Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রতিবাদের মাসুল ১

তরুণীদের শ্লীলতা ‘বাঁচিয়ে’ আক্রান্ত

জনবহুল রাস্তার মাঝেই তিন তরুণীর হাত ধরে টানাটানি করছে তিন যুবক। চেষ্টা হচ্ছে ওড়না কেড়ে নেওয়ার। তরুণীরা বাধা দিতে যাওয়ায় শুরু হল ধস্তাধস্তি। সঙ্গে ধেয়ে এল অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তার পরেই তরুণীদের মারতে শুরু করল যুবকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৫৯
Share: Save:

জনবহুল রাস্তার মাঝেই তিন তরুণীর হাত ধরে টানাটানি করছে তিন যুবক। চেষ্টা হচ্ছে ওড়না কেড়ে নেওয়ার। তরুণীরা বাধা দিতে যাওয়ায় শুরু হল ধস্তাধস্তি। সঙ্গে ধেয়ে এল অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ। তার পরেই তরুণীদের মারতে শুরু করল যুবকেরা।

বুধবার ভরসন্ধ্যায় ব্যস্ত রাস্তার মধ্যে এমন ঘটতে দেখে চমকে উঠেছিলেন আশেপাশের দোকানদারেরা। কয়েক জন এগিয়েও গিয়েছিলেন। তবু প্রতিবাদ করার সাহস করেননি বেশি কেউ। কারণ তাঁরা জানেন, বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ওই যুবকেরা। একাই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন রাস্তার ধারের মোবাইল দোকানের মালিক গৌরীশঙ্কর চৌরাসিয়া। তাতে সাময়িক ভাবে কাজও হয়। মোটরবাইক নিয়ে তখনকার মতো চলে যায় যুবকেরা। কিন্তু অভিযোগ, রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে ওই দোকানদারের উপরেই হামলা চালায় ওই যুবকেরা। তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে খুনের চেষ্টাও করা হয়। তবে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন গৌরীশঙ্করবাবু।

ঘটনাটি হাওড়ার সালকিয়ার। ঠিক এক বছর আগে যে শহরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অরূপ ভাণ্ডারী নামে এক যুবক। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। মৃত যুবকের বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। ঘটনার সিআইডি তদন্ত হয়। ওই পরিবারের এক জনকে চাকরিও দেয় তৃণমূল সরকার। কিন্তু এত কিছুর পরেও হাওড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনও উন্নতি হয়নি, বুধবার সন্ধ্যার ঘটনা ফের তা বেআব্রু করে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই দিন? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল সালকিয়ার হনুমান বালিকা বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী। তখনই বাঁধাঘাটের দিক থেকে দু’টি মোটরবাইকে করে আসা তিন যুবক তাদের উদ্দেশে নানা অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকে। পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রীরা যখন জে এন মুখার্জি রোডে সাঁইবাবা মন্দিরের কাছে পৌঁছয়, ইভটিজারদের এক জন মোটরবাইক নিয়ে পড়ে যায়। তখন এক ছাত্রী ‘ঠিক হয়েছে’ বলে চেঁচিয়ে উঠলে মোটরবাইক আরোহী ওই যুবক ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে ছাত্রী ছেলেটিকে চড় মারে। আর এর পরেই ওই যুবকেরা মোটরবাইক থেকে নেমে তিন ছাত্রীকে হেনস্থা করতে শুরু করে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে বৃহস্পতিবার এক ছাত্রী বলে, ‘‘ওরা আমাদের বাঁধাঘাট থেকে বিরক্ত করতে শুরু করে। নানা খারাপ মন্তব্য করে। গালিগালাজ করায় আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এর পরেই ওরা প্রকাশ্যে আমাদের হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। ওড়নাও টেনে খুলে নেয়।’’

পুলিশ জানায়, এই ঘটনা দেখে প্রথমেই প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এসেছিলেন গৌরীশঙ্করবাবু। তিনি ওই যুবকদের পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখাতেই তারা মোটরবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পরে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে গৌরীশঙ্করবাবু যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তাঁকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে কয়েক জন দুষ্কৃতী। সেটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় ওই ব্যবসায়ী প্রাণে বেঁচে যান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে এ ভাবে তিন ছাত্রীকে হেনস্থা হতে দেখে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম। রাতে যে আমিই আক্রান্ত হব, ভাবতে পারিনি।’’

ঘটনার পরে রাতেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন গৌরীশঙ্করবাবু। পুলিশ রাতেই মিলন প্রসাদ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আক্রান্ত ছাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

কিন্তু প্রকাশ্যে এমন ঘটনা কি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকে প্রমাণ করে না?

হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলনে, ‘‘এই ধরনের ঘটনা রোখার জন্য পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। তাই বুধবার রাতের ঘটনার অভিযোগ পেয়েই পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। তবে তরুণীদের উত্যক্ত করার সঙ্গে বোমা মারার ঘটনার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অন্য বিষয়গুলি:

eveteasing salkia attempt to murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE