার সকালে গিরিশ মঞ্চের উল্টো দিকে নিজেদের ফলের দোকানে বসে আম ওজন করছিল অয়ন।

স্কুলছুট: ফলের দোকানে অয়ন মণ্ডল। বৃহস্পতিবার, বাগবাজারে।     নিজস্ব চিত্র

স্কুলছুট: ফলের দোকানে অয়ন মণ্ডল। বৃহস্পতিবার, বাগবাজারে। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৫:২৫
Share: Save:

শুধু ফর্মটা পূরণ করতে হত। তা হলেই নামের পাশে বসে যেত মাধ্যমিক পাশের তকমা। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে আর্থিক অনটনের জেরে সেটুকুও করে উঠতে পারেনি বাগবাজারের বাসিন্দা, বছর সতেরোর অয়ন মণ্ডল। যার জেরে মাধ্যমিকের গণ্ডিটুকু আর পেরোনো হল না তার। বাবার সঙ্গে তাঁর ফলের দোকানে বসতে হয় অয়নকেও। দোকানে বসে বিক্রিবাটার ফাঁকেই এখন ফর্ম পূরণ না-করার জন্য থেকে থেকে আফশোস হচ্ছে তার।

বৃহস্পতিবার সকালে গিরিশ মঞ্চের উল্টো দিকে নিজেদের ফলের দোকানে বসে আম ওজন করছিল অয়ন। গত বছর প্রথম বার মাধ্যমিক দিলেও ভৌতবিজ্ঞান ও অঙ্কে পাশ করতে না-পারায় কম্পার্টমেন্টাল পেয়েছিল সে। শ্যামপুকুরের মহারাজা কাশিমবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের ছাত্র অয়নের এ বছর ফের মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল। কিন্তু বাবার সঙ্গে দোকান সামলাতে গিয়ে পরীক্ষার ফর্ম আর পূরণ করা হয়নি তার। স্কুলছুটদের তালিকায় ঢুকে গিয়েছে সে।

এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছিল ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৯ জন। গত মঙ্গলবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ফল প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল ১১ লক্ষ ১২ হাজারের মতো পড়ুয়া। তাদের সঙ্গে ছিল সিসি এবং কম্পার্টমেন্টাল পাওয়া আরও দু’লক্ষ পড়ুয়া। সেই হিসেবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৩ লক্ষ। কিন্তু দেখা যায়, মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণ করেছে ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৯ জন। প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে বাকি পড়ুয়ারা কোথায় গেল?

শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় এবং অনলাইন ক্লাসের সুযোগ না-থাকায় পড়ুয়ারা অনেকেই হয়তো আর্থিক সঙ্কটের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। তাদের অনেকেই যে কাজে যোগ দিয়েছে, সেই খবরও পাওয়া যাচ্ছিল। শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, পরে সেটাই প্রমাণিত হল।

অয়নের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কুমকুম দত্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমরা বার বারই ওকে ফর্ম পূরণ করতে বলেছিলাম। ওকে বলি, কম্পার্টমেন্টাল পেয়েছিস তো কী হয়েছে, আবার চেষ্টা কর। নিশ্চয়ই পাশ করতে পারবি। এ বার তো ফর্মটা পূরণ করলেই ও পাশ করে যেত। পাশ করলে হয়তো পড়াশোনায় উৎসাহও পেত।’’ সেই সঙ্গেই কুমকুমদেবীর খেদ, ‘‘আমরাও হয়তো ওকে ঠিক মতো উৎসাহ দিতে পারিনি। তাই স্কুলছুট হয়ে গেল।’’

অয়নের বাবা শক্তিপদবাবুও বললেন, ‘‘ছেলেকে বলেছিলাম পড়া চালিয়ে যেতে। কিন্তু ও ফর্ম পূরণ করল না। করোনার জন্য আমার দোকানটা দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। খুব কষ্টে দিন কেটেছে। ছেলেটা ব্যবসার কাজেই লেগে গেল।’’ শক্তিপদবাবু জানালেন, তাঁদের স্মার্টফোন রয়েছে। কিন্তু অনলাইনে পড়াশোনা সে ভাবে হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতেও পড়াশোনা ঠিক মতো করতে পারেনি অয়ন।

অয়ন জানায়, নবম শ্রেণির পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভাল ফল করায় স্কুল থেকে জ্যামিতি বক্স পেয়েছিল সে। পড়াশোনায় উৎসাহ যে ছিল না, এমনটা নয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিই সব ওলটপালট করে দিল। এক দিকে আর্থিক অনটন। সেই সঙ্গে তার বাবার শরীরও ভাল ছিল না। দোকানে বসার সময় বাড়াতে হল।

নিজে পরীক্ষায় শামিল না হলেও মাধ্যমিকের সার্বিক ফলাফলে নজর ছিল অয়নের। তার কথায়, ‘‘বন্ধুদের সবাইকে পাশ করতে দেখে আফশোস হচ্ছিল খুব। সেই সঙ্গে অবশ্য এটাও মনে হল, পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করার আনন্দ কোথায়?’’

নতুন করে পড়াশোনায় ফেরার আর ইচ্ছে নেই অয়নের। টাকা জমিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে মার্বেল পাথরের ব্যবসা করতে চায় সে। অয়নের কথায়, ‘‘কাজে নেমে গিয়েছি। পড়াশোনায় আর ফেরা হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education West Bengal Madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy