ছবিঘর: সিমা ‘আর্ট মেলা’ ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ
শিল্প আসুক কাছাকাছি!
সমাজকে তুলে ধরে শিল্প। সেই সমাজের সঙ্গেই আবার কখনও দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় সৃষ্টির। সমাজ আর শিল্পের মাঝের সেই ব্যবধান নিয়ন্ত্রণ করে শিল্পচর্চায় সাধারণের উৎসাহ বাড়াতে গত দশ বছর ধরে চলছে এক অভিনব প্রচেষ্টা। নাম ‘আর্ট মেলা’। শিল্প সেখানে সাধ্যের মধ্যে।
শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার সিমা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে এ বছরের ‘আর্ট মেলা’। চলবে কাল, রবিবার পর্যন্ত। সাধারণের আয়ত্তের মধ্যেই সেখানে রয়েছে যোগেন চৌধুরী, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, লালুপ্রসাদ সাউ, পরেশ মাইতি, রবীন মণ্ডল, বিমল কুণ্ডু, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নামীদের পেন্টিং, স্কেচ, ভাস্কর্য। সঙ্গে প্রতি বছরের মতো এ বারও প্রদর্শিত হচ্ছে একঝাঁক নতুন প্রতিভার শিল্পকলা। সেই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যেমন আছেন সদ্য আর্ট কলেজ পাশ, তেমনই আছেন নানা প্রান্তের লোকশিল্পীরা। পাশাপাশি, এ বছরের নতুন চমক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পলসির পড়ুয়াদের সৃষ্টি। সিমা গ্যালারির চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রতীতি বসু সরকার জানালেন, অন্তত সাধ্যের কারণে যেন শিল্পচর্চার সাধ আটকে না থাকে সমাজের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে, তারই জন্য এই ভাবনা। তাঁদের সেই আয়োজনকে প্রশ্রয় দিয়ে এগিয়ে এসেছেন শহরের বহু নামী শিল্পী। তিনি বলছিলেন, ‘‘দশ বছর ধরে শিল্পে উৎসাহী নানা শ্রেণির মানুষের উপস্থিতিই বলে দিয়েছে এই উদ্যোগ কতটা প্রয়োজনীয়।’’ উদ্যোক্তারা জানান, কম দামে শিল্প মানে খারাপ সৃষ্টি নয়, বরং অভিনব কিছু সৃষ্টিই এই মেলায় দেন নামী শিল্পীরাও। যেমন এই বছরের মেলার জন্য শিল্পী যোগেন চৌধুরী রেখেছেন নিজের বিশেষ কিছু স্কেচ, লাইন ড্রয়িং।
শিল্প, শিল্পী ও শিল্পে উৎসাহীদের এমন মুক্ত মেলামেশার প্রাঙ্গণই সমাজকে শিল্পমুখী করে তোলে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ শিল্পীরাও। যোগেন চৌধুরী যেমন বলছিলেন, ‘‘এক জন নামী শিল্পীর আঁকা আগে অনেকেই কেনার কথা ভাবতে পারতেন না। এমন মেলা হলে অন্তত সেই কাজগুলি সামনে থেকে দেখার কথা ভাবেন তাঁরা। একটি ছোট্ট স্কেচ কিনে দেওয়ালে টাঙালেও তো সেই পরিবারে আরও কয়েক জনের শিল্পে উৎসাহ বাড়ে। শিল্পচর্চার একটা আবহ তৈরি হয়।’’ শিল্পী বিমল কুণ্ডু আবার মনে করান, সকলের মধ্যেই একটি শিল্পীসত্তা রয়েছে। যে মহিলারা নিজের ঠাকুরঘরে আলপনা দেন, যত্নে সাজেন, শাড়িতে এমব্রয়ডারি করেন, তাঁদের অনেকেই নামী শিল্পীদের কাজ কেনা বা তাঁদের প্রদর্শনী দেখতে যাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন না অর্থনৈতিক কারণে তৈরি হয়ে যাওয়া দূরত্বের জেরে। এই মেলা সেই দূরত্ব ঘোচাচ্ছে। যা শিল্প ও সমাজ, দুইয়ের জন্যেই আশার আলো দেখায় বলে মত বিমলবাবুর।
সেই আলোই আরও বড় ভাবনার রসদ জোগাচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ইতিমধ্যেই এই মেলা দিল্লি গিয়ে শিল্পপ্রেমীদের প্রশংসা অর্জন করেছে। আগামীতে দেশের অন্য শহরেও পৌঁছনোর পরিকল্পনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy