ভারতশিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় চিত্রশিল্প। বাংলার বহু শিল্পী অদ্যাবধি সেই ধারা পুষ্ট করে চলেছেন রেখায়, রঙে, ছন্দে, ভাবে। তবু অনালোকিত রয়ে গিয়েছেন এমন কেউ কেউ, যাঁদের সঙ্গে সাধারণ শিল্পরসিকের তত পরিচয় নেই। এই অপরিচয় মুছতে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের সংগ্রহশালা ও আর্ট গ্যালারি আয়োজন করে থাকে ধারাবাহিক প্রদর্শনী ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’। বিস্মৃতপ্রায় শিল্পীকে নতুন করে তুলে ধরা তো এক সামাজিক দায়বদ্ধতাও।
গত দু’দশক ধরেই ইনস্টিটিউটের সংগ্রহশালার বার্ষিক প্রদর্শনী শহরের শিল্পরসিকদের প্রার্থিত গন্তব্য। এ বছর তারই অঙ্গ, শিল্পী বরেন্দ্রনাথ নিয়োগীকে (১৯১৯-১৯৮১) নিবেদিত ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’। ১৯৩৫-৪০ সময়কালে কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে তাঁর শিল্পশিক্ষা, পরীক্ষার শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমি ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন দেহ-সংগঠন ও অন্তর্গঠন শিখতে; শেষ পরীক্ষায় প্রথম হন। দু’জন প্রথিতযশা শিল্পী ও শিল্পবেত্তার সঙ্গ ঋদ্ধ করেছে বরেন্দ্রনাথের শিল্পজীবনকে: স্বামী বিবেকানন্দের মেজো ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত (উপরে, মাঝের ছবি) এবং আচার্য নন্দলাল বসু। মহেন্দ্রনাথের দেহান্ত পর্যন্ত ছিল নিবিড় যোগাযোগ; শিল্প নিয়ে আলোচনা তো বটেই, মহেন্দ্রনাথের শিল্পপ্রসঙ্গ ও চিত্রকথা বই দু’টি বরেন্দ্রনাথের সম্পাদনায় পরে একত্রে প্রকাশিত হয়। পরে বরেন্দ্রনাথ যখন আর্ট কলেজের অধ্যাপক, তখন সঙ্কলন ও সম্পাদনা করেন শিল্প জিজ্ঞাসায় শিল্প-দীপঙ্কর নন্দলাল বইটি (প্রসঙ্গত, ‘শিল্প-দীপঙ্কর’ উপাধিটি নন্দলালকে দিয়েছিলেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত)। এই বইয়েই লিপিবদ্ধ আছে নন্দলাল বসুর দেখা, দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের ‘বার দিকের উত্তর দেওয়ালে দরজার দু-পাশে কাঠ-কয়লা আঁকা দুটি ছবি’র কথা: “বাঁদিকে একটি জাহাজ, ডানদিকে একটি আতাগাছ, আর তাতে টিয়াপাখি সব বসে।” আচার্য পরে স্মৃতি থেকে ছবি দু’টি আঁকেন, তাদের প্রতিলিপি ছাপা হয়েছিল বরেন্দ্রনাথের বইয়ে।
প্রদর্শনীতে দেখা যাবে বরেন্দ্রনাথের আঁকা বেশ কিছু ছবি, বিষয় প্রকৃতি, মানুষ (উপরের ছবি), জনপদ, জীবন। কিছু ছবিতে অধ্যাত্মভাবনা মূর্ত বাংলা স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের শিল্পিত কৃৎকৌশলে। আছে জলরং, তেলরং, ওয়াশ, ড্রাই প্যাস্টেল, পেন অ্যান্ড ইঙ্ক, মিশ্র মাধ্যমের কাজ; ছবি নির্মাণের উপাদান হিসাবে কাগজ, কার্ড, ক্যানভাস, সিল্ক ও মুগার কাপড়। এ ছাড়াও আছে বরেন্দ্রনাথকে লেখা নন্দলাল বসুর চিঠি, মহেন্দ্রনাথ দত্তের মৌখিক ভাষ্যনির্ভর বরেন্দ্রনাথ-লিখিত ডায়েরি, মহেন্দ্রনাথ ও ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের আলোকচিত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য। এই প্রদর্শ-সম্ভারের পিছনে রয়েছে শিল্প-আলোচক দেবদত্ত গুপ্ত ও বরেন্দ্রনাথের পরিবারের উদার সহযোগ। আগামী ২ মে বিকেল ৫টায় উদ্বোধন, থাকবেন শিল্পী গণেশ হালুই, নিরঞ্জন প্রধান-সহ বিশিষ্টজন; প্রদর্শনী চলবে মে মাসভর। মাঝের ছবিতে বরেন্দ্রনাথের আত্মপ্রতিকৃতি।
শতবর্ষে
আলোকে মোর চক্ষু দু’টি, মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি... গাইছিল অমল ও ভ্রমর। ছুটি, অরুন্ধতী দেবীর প্রথম পরিচালিত ছবি। বিমল করের খড়কুটো থেকে তৈরি এ ছবিতে আজও মুগ্ধ বাঙালি। অরুন্ধতী শুধু দক্ষ অভিনেত্রী নন, তাঁর পরিচালনা-নৈপুণ্যের প্রমাণ ছুটি, পদিপিসির বর্মিবাক্স, মেঘ ও রৌদ্র। ২৯ এপ্রিল জন্মদিন, শতবর্ষ পূর্ণ করবেন অরুন্ধতী, সে দিন বিকেল ৫টায় নন্দন-৩’এ আত্মজনদের স্মৃতিকথনের পর দেখানো হবে ছুটি। ২৮ এপ্রিল সেখানেই বিকেল সাড়ে ৪টেয় শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা, দেখানো হবে অরুন্ধতী অভিনীত ভগিনী নিবেদিতা। পরিবারের পক্ষে আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা শিল্প-ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা। অন্য দিকে ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান গ্যালারি চারুবাসনা-য়, থাকবেন ছুটি ছবির অভিনেত্রী রোমি চৌধুরী-সহ বিশিষ্টজন, দেখানো হবে বিচারক। সঙ্গে সুকুমার রায়ের ছবিতে তপন সিংহ-অরুন্ধতী দেবী, ক্ষুধিত পাষাণ-এর শুটিং-অবকাশে।
তিনশো বছরে
কী জানতে পারা যায়? কী করা উচিত? কী আশা করা যেতে পারে? মানুষ আসলে কী? এই চার মৌলিক প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করেছিলেন ইমানুয়েল কান্ট, ক্রিটিক অব পিয়োর রিজ়ন গ্রন্থে। শোনা যায়, জন্মস্থান কোয়নেসবার্গের দশ কিলোমিটারের বাইরে নাকি কোনও দিন পা রাখেননি তিনি। কিন্তু বিশ্বে তাঁর দর্শনের অধ্যয়ন-আলোচনা চলছে বিরতিহীন। কলকাতায় কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রণবকুমার সেন প্রমুখ দার্শনিক কান্ট-চর্চার জন্য সমাদৃত। সম্প্রতি কান্টের তিনশো বছরের জন্মদিবস (জন্ম ২২ এপ্রিল ১৭২৪) পালিত হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে। অরিন্দম চক্রবর্তী সুবীর রঞ্জন ভট্টাচার্য গোপালচন্দ্র খান প্রলয়ঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখ বললেন কান্টের দর্শনের নানা দিক নিয়ে, প্রকাশিত হল কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্যের কান্ট দর্শনের তাৎপর্য (প্রকাশক: সূত্রধর)।
রবীন্দ্র-বই
বৈশাখ মানে রবীন্দ্রনাথের মাস। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট পঁচিশে বৈশাখের আবহে একটি সুভাবিত প্রদর্শনী আয়োজন করে আসছে। রবীন্দ্রগ্রন্থের প্রদর্শনী— রবীন্দ্রনাথের বই এবং তাঁর সৃষ্টিবিশ্বকে নিয়ে লেখা বিশিষ্ট লেখকদের বই, এক ছাদের তলায়। শুরুটা ১৯৭৩ সালে সোমেন্দ্রনাথ বসুর পরিকল্পনায়, তখন প্রদর্শনী হত কলকাতা তথ্যকেন্দ্রে। ১৯৮১ সাল থেকে কালীঘাট পার্কে ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ঠিকানা ‘রবীন্দ্রচর্চাভবন’ হয়ে উঠেছে এই প্রদর্শনীর ঠিকানা, এ বছর শুরু হবে ১ মে। প্রায় পঞ্চাশটির কাছাকাছি প্রকাশনা অংশ নেবে প্রদর্শনীতে, অবশ্যই রয়েছে বই কেনার ব্যবস্থাও। চলবে ১২ মে পর্যন্ত, রোজ দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা। অতিমারির দু’টি বছর বাদ দিলে এ বছর এই প্রদর্শনী ও মেলার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ।
অনুধ্যান
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রয়াত সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী গীতানন্দের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে তাঁর কর্মজীবন ও অধ্যাত্মসাহিত্যে তাঁর অবদান নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা করলেন স্বামী বিদ্যানন্দ, স্বামী সুপর্ণানন্দ, প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল সেন-সহ বিশিষ্ট বক্তারা। রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কে প্রকাশিত হয় গীতানন্দজির স্মৃতিকথা-সম্বলিত চরণ সরোজে বইটি। তাঁর শিষ্যরা রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে একটি শয্যার যাবতীয় খরচ চালানোর উপযুক্ত অনুদান তুলে দিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে।
আজও প্রাসঙ্গিক
কৃষক নেতা ভুবন মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে পুলিশ ঘিরে ফেলল গ্রাম, সঙ্গে জোতদার চণ্ডী ঘোষ ও তার দলবল। ময়নার মা ভুবন মণ্ডলকে মেয়ের জামাই বলে পরিচয় দেয়, পুলিশের সন্দেহ হলেও শেষে চলে যায় নিশ্চিন্ত হয়ে। তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হারানের নাতজামাই’ গল্প, তা থেকেই অরুণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন হারানের নাতজামাই নাটক; পরিচালনা, গানের কথা ও সুরও ওঁরই। যাদবপুর রম্যানীর অপেরাধর্মী এই প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন মেঘনাদ ভট্টাচার্য চন্দন সেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় শ্যামল চক্রবর্তী সৌমিত্র বসু সৌমিত্র মিত্র প্রমুখ, দেখা যাবে আগামী ২ মে সন্ধে সাড়ে ৬টায় রবীন্দ্রসদনে। কৃষকের ন্যায্য পাওনার দাবি নিয়ে যে লড়াই শুরু হয়েছিল, তা চলছে আজও। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নাটক সমান প্রাসঙ্গিক।
পঞ্চাশ পেরিয়ে
গরমে পুড়লে কী হবে, মরুভূমি উট কেল্লা রাজস্থান নিয়ে বাঙালির উৎসাহে কোনও খামতি নেই, এ যেন অনেকটা শহরবাসীর আবদারেই সোনার কেল্লা ফের বড় পর্দায়। সত্যজিতের আসন্ন জন্মদিন উপলক্ষে ১ মে বিকেলে নন্দন-১’এ ছবিটি দেখানোর আয়োজন করেছে সত্যজিৎ রায় সোসাইটি। ১৯৭৪-এর শীতে মুক্তি পাওয়া ছবিটির পঞ্চাশ পূর্তি হতে চলল, শিল্পী কলাকুশলীদের মধ্যে এখনও যে ক’জন আছেন, অশোক মুখোপাধ্যায় (সাংবাদিক) কুশল চক্রবর্তী (মুকুল) শান্তনু বাগচী (অন্য মুকুল) সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় (তোপসে) আর সন্দীপ রায়, অর্ধশতক আগের স্মৃতিতে ফিরে যাবেন তাঁরা, ছবি-শুরুর আগের আড্ডায়। “শুটিং-এর দিনগুলো এখন কেমন স্বপ্নের মতো লাগে! বাবা কী অসম্ভব পরিশ্রমটাই না করেছিলেন!” লেখেননি শুধু সন্দীপ (সোনার কেল্লা/ চিত্রনাট্য ও অন্যান্য, প্রকা: বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ), ছবিও তুলে রেখেছেন (সঙ্গের স্থিরচিত্র)।
সপ্তরথী
২০১৭-র বৈশাখের প্রথম দিবসে যাত্রাশুরু দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস-এর। প্রতি বছর জন্মদিনের উদ্যাপন হয় প্রবীণ ও সমকালীন শিল্পীদের চিত্রপ্রদর্শনী দিয়ে। সপ্তম বর্ষের অন্যতর প্রদর্শনী— শুরু থেকে যাঁদের অভিভাবকত্বে এই পথ পরিক্রমা, তেমন সাত শিল্পীর সৃষ্টিসম্ভার: সোমনাথ হোর, রেবা হোর, সনৎ কর, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, গণেশ হালুই, লালুপ্রসাদ সাউ ও যোগেন চৌধুরী। প্রত্যক্ষ ভাবে সোমনাথ হোর (সঙ্গে তাঁর আঁকা ছবি) ও রেবা হোরকে না পেলেও তাঁদের শিল্পভাবনা দেবভাষাকে জুগিয়েছে রৌদ্রছায়া, বাকিরা দিয়েছেন সস্নেহ দিগ্দর্শন। বিভিন্ন মাধ্যমের ছবির প্রদর্শনী ‘সেভেন্থ সিম্ফনি’ শুরু হয়েছে ২০ এপ্রিল, চলবে ৪ মে পর্যন্ত, রবিবার বাদে রোজ ২টো-৮টা। নতুন করে সেজে উঠছে দেবভাষার ওয়েবসাইটও, প্রতি মাসে সেখানে নতুন ওয়েব-প্রদর্শনী। শুরু হল শিল্পী অতীন বসাকের সাম্প্রতিক চিত্রকৃতি নিয়ে, ‘টেম্পেরা অন এচিং’।
অমলিন
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯০-এর স্নাতক বন্ধুরা, এখন সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেশে বিদেশে। তাঁরাই তৈরি করেছেন বন্ধু-দল ‘অপ্রাসঙ্গিক’। নামে অমনটা হলেও কাজে নয়, বরং ব্যস্ত কর্মমুখরতার মধ্যেও সময় বার করে, জীবনানন্দে নানা কিছু করে চলেন ওঁরা। যেমন এ বার করেছেন নতুন বছরের বাংলা ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডার যখন, বাংলা সন-তারিখ তো থাকবেই, পূর্ণিমা, অমাবস্যা, নানা উৎসব, মনীষীদের জন্মদিন ইত্যাদিও। কিন্তু আসল আকর্ষণ পাতায় পাতায় হাতে আঁকা ছবি আর ছড়া: তেপান্তরের মাঠ, পক্ষীরাজ, নাগরদোলা, তালপাতার বাঁশি, শীতের দুপুর, কমলালেবু আর ক্রিকেট ম্যাচ, মনপবনের নাও, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, কালবৈশাখী নিয়ে। আছে পাখির গান, আলপনা, পলাশ-শিমুল, লাল মাটির পথ। ঘরেও রাখা গেল, দূরে থেকেও টুক করে ঘুরে আসা গেল ছেলেবেলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy